মনে পড়ে স্বর্ণালী আলোয় চিলের ডানার মতো
শৈশবের স্বপ্নগুলি পেখম ছড়াতো নিঃসীমে।
বাবার হাত ধরে আকুল চঞ্চল পায়ে ছুটতাম মেলায়,
বৈশাখের রৌদ্র তাপে বরফ কুচির শরবত,
ছানার গরম মিষ্টির সৌরভ,
বাঁশি আর মাউথ অর্গানে সুর তোলে ঘুরাঘুরি,
রঙিন চশমা চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
আরেক পৃথিবী দেখার আনন্দ,  
সার্কাস দেখে বীর হওয়ার স্বপ্ন বুনা,
পথে চলতে চলতে কথার পাঁচালি,
প্রশ্নের পিঠে প্রশ্নে জর্জরিত বাবা।
না চাইতেই সব কিছু এনে দেওয়া
কল্পতরু বাবা এক স্বপ্নের যাদুর চেরাগ।  


মনে পড়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পড়ানো জিঞ্জির
ছিঁড়লো তরুণদল দিন বদলের রক্তের উৎসবে।
বুভুক্ষু শকুন, সুখের পায়রা, প্রিয়ভাষী ধূর্ত লুটে
শহীদের শোণিত আর মানুষের ঘর্মাশ্রুতে ভেজা
স্বাধীনতার আরাধ্য ফসল সম্ভার।
কৃষ্ণ মেঘমালায় আচ্ছন্ন হয় বাবার মুখ,
টানাপোড়েনের দুর্বার নদী বয়ে যায় আঙিনায়,
বাবা যেন দীর্ঘশ্বাস বুকে নিশ্চুপ পাথর মানব।
স্বপ্নের জোছনায় জাগে অমাবস্যার স্পন্দন,
সাথীর পথের সমান্তরাল বাবার পথ হয় বন্ধুর,  
না পাওয়ার কণ্টক পলে পলে দংশে অলিন্দ।


মনে পড়ে অনটনের বিরুদ্ধ বাতাসে বাবা
ক্ষুধাকে নির্বোধ শিশুর মতো ঘুম পাড়িয়ে
পুরোনো জুতো, সস্তা কাপড়ে ফিরতো বিমর্ষ গোধূলিতে
আমাদের বায়নার উপঢৌকন হাতে।
যেন আনন্দেরাগে মুখরিত কলকল  
মূর্ছনার স্ফটিক নির্ঝর আমাদের গৃহখানি।
কোনদিন জানতেও পারিনি
বাবার বুকে বয়েছিল অবিরত বেদনার নীল নদ।


মধ্যাহ্নের বিরামহীন উড্ডীন গাংচিল সময়ে
চকলেটের আঘ্রাণে, পুরোনো চশমাটা পেলে
আজ বাবাকে বড় বেশী মনে পড়ে যায়,
তুমি আমায় দিয়েছো তৃতীয় নয়ন।
ক্ষতি কি নাই পরিপাটি বেশ, প্রাসাদহীন আবাস।
তোমার দৃষ্টিতে দেখি মানুষের অতলান্ত রূপ,
ত্রস্ত হই পাপের মায়াবী ছায়ায়,
তফাৎ বাসিন্দা অসুন্দরের কৃষ্ণ কায়া।    
নিশ্চুপ ঘর্মাক্ত কৃষকের মতো জাগাতে চাই
সবুজের কিশলয়  বৈরী বন্ধ্যা মৃত্তিকায,
নির্জন হয়ে আসা মানবতার স্নিগ্ধ বেদীতে
নিমগ্ন আরতিতে পোহাবো প্রহর,
আগরের সৌরভে আকীর্ণ করবো পৃথিবীর বাতায়ন।
হৃদয়ের ভালোবাসায় নতজানু একাগ্র নিবেদনে
বাবা, আসো হাজার জনমে কষ্টের মানুষ বেশে,
জীবন রাঙাতে  স্নাত করো বারংবার নিষ্পাপ ঝর্ণাধারায়।
                   -----------------