ভাগ্যিস কখনো কবিতা পড়িস নি,
তুই কবিতা পড়লে,
তোর ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ঝরলে,
তোর গজাতো রূপালী পাখনা;
নিরালা দুপুরে খাটের বাজু ধরে,
তুই হয়ে উঠতি উদাসীনি রাজলক্ষ্মী কাদম্বরী;


ভাগ্যিস তুই কবিতা পড়িস নি,
কবিতা পড়লে,
ঐ রাঙা গোধূলির রঙ দেখতে দেখতে
তোরা গালেও ফুটে যেতো সােনারঙ লজ্জা;
কারো অবুঝ অবহেলা
তোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতো নিশিদিন;
তোর হৃদয়ে বাঁধাতি অচেনা অসুখ,
রাতের ঘুম পালাতো সব মেঘেদের সাথে;


ভাগ্যিস কখনো কবিতা পড়িস নি,
তুই কবিতা পড়লে,
তোর হাবভাব দেখে পাড়ার কুটনিগুলো বলতো,
তোকে ভুতে ধরেছে,
"তাড়াতাড়ি পার কর ওকে শ্বশুর বাড়ি";


ভাগ্যিস কবিতা পড়িস নি,
তাই তো তুই অগোছালো নিবিড় অরণ্য,
চিত্রল হরিণীর মতো ছুটে চলিস,
কোকিলের ডাকে চমকে উঠিস সরল খুশিতে,
ফুটে থাকিস জলপদ্মের মতো নির্বিকার স্নিগ্ধ সারাদিন,
তাের খোলা চুলে ঝিকমিক করে খেলা করে
রোদেলা দুপুর, রূপালি রজনী;
মেঘ বৃষ্টিরা দিতে পারে না তোর হৃদয়ে
অচিন ব্যথাদের কথাকলি;


ভালোবাসা বলতে এখনো বুঝিস,
আম চালতার আচার,
খরগোশের তুলতুলে বুকের নরম ওম,
বাহারি রঙিন চুরি, ধানী সবুজ টিপ
টিয়া রঙের শাড়ি কাঁচুলি;


কবিতা পড়িস নি,
তাই তুই কখনো দেখিসও নি,
তোকে দেখলে, কারো চোখের স্বচ্ছ জলরঙে
ভাসে শুদ্ধ অনুরাগের জলকেলি;
কবিতা পড়িস নি, তাই কখনো বুঝিসও নি,
আমি তোকে পরম আদরে প্রতিদিন কবিতা করে তুলি ।


(১২.০৬.২০২১)