একাত্তরে পোহালো প্রহর শকুনের উল্লাসে,
বাংলায় ফুটেছিল জলরঙে রাঙা লাল রক্তকরবী,
কিষাণ, শ্রমিক, ছাত্র, মজুর, চাকুরে---
হত্যা, সম্ভ্রমহানী,পরাধীনতার আঘ্রাণে
দ্রোহী হয়ে ভাইয়ের মতো যুদ্ধে গেলো,
শব্ধযোদ্ধা বাবার নীরব কৃষ্ণ পঙক্তিমালা
দুঃসহ তীর হয়ে বিঁধেছিলো শাসকের মর্মমূলে,
দোসরদের ঈঙ্গিতে উর্দি পড়া হানাদারের
বুলেটে ঝাঁঝরা হলো তাই বাবার বুকের পাঁজর,
পাষাণ মূর্তির মতো নিষ্পলক দেখলো নিঃসহায় কিশোর অনন্ত ও অনুজা।
মা বৈধব্যের পাথর বেলায় সন্তানের
আশ্রয়ে ছুটলেন স্বজনের দ্বারে দ্বারে,
--- জুটলোনা ঠাঁই নিরেট এই পাথর নগরে।


যেতে হবে নৌকায় দূর গাঁয়ে স্বস্তির ছায়ায়,
লাশের গন্ধে ভারী হলো নদীর বাতাস,
মাঝির কন্ঠে আসেনা আর ভাটিয়ালি অবিরাম,
সুরহীন বাঁশি হাতে নিশ্চুপ বসে ভাবছে রাখাল,
দু'তীরে নীরব পাখিরা, হিন্দোলহীন কাশবন--
যেন নিস্তব্ধ রৌদ্রময় রাতে চলছে নিশ্চুপ ভয়ার্ত তরী
যাবে যমুনার তীরে দীন এক কৃষকের কাছে।
বেদনার রক্তাভ রঙ ঢেলে সূর্য গেল অস্তাচলে,
অফুরান আনন্দে বরণ করলো কিষাণ কিষাণী,
যেন নিমগ্ন আরাধনায় দেবীর আবির্ভাব
হজার বছরের একাগ্র তপস্যায়।


নয়টি মাস পোহালো বিঘ্নহীন উদার আতিথ্যে।
ডিসেম্বরে বিজয়ের উল্লাসে ফিরলো অনন্তরা,
মিলনের আনন্দে উদ্বেলিত বাংলাদেশ,
ফিরলো অগ্রজ বিজয়ী বীরের গৌরবে,
আনন্দ-বেদনার অবিমিশ্র বাতায়ন
বয়েছিল মুক্ত জমিনে নীল সামিয়ানার নীচে,
স্বজনহারা মানুষ অতৃপ্ত আকাঙ্খায়
পথ চেয়ে পোহায় অপেক্ষার অন্তিম প্রহর।


শহীদের তেপায়া মিনারে আজ ফুলেল শোভা,
নগরীর উচু ইমারত মেকি কথামালায় টইটম্বুর,
হুলিয়া নেই, নেই আত্মগোপন, নেই বুলেটের শঙ্কা
---শুধুই ভাঙছে নদী, বিলীন হয় কিষাণের বসতি,
গাঁয়ের হাট, মসজিদ, মন্দির, ফসলের মাঠ,
শুধুই যাচ্ছে নেকাব পড়া তরুণীরা হায়নার নগরে
কঠোর দুঃসহ সংকটে দিশার সন্ধানে,
শুধুই ভাঙছে অগ্রজের, বাবার লেখা স্বপ্নের ডানা,
বাড়ছেই বৈষম্য, লুটপাট,অবিচার, শোষণ
আর
নিরেট আত্মকেন্দ্রিক প্রেতাত্মা এই
বেদনা বিরহ সংকট দুঃসময়ের অচলায়তে।
                   ---------------------