মনে পড়ে বেদনায় মূর্ত হয়ে,
দীপ্ত নির্মল বেলাভূমিতে আমার বিস্ময়মাখা কিশোরকাল;
দেখেছি নিরো; তবু পকেটে তার গোলাপ লাল,
ফুল গুঁজে কবিতা পড়ে প্রেমিকাদের তরে,
এবং,
রাজব্যবস্থা আর অজ্ঞানতার অদ্রবণীয় আত্মীয়তার
জোরবন্ধন করে শাসনের স্থায়িত্ব গড়ে;


তবু ভাবেনি কিছু আমার কিশোরকাল,
রাজনীতি কি, কিইবা স্বৈরাচারী, অথবা ধর্মান্ধ খোল করতাল;
কেনো ভাববে বলো? তার তো ছিল না দায়িত্ব অথবা সময়,
সময়টা যে ছিল কিশোরের জন্য একান্ত, উদগ্রীব অস্থির অলৌকিক এক উপহার;
সে যে অকস্মাৎ হতচকিত অনুভবে চিনতে শুরু করেছে,
কিশোরীর অপরূপ উপস্থিতি তার বিশ্বে আর
কবিতায় খুঁজে পেয়ে আরো বিস্মিত সে কিশোর, কারা যেনো লিখে গেছে
মহা জ্যোতিষীর মতো, নিঁখুত সব বেদনার্ত আর্তি রহস্যময়ী রমণীদের ঘিরে;
এত সুনীল বিহ্বলতার মাঝেও কোনো পাপ তাকে ছুঁয়ে দেয়নি,
একাঙ্কিকা নাটকের একক চরিত্রের মতো, রুদ্ধ বেদনার কাঁটা
তুলেছে অকারণ দুঃখস্নাত হৃদয় হতে, একে একে এবং একা একা;


সেই সময়টাই বরঞ্চ ছিল যেনো আরো ভালো
আজকের মনোবৈকল্য প্রলাপে ভরা উগ্রমস্তিষ্ক জঞ্জালদের সময়ভূমির চেয়ে,
বিষ পিঁপড়ে, ছারপোকারা তখন জীবন করেনি অন্ধকার,
ঝুরঝুরে করে দেয়নি মাতৃভূমির পবিত্র জমিন বিজাতীয় মূর্খ তত্ত্বে
শাড়িতে জড়ানো অপূর্ব বাঙালি রমণী ছিল বাঙালির শুদ্ধ সংস্কৃতি
শুভ্র সাদা পাখিদের পালকের মতো মুক্ত জীবনে
শহরের প্রতিটি গাছের পাতা ছিল আরো ঘন সবুজে নিবিড়
টুটি চেপে ধরেনি তখনো নির্মল নিঃশ্বাসের ওপর
কোন বিজাতীয় অন্ধ বিশ্বাস আর ঘন কালো আচ্ছাদন;


আজ ভাবি, সেই কিশোরকালেই
এইসব অন্ধকার জীবের জন্মের শুরু, এক মহাভুলে সৃষ্টি হয়েছিল
অশুভ ভীত, রাজব্যবস্থা আর অজ্ঞানতার দ্রবণে
আদিষ্ট চারটি যাত্রা ধুম্রজাল স্বপ্নে মিনার থেকে মিনারে প্রতি ত্রিশটি দিনে;
আজ ভাবি, আমি যদি হতাম সুকান্ত আমার কিশোরকালে,
তার বিস্ময়কর তরুণ চৈতন্যের অগ্নিবাণ
শব্দে শব্দে তেড়ে ফুঁড়ে বিনাশ করে দিতাম ষড়যন্ত্র;
তাহলে আজ কষ্ট হতো না, দেখতে হতো না উগ্রবাদী ধর্মান্ধ
আমার কিশোরকালের পবিত্র বেলাভূমির বর্তমান চরাচরে,
স্পর্ধায় আস্ফালন করে।


তবু এখনো স্বস্তি দেয় এক রাজবিদূষী, তার প্রান্তবেলায় প্রবল
দৃঢ়তায়, আমার কিশোরকালের অবাক আকাশ, এখনো রাখে
আধাঁরমুক্ত, মুগ্ধকর রাজেশ্বরী আশ্চর্যতায়।


এরপর আর যে ক’টা দিন আছে সে, ততদিন
হয়তো বুকে জাগাবে উষ্ণরক্ত, আদিগন্ত কবিতার মতো,
দীপ্ত নির্মল বেলাভূমিতে আমার বিস্ময়মাখা কিশোরকাল;


তারপর কিশোরের মৃত্যু হবে, প্রাজ্ঞবিদূষী যেদিন চলে যাবে,
চিরঞ্জ রাঙা এক শেষ পথে।


(১৬.০৭.২০২০)