গত পর্ব গুলোতে বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহত্যের সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে । আজ বাংলা সাহিত্যের তিনটি যুগের বিস্তারিত আলোচনা করবো।  
ক) প্রাচীন যুগ ( ৮০০খ্রিঃ মতান্তরে ৯০০খ্রিঃ  থেকে ১২০০খ্রিঃ পর্যন্ত) ডঃ মু শহীদুল্লার মতে ৬৫০ খ্রিঃ থেকে বাংলা সাহিত্যের সূচনা হয়েছে ।  
খ) মধ্য যুগ ( ১২০১ খ্রিঃ থেকে ১৮০০খ্রিঃ)
গ) আধুনিক যুগ ( ১৮০০ খ্রিঃ থেকে বর্তমান কাল )


আদিযুগ বা প্রাচীন যুগঃ  বাংলা সাহিত্যের প্রচীন যুগ বলতে আমরা সাধারণত বাংলা ভাষা আবিষ্কারের পর যে সাহিত্য রচনা হয়েছিল সেই যুগকে বলে থাকি। খ্রিঃ ৬৫০ মতান্তরে ৮০০/৯০০ থেকে ১২০০ খ্রিঃ’র মধ্যবর্তি সময়টা কেই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ বলা হয়। বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের পূর্বে বাংলায়সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অবহট্‌ঠ ভাষায় সাহিত্য রচনার রীতি প্রচলিত ছিল। এই সাহিত্যের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের আদি অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাংলা ভাষার উম্মেষ ঘটার পর প্রথম দিকে বাংলায় আর্য ব্রাহ্মণ্য সাংস্কৃতি ও অনার্য সাংস্কৃতির মেল্বন্ধন ঘটেনি। জ্ঞানতাপস ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ মতে বাংলা সাহিত্যের সূচনা হয় ৬৫০ খ্রিঃ । আমরা অনেকেই জানি চর্যাপদ বাংলা সাহত্যের প্রচীন তম নিদর্শন , ডঃ মুঃ শহীদুল্লার তার বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত বইটিতে লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের সূচনা ঘটে ৬৫০ খ্রিঃ নাথ-গীতি দিয়ে যার উদ্ভব হয় বৌদ্ধযুগে কিন্তু আমরা তা পাই নি। আমরা বৌদ্ধ যুগে মাত্র একটি রচনা পেয়েছি আর সেটা হল চর্যাপদ। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপাল ভ্রমণকালে চর্যাচর্যবিনিশ্চয়  নামক একটি পুঁথি নেপাল রাজদরবারের অভিলিপিশালায় আবিষ্কার করেন। আবিষ্কৃত পুঁথিটিতে ৫০টি চর্যায় মোট ২৪ জন সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন: লুই,কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ,শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। এঁদের মধ্যে লাড়ীডোম্বীর পদটি পাওয়া যায়নি। ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক পদগুলি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীআবিষ্কৃত পুঁথিতে না থাকলেও ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী আবিষ্কৃত তিব্বতি অনুবাদে এগুলির রচয়িতার নাম উল্লিখিত হয়েছে যথাক্রমে কাহ্ন, তান্তী পা ও কুক্কুরী। এই নামগুলির অধিকাংশই তাঁদের ছদ্মনাম এবং ভনিতার শেষে তাঁরা নামের সঙ্গে 'পা' (<পদ) শব্দটি সম্ভ্রমবাচক অর্থে ব্যবহার করতেন।
সাধারণভাবে লুইপাদকেই আদি সিদ্ধাচার্য মনে করা হয়। তাঞ্জর বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ছিলেন বাঙালি। তিনি মগধের বাসিন্দা ছিলেন ও রাঢ় ও ময়ূরভঞ্জে আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। চর্যার টীকায় তাঁর অন্য নাম লূয়ীপাদ বা লূয়ীচরণ। ১ ও ২৯ সংখ্যক পদদুটি তাঁর রচিত।


চলবে......।

তথ্যসূত্রঃ বাংলা পিডিয়া, উইকিপিডিয়া,
বাঙলা ভাষার ইতিবৃত্ত,  ডঃ মুহাম্মাদ শহীদুল্লা
বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস,  ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়