আমাকে নিয়ে তোর স্বপ্নগুলো নিঃসীম আকাশে
চিলের ক্লান্তহীন ডানার মতো উড্ডীন অবিরাম।
সুরম্য নগরীর বিশাল বিদ্যাপীঠে পড়ছি।
তোর মনে হয়, পৃথিবীর তাবৎ ঐশ্বর্য অবারিত,
বাবার ঘর্মাশ্রু উবে যাবে দূর নক্ষত্রালোকে,
মায়ের টানাপোড়েন ছড়িয়ে পড়বে সমুদ্রে
বিধ্বস্ত কক্ষচ্যুত উপগ্রহের মতো শতছিন্ন হয়ে।        
বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি আধুনিকার নিক্কণ  ধ্বনি
একাকার হয়ে অনুরণিত হবে জীবনের বিস্তার।


চোখে কাজল এঁকে, খোঁপায় বেলির মালার
সুগন্ধ বিলাসে প্রসন্ন বিচিন্তায় প্রহর পোহায় তোর।
তোর ভাবনাগুলি সভ্য জাতির আরাধ্য প্রগতির সোপান।
আর
এখানে দুর্জনের তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত মানুষের নন্দিত ঈপ্সা,
অনিয়মকে নিয়ম, অধর্মকে ধর্ম করে নাচে নটবর।
বাবার যত্ন করে রাখা মলাটহীন আদি বাল্যশিক্ষার
পরিশীলিত জীবনাচরণের চিরন্তন রূপরেখা
এখানে অচল পয়সার মতো তাচ্ছিল্যের গ্লানিতে ম্রিয়মাণ,
তারুণ্যের দীপ্তমান ঐশ্বর্য নিষ্ক্রিয় নির্জনে,
কর্মের প্রাপ্তি বিঘ্নিত নারীর মতো অসহায়ত্বের বাসিন্দা।
ভাগ্যের মোড়ক গায়ে ক্যাসিনো, দুর্নীতি, দুরাচার
খুঁড়ে খুঁড়ে খায় কর্মময় মানুষের প্রগতির  স্বপ্নের ফসল।
তরুণের উত্তরণের মসৃণ সিঁড়ি এখন নেতার লেজুড় হয়ে
জোড়া খুন, টেন্ডার আর চাঁদাবাজি, টর্চার সেল।
আমার উপরে উঠার এই অপরিমেয় পাশবিক সামর্থ্য
ক্ষীণ করে দেয় বাবার রাখা আদি বাল্যশিক্ষার পংক্তিমালা।  


একদিন দেখবি, বাবা-মা স্বপ্নের খেয়া নৌকা বেয়ে
আশায় আশায় চলে গেলো মহাসিন্ধুর ওপারে।
আমি সমাবর্তনের পোশাক পড়া ছবি নিয়ে
শূন্য হাতে ফিরে এলাম বাবার যত্ন করে রাখা
মলাটহীন আদি বাল্যশিক্ষার পরিশীলিত
জীবনাচরণের মুখস্থ  পংক্তিমালা উচ্চারণে।  


আমার কি দোষ বল, ছোট?
আমি স্বদেশ প্রেমে উন্মত্ত সৈনিকের মতো
ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারি অসুন্দরের দুর্জয় দেহ,
আমি জাগাতে পারি সবুজের নবীন প্রাঞ্জল কিশলয়
শকুনের নখরে আবৃত আত্মকেন্দ্রিক বন্ধ্যা মৃত্তিকায়,  
আমি বাজাতে পারি সুরেলা সুরের বাঁশি আর অগ্নিবীণা,
আমি এনে দিতে পারি হিরন্ময় ঔজ্জ্বল্য এই কৃষ্ণ অচলায়তে।
                  -----------------