স্বপ্ন  ছিল দিগন্ত ছোঁয়া মাঠে ফসলের ঢেউয়ে
আনন্দ ছড়াবে কৃষকের হৃদয় জুড়ে,
পরান মাঝি গাইবে ভাটিয়ালী
অতল মনের সুরের মূর্ছনায়,
রাখাল হয়ে যাওয়া ছিন্নমূল শিশু গাইবে
জীবনের উত্তরণের গান।
স্বপ্ন ছিল তরুণীর স্বপ্নের পেখম হতে
খসাবেনা কেউ রঙধনু রঙ বর্ণীল পালক,
শিশুর অনাবিল হাসির অবিরত নির্ঝর
রাহুর কৃষ্ণতায় হবেনা লীন কোনদিন
-- চপল কিশোরী স্বপ্নে স্বপ্নে পোহাবে বেলা
ত্রস্ত আকুল প্রাণের উচ্ছ্বাসে।
স্বপ্ন ছিল নিরন্ন পড়শীর অনশনের
দীর্ঘ পাথর বেলা বিচূর্ন হবে,
কর্মহীন তরুণের বুকের দুঃস্বপ্নরা    
উড়ে যাবে উদার স্পর্শে আকাশের নীলে
--দিগবিজয়ী রাজপুত্রের মতো
আলোয় আলোয় ভরাবে ভূবন।
স্বপ্ন ছিল সন্তানের বিজয়ের আরতিতে
মায়ের প্রহর পোহাবে আনন্দ বার্তায়,
বাবার পবিত্র ঘর্মাশ্রু শুকাবে অখন্ড অবসরে
--তাদের স্বপ্নের কপোত উড়বে আলোর শুভ্রতায়,
কিশোরী বোনের আকাঙ্খার বর্ণীল প্রজাপতিরা
খেলবে দৃষ্টির সীমানায়।
স্বপ্ন ছিল শহরের রাজপথে বইবেনা দাবীর মিছিল,
নিরাপদ সড়ক বেয়ে চলবে বাহন দূরদূরান্তে,
ভবঘুরে, ছিন্নমূল, বেকার ঘুরাবে প্রগতির চক্রযান,
বৈষম্যের ইমারত চূর্ণ হবে প্রজ্ঞার প্রলয়ে,
অতল স্বচ্ছ দিঘীর মতো নির্মল হয়ে যাবে
মিথ্যা লুকোচুরির  আলোকিত শোভিত নগরী।
স্বপ্ন ছিল মঞ্চে মঞ্চে ধ্বনিত হবেনা মিথ্যাচার,
গুম, খুন, ধর্ষণ, জিঘাংসা যাবে  নির্বাসনে,
সিংহাসন পূর্ণ হবে চির প্রার্থিত ভালোবাসার মানুষে
--পোহালো যৌবন, দ্বিপ্রহর যার
বিপন্ন মানুষের তপ্ত অশ্রুপাত ঘুচাতে
বৈরী বাতাসে কন্টকাকীর্ণ পথে পথে।


স্বপ্নগুলো বাইশ পরিবারের আদলে গজানো
সহস্র স্বপ্নখেকো পোকারা খুঁড়ে খুঁড়ে খায়,
পাতানো চোরাবালির রুদ্ধ অতলে  তলিয়ে দেয়
স্বাধীনতার স্বর্ণালী ফসল  
-- রক্তের আলপনায় আঁকা প্রত্যাশার দীর্ঘ পোট্রেট।
শেষ বিকেলের ছায়ার মতো দীর্ঘ হয় বয়স,
মায়ের অশ্রু বর্ষে অনর্গল
বাবার আদ্র পরিশ্রান্ত দেহখানি বড়ই অবসন্ন আজ,
বোনের আকাঙ্খারা বিদ্ধ হয় বারংবার বিষ শরে।


বর্ণিল যৌবন যায়, যায় য়ুগ আর জীবন
অদৃশ্য দহনে দাহ হয় সৃষ্টির নন্দিত অভিলাস
তবু ফিরেনা রুদ্ধ স্বপ্নরা
অনন্ত মধ্যাহ্ন রাতের এই কৃষ্ণ প্রহরে।
              ---------------------