এ রাজ্যে আজ মানবতা পুড়ছে;
আজ আর সেই মন নেই
তোমাকে নিয়ে গড়বো রহস্য রাত,
আরব্য রজনী, গল্পের খাট;
এমনকি পাশে রাখা হত্যার ছুরিটি,
হতে চাইছে কোমল একটি হাত;
ছুঁয়ে দিতে তোমার শঙ্খের মতো
সাদা চিবুক;
যেখানে তিরতির করে,
নীল দুঃখরা দিচ্ছে পাড়ি;
নীল দুঃখেরই মতো সমুদ্রের 'পরে
ফুটে থাকা লাল সূর্যটার বুকে
ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে যেতে;


এখানে আজ মানবতা পুড়ছে;
আজ এই মনটি আগুনে পোড়া,
সংখ্যালঘুদের নীড়ের মতো দগ্ধ হয়ে গেছে;
শেহেরজাদী তুমি ভাবতে পারো কি?
কত অভিমানে ওদের চোখের জল
আজ ঝরে পড়ছে,
শোকার্ত কালো ঘনমেঘ থেকে বৃষ্টির মতো
তাদের আপন মাতৃভূমির জমিনে;
যে মাতৃভূমির মুক্তির জন্য,
ওরাও গিয়েছিল যুদ্ধে !
রক্তরাঙা একিরূপ দেশপ্রেমে,
হয়েছিল দেশ জননীর মুক্তির সৈনিক;
সকল ধর্মের ভাই ও বন্ধুর সাথে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওরাও
হাসিমুখে মৃত্যুকে করেছিল বরণ;


অথচ আজ এখন, এই জন্মভূমি যেন,
ওদের জন্য এক বিষাক্ত অচিনপুরি,
ধর্মান্ধ দানবের দেশ;
আত্মার মাঝে প্রচন্ড আঘাতের বিস্ময়ে,
মুছে গেছে যেন ওদের হৃদয় থেকে
বেঁচে থাকার সুবর্ণ রেশ;  
চোখের পাথরে অনঢ় দাঁড়িয়ে আছে,
প্রশ্নহীন কষ্টের ভিড়; ওদের অস্তিত্ব,
শেকরচ্যুত প্রাচীন বৃক্ষের মতো
মৃতপ্রায় নিরাশ্রয়বোধে;
ওদের আগুনে পোড়া নীড়,
বিভৎস পোড়া লাশের মতো পড়ে আছে,
মাতৃভূমির বুকে; ওরা জানে,
দেশজননীর মাটি কাঁদছে ওদের জন্যে,
এবং এও জানে, জননী যে আজ
অসহায় শৃঙ্খলিত, ফের সেই একাত্তরের
শত্রু শয়তান ধর্মান্ধ বংশধরের হাতে;


এসো আজ বরং প্রার্থনা করি;
ধর্মান্ধের পাথর হৃদয়ে ফুটুক মানবতার ফুল;
বুঝতে পারুক, তাদের ধর্ম বিদ্বেষের ভুল
অযাচিত একটি পথে হেঁটে, ডেকে আনছে
অনিবার্য আরো একটি রক্তাক্ত সমর;
যা থেকে ওরা পাবে না রেহাই,
যেমন পায়নি
ঐ পাকি হারামী হানাদারদের দল;


মানবতা হোক
প্রতিরোধী এক অমোঘ অলঙ্ঘ্য দেয়াল,
ঠেকিয়ে দিতে ধর্মান্ধের বিকৃত ধর্ম বোধ,
আর দিতে সংখ্যালঘুদের নিজের দেশে,
মাতৃকোলের মতো আশ্রয়
                       নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ;


এসো প্রার্থনা করি, তুলে ধরি
আমাদের নিঃস্ব ব্যথাতুর মুখ;
যেন বিপন্ন না হয়ে উঠুক,
এ রাজ্যের ধর্ম সহিষ্ণু কৃষ্টির অনন্য রূপ।


(19.10.2021)