রূপবতী অধিশ্বরী রাজ্যের রাণী আসবেন
হীরকে খচিত মুকুট মাথায়, সুবর্ণ শকটে চড়ে,
সোনা আর মহামূল্য পাথর বসানো বসনে,
সুগন্ধ নির্যাস মোহিত সৌরভ ছড়িয়ে,
হাসি আর লাবণ্যের চিক্ চিক্ দ্যুতিতে
শালিকের ঠোঁট রঙা হাত নেড়ে নেড়ে
--- আরাধ্য ধনাঢ্য রাণী আসবেন দরিদ্র পুরীতে।


পাঠশালা বন্ধ, বন্ধ শ্রমিকের যন্ত্র চাকা,
মজুরি ছাড়া গড়বে তোরণ, মঞ্চ, সুরম্য সিংহাসন,
পুরবাসী কাজ ফেলে দাঁড়াবে পথের ধারে
নকল আড়ষ্ট হাসিতে দোলাবে হাতে ক্ষুদ্র নিশান।


পুরীপাল মিষ্টি  হাসিতে ওড়ায় কল্পনার ফানুস,
ছন্দে ছন্দে গুনগুনিয়ে গেয়ে চলে ---
রাণীর তুষ্টিতেই খ্যাতি আর বৈভবময় জীবন,
প্রাসাদ পর্ষদে পাইব নিশ্চয় মন্ত্রীর আসন।


তরুণ অনন্তের অন্তর দহে অনিয়মের দহনে।
কর্তাকে শুধায়, মজুরিহীন মানুষের শ্রমে
বাড়বে রাণীর মহত্ত্ব, নাকি অর্থ খ্যাতি আপনার?
ক্ষুব্ধ পুরপাল দেশদ্রোহী বলে তাড়ালো তারে
লাঞ্ছিত করে  পুরী হতে দূরে মুণ্ডিত মস্তকে।


অনন্ত আহরি সুরভিত বর্ণিল পদ্ম হাতে
দাঁড়ালো পুরদ্বারে রাণীর আগমনের অপেক্ষায়,
মুগ্ধ রাণী শকট থামিয়ে ডাকলেন পরম মমতায়।
শুধালেন, কেমন আছে সন্তানসম পুরবাসী আমার?  
বিনীত শান্ত অনন্ত স্পষ্ট অকপটে বলে,  
অভাবে অনটনে সংকটে পোহায় সমগ্র প্রহর,
এনেছি ভালোবেসে কমল নৈবেদ্য আপনারে পুজিবার।


রাণী বুঝিলেন হাসির আড়ালে প্রজার বেদনার উপাখ্যান ---
নক্ষত্রের আলো পশিল যেন আজ মনের অন্তরীক্ষে।  
দাঁড়িয়ে সুরম্য মঞ্চে  বললেন গভীর মমতায়,
চাই আমি অবিনশ্বর অমরত্ব হৃদয়ে সবার,   ত্যাগিলাম হীরক তাজ, বহুমূল্য বেশ, অহং জীবন।
অনন্ত আমায় দিলো ঔদার্যের অনিন্দ্য দিশা
আনন্দ বেদনা সংকটে মানুষকে ভালোবাসিবার।      
            --------------