গ্রামের নাম কয়াগ্রাম। কুষ্টিয়া জেলার  কুমারখালিতে অবস্থিত। নৈসর্গিক পরিবেশে এক বিরলতম পল্লিচিত্র এটি। এই গ্রামের এক বৃহত্তর পরিবারে ৩১শে ডিসেম্বর,  ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কবি লিপি আক্তারের জন্ম হয়েছিল। জীবনভূমিতে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিতে চেয়েছেন এক বিশুদ্ধ বোধের জগতে প্রবেশের জন্য । কবি তাঁর প্রথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিজগ্রামেই সম্পন্ন করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মস্তিষ্কগর্ভে পোষণ দিয়ে এসেছেন এক অনন্য সাংস্কৃতিক চেতনাকে। কবির  বাবা মোহাম্মদ আজিজুল শেখ-ও  ছিলেন খুবই সংস্কৃতিমনা একজন। খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারতেন তিনি।
কবির বাড়ির কোলঘেঁষে ছিল সুন্দর একটি পুকুর।  পুকুর পাড়ে সান বাঁধান ঘাট। ওই পুকুরের পাড় ই যেন এক অনিন্দ্যসুন্দর সাংস্কৃতিক মঞ্চ!
কবি লিপি আক্তার যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তখনই কাব্যজগতে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। তা একটি ছড়াকবিতা লেখার মাধ্যমে। কবিতাটি লিখে কবি দেখালেন কাউকে; এ যেন সৃষ্টির সংবেদনশীল লাজুক বিলাস বইকি। প্রতিভা কি চাপিয়ে রাখা যায়!
সাহিত্যিক ফজলুল হক কবির শিক্ষক ছিলেন।  ওই শিক্ষকই তাঁকে কবিতা লেখার নির্দেশনা দেন,  যা ছিল তাঁর জীবনের এক বড় প্রাপ্তি।  ফজলুল হক কবিকে সংগীত চর্চায়ও সাহায্য করেন একদম হাতে কলমে। তার পর থেকে  নিজ উদ্যোগেই এগিয়ে চলেন তাঁর সঞ্চিত প্রতিভা নিয়ে। সংগীত ও কাব্যধারা তাঁর মনন জগতকে এক আলাদা সাজে সজ্জিত করে তাঁর নিজেরই অজান্তে।
তিনি রাজধানী শহরের মিরপুরে প্রতিষ্ঠা করেন একটি সংগীত একাডেমি; যার নাম স্বরলিপি সংগীত একাডেমি।
কবি লিপি আক্তারের কবিতা যেন সমকালীন প্রেক্ষাপটের অমোঘ পূর্ণছায়া। কবি তার 'অপ্রত্যাশিত' নামক কবিতায় লিখছেন- "একটি স্কিনশর্ট/ ভাঙলো স্বপ্ন/ ছিঁড়ে গেল সম্পর্কের সুতোজাল/ভিজে নষ্ট হলো নরম ফসলি মাঠ/ আবারও কাঁদলাম আমি।/" কবি লিপি আক্তার তাঁর এই কবিতায় সুনিপুন নরম ছোঁয়ায় সাজিয়ে দিয়েছেন : জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত  কর্মপ্রমাদ কেমন বিস্বাদ হতে পারে।
সুখের প্রত্যাশা আমরা সবাই ই করি। কিন্তু সুখের মোহে ঘনকালো অন্ধকারে পড়ে যাই ; যা খুবই দুঃখের জায়গা। তবে এটাই অকাট্য সত্য যে, সুখ বা দুঃখ দুই-ই ক্ষণিকের। আপেক্ষিক অবস্থামাত্র। তাই বুঝি কবি তাঁর 'সুখ' নামক কবিতায় লিখছেন - "অজান্তেই কিনে ফেললাম দুঃখের মহাসাগর / গচ্ছিত সবটুকু সম্পদ দিয়ে!/ বুঝেই উঠতে পারলাম না/ এ আনন্দ ক্ষণিকের।/"  এভাবেই এগিয়ে চলেছেন তিনি।  তিনি চান বাঙালি সাহিত্যিকেরা আরোতর ভালো পাঠক হোক, কেননা, একজন ভালো লেখক ভালো পাঠকও বটে। তাই তাঁর যৌক্তিক প্রত্যাশা এই যে, বাংলা সাহিত্যের সমকালীন সাহিত্যিকেরা প্রয়াত সাহিত্যিকদের লেখা যেন বেশি বেশি পড়েন।
বর্তমানে কবি লিপি আক্তার দুটো পত্রিকার সাহিত্যবিভাগে কাজ করছেন।  আজ ৩১শে ডিসেম্বর  তাঁর জন্মদিন। কবি, সাংবাদিক ও সংগীত-শিল্পী লিপি আক্তারে জীবন আরোতর প্রোজ্জ্বল হোক; অগ্রণী হোক। আমি তাঁর সামষ্টিক জীবনসমৃদ্ধি  প্রার্থনা রাখি।