কালের স্রোতে বহমান গৌরবদীপ্ত মৃন্ময় কোমল ঔদার্য,
মমতার অনাবিল বর্ষণে মুগ্ধতা ঝরে,
ফসলের আঘ্রান, বৃক্ষবিথীর অবিরত বিস্তার,
নিস্তব্ধ প্রজাপতির বর্ণিল পেখমে ছড়ানো সৌরভে
শোভিত এদেশ--আমার প্রাণের বাংলাদেশ।
পাখির প্রাঞ্জল কাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে স্বপ্নে বিভোর আমার।
পড়ন্ত বিকেলের স্বর্ণালী আলোয়
রাঙা নদীর জলের মায়া নিয়ে যায় আমায়
স্বপ্নলোকের রূপকথার দেশে,
শিশুর  অনাবিল আনন্দ বুকের ভেতর
জাগায় মমতার রাগিনী
-- আমি ভালোবাসি আমার দৃষ্টির সীমায়
সহজ সরল প্রাণচঞ্চল  মানুষের মিলন মেলা
-- আমি বাংলাদেশের মেয়ে।    


হাজার বছর ধরে সুফলা মৃত্তিকার
অবারিত উদার ফসলের দেশে
সাম্যের গানে গানে কেটেছে প্রহর।
ভুঁইফোড় ত্রাস, বখাটে, অজ্ঞ, মূর্খ
পেশি আর কূটকচালে ভেঙে দেয়
প্রাণের বাঁধনে গড়া নিরেট সংহতি,    
নারীর অনাবিল মন ছিন্ন ভিন্ন করে,
সম্ভ্রম করে কলুষিত,
এসিডের তপ্ত স্পর্শে ঝলসে দেয়
নিষ্পাপ অবয়ব দানবীয় নিষ্ঠুরতায়।
নিবেদিতপ্রাণ নেতার পরিচ্ছেদ পড়ে বা
সানগ্লাসে চোখ ঢেকে ছিচকে নেতা
দোর্দণ্ড প্রতাপে দুঃসহ বিষবাষ্প ছড়ায়    
শান্তিতে নিমগ্ন জনতার বিস্তারে।


নির্মল মমতার হাত আমার
আলোর বর্তিকাধারী ফ্লোরেন্সের মতো  
আলোকিত করে অন্ধকারে আকীর্ন অচলায়তন,
আমার নিমগ্ন কর্মের অবিরত প্রবাহে
গড়ে উঠে উন্নয়নের সৌধ-সম্ভার,
তাদের লাউড স্পিকারে প্রকম্পিত হয় উন্নয়নের ফিরিস্তি,
আমি তবু  নিরব সহিষ্ণু ম্রিয়মান
-- আমি বাংলাদেশের মেয়ে।


মায়ের ঘরকান্নার উপকরণ, ভাইয়ের বায়না,  
বাবার ঔষধ জপতে, জপতে
কর্মক্ষেত্র  বা পাঠনিকেতনের পথে
চলতে চলতে শুনি শিস, টিপ্পনী, ফিসফাস
--- যেন আফ্রিকার গহীন অরণ্যচারী হিংস্র  জন্তুর নখর
আর তীক্ষ্ন দাঁতে আকীর্ন  বন্য গুহায় অভিযাত্রী আমি,
বর্বর জাতির অধম মানুষের মতো আদিম উল্লাসে
পোহায় তাদের দুর্লভ যৌবন,
প্রগতির চক্রযান টেনে নিয়ে যায়  তারা
পিছনে অচল অন্ধকারে,
পূর্বের কর্মের উদ্দীপনা, পশ্চিমের
রঙধনু রং আলোর মিছিলে
তারা কাপুরুষের মতো অবলার প্রতিদ্বন্দ্বী,
আলোকিত পৃথিবীর বিস্তারে
নিরেট অন্ধকারের বাসিন্দা ,
কলুর বলদের মতো ঘুরছে তারা  
ধূর্তের  ছকবাঁধা চক্রে।
এই অনন্ত মধ্যাহ্ন রাতের কৃষ্ণ প্রহর বেয়ে
চলছি আমি অবিরাম অবিচল
--- আমি বাংলাদেশের মেয়ে।


আমার প্রজ্জ্বলিত শিখায় আলোকিত হয় সংসার, জনারণ্য,
আবার আমার দীপশিখা হতে
দাবানল হয়ে জ্বালিয়ে দিতে পারি
ষোড়শ যুগের  বৃটিশ উপনিবেশ,
একাত্তরে মায়ের সম্ভ্রম, পিতার রক্তের প্রতিশোধে
কবর বানাতে পারি পৃথিবীর পান্ডব লালিত পাক হায়নাদের,  
অগ্নিবীণার উত্তাল সুরের মূর্ছনায়
পশুত্বের কদর্যতাকে পদদলিত করে
গড়তে পারি মানবতার আরাধ্য স্বস্তির বিস্তার,
দানবের শোনিতের আলপনায় আঁকতে পারি
শান্তির দীর্ঘ পোট্রেট,
আমি ঝড় হয়ে লন্ডভন্ড করে দিতে পারি পাপের প্রাসাদ,
আমি ভূমিকম্প হয়ে চুরমার করে দিতে পারি
হাজার বছরের অচলায়তের জীর্ণ নগরী,
দুর্জয় আমি বখাটে দুর্জনের শোনিতে
স্নাত করাতে পারি অস্থির উৎকন্ঠিত  মৃত্তিকাকে।
আমি হৃদয়ের অলিন্দে পুজা করি  সু্ন্দরের উপাস্যকে,
আমি জাগাতেও পারি চেতনার রঙ  
কঠিন কঠোর হৃদয়ের বিস্তারে
---- আমি বাংলাদেশের মেয়ে।
              ------------------