উনপঞ্চাশ বছর তোমাদের এই কবি সৌখিন;
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের বয়োবৃদ্ধির সাথে সমপ্রবাহে লীন;
পেরিয়েছে সে মহান শেখ মুজিবের শাসনকাল শিশুকালে,
শুনেছে পড়েছে বহু গল্প জনতার সুখ দুঃখ বিষাদের;
পেরিয়েছে আবার আরেক শাসনকাল কিছুটা বাড়ন্ত শৈশবে
এক সৎ বীর মুক্তিযোদ্ধার, সে গল্পও যে জানা আছে তার;
তারপর পেরোলো সে, বিস্ময়মাখা উন্মাতাল এক রঙিন কিশোরবেলা,
দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের দমিত আবহে,
কৈশোরের অমলিন স্মৃতির আকাশে সে সব গল্পও লেখা আছে;

বয়স যখন হলো তার একুশ,
হঠাৎ খুলে দিলাে গণতান্ত্রিক দুয়ার
নুর হোসেন, জিরো পয়েন্ট থেকে ঐ সাতাশিতে,
আর ডাক্তার মিলন, ভার্সিটির নব্বইয়ের অঙ্গন থেকে, নিজেদের জীবনের বদলে;


এ যুবক এরপর তার যৌবন সুখী চোখে দেখে,
গণতন্ত্রের প্রধান দুটি দলের একটির শাসনকালের শুরু;
দেখলো দেশের গণতান্ত্রিক শাসন অভিযাত্রার নতুন দিগন্তের উন্মোচন,
স্বৈরাচার হটিয়ে;


অবশেষে দু'টি গণতান্ত্রিক দলের শাসনে উনিশ বছর পেরিয়ে এসে;
আজ যে তোমাদের কবিতার আলয়ে, ছন্দরীতিহীন এক অকবি দুর্মূখ!


প্রতিটি শাসন আমল ছিলো কি নিঁখুত!
কোনো শাসকের হয়নি কোনো ভুল!
কোন্ শাসন আমল ফুটিয়েছিল শতভাগ সফলতার ফুল!
কোন্ শাসন আমলে জনগণ হয়নি বিক্ষুব্দ প্রতিবাদ মুখর;
হয়নি শাসক ও জনগণ দু'জনে দু'জনের চক্ষুশূল!
কোন্ শাসক তার গায়ে মাখেনি স্বৈরাচারী অপবাদ,
কোন্ শাসক তুলে নেয়নি দন্ড আধিপত্যবাদ;


পেরিয়েছি উনপঞ্চাশটি বছর বিভিন্ন শাসকের কালাকাল;
তীব্র রোষে ভরিয়েছি চিৎকারে বাংলার জমিন শাসকের শাসন দুরাচারে;
লিখেছি কবিতা শত শত মন্দ কিংবা ভালো,
তবু একবারও, একবারও লিখিনি স্বজাত শাসনের অসন্তোষে,
"এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি লাভ হলো"!


বেঁচে রয়েছি আজন্মকাল রাজনীতির কলুষে জঞ্জালে;
উনপঞ্চাশ বছর ধরে, দেখে চলেছি অশ্লীল প্রবাহ রাজনৈতিক বৈরীর;
তবু একবারও বাংলাদেশের কিংবদন্তীর, স্বাধীনতাকে অশ্রদ্ধা করে নির্মাণ করিনি,  
- "দেশদ্রোহী শব্দ শরীর" ।


(২১.১২.২০২০)


(শত সহস্র লক্ষ কোটি অনন্ত অগুণিত বিদ্রোহ শব্দ শরীর লেখা হোক, শাসকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে! তবে সে বিদ্রোহ লিখনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতো অমিয় প্রাপ্তিকে কালিমা লেপন "কি লাভ হলো দেশের স্বাধীনতা পেয়ে" - এই নিকৃষ্ট অনুভব, এই হীন প্রশ্নের তীর ছোঁড়া সঠিক নয়! শুধুমাত্র বাঙালির নিজের একটি স্বদেশ পৃথিবীতে, এই প্রাপ্তি ঐশ্বর্যের কোনো তুলনা নেই! "স্বাধীনতা মানে" "স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ও কারণ" শুধুমাত্র একটি - বিজাতীয় হানাদার অধীনতা, দাসত্ব থেকে বাঙালি মুক্তি অর্জন করে, বাঙালির জন্য পৃথিবীতে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন করা। ব্যস! আর কোনো দ্বিতীয় কারণ বা উদ্দেশ্য নেই, নেই, নেই! দেশের শাসনের অসন্তোষে, যারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানচিত্র, পতাকা আর স্বাধীনতাকে অসম্মান, অশ্রদ্ধা, ভুলুন্ঠিত করে, বলতে চায় - "স্বাধীন হয়ে কি লাভ হলো", যার একমাত্র অর্থ দাড়ায় - "হানাদার দাসত্ব অধীনতা শ্রেয় ছিল" এবং যারা "সহমত পোষণ" করে - তাদের জন্য আমার করুণা এবং নীরবতা। সবাই নিজস্ব মূল্যবোধ নীতি বজায় রাখুন। দুই তরীতে অবস্থান বাঞ্ছনীয় নয়। ধন্যবাদ।)