স্কুলশিক্ষক বালক অনুকূলের প্রজ্ঞাজ্যোতি দেখে ‘শ্রীশ্রী ঠাকুর’ উপাধি দিলে, সেই উপাধিই তাঁর নামের সাথে এক চিরায়ত পরিচিতি লাভ করল; আর নাম হয়ে উঠল – শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।


এই বিরলপ্রজ অস্তিত্ববাদী দূরদৃষ্টিঅলা ছড়াকার অপেক্ষাকৃত অশ্রুত হলেও তিনি সাহিত্য পাতায় বিশ্বনন্দিত কবি; জন্ম- ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের অধুনা পাবনা জেলার হেমায়েতপুর গ্রামে। রবীন্দ্র-নজরুল-বিভূতি-বন্দে আলি মিঞা তাঁর সাহিত্য ও দর্শনকে ‘দূরদৃষ্টি’ বলে স্বীকার করতেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গ-পাবলিকেশন্স থেকে সেইসময়ে ‘সৎসঙ্গী’ নামে একটি পত্রিকা বের হতো, যার সম্পাদক ছিলেন কবি বন্দে আলি মিঞা।



কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. জীবন চক্রবর্তী শ্রীশ্রীঠাকুরের ছড়াসাহিত্যের ওপর পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাড়াও ড. রেবতীমেহন বিশ্বাস, ড. আতপেন্দ্র রায়চৌধুরী, ড. রাধাকৃষ্ণ পাল, ড. নিরঞ্জন মিশ্র, ড. কুমার মুখোপাধ্যায়-সহ অনেকই করেন। আমেরিকান সাহিত্যিক মি. হাউজারম্যান শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনী নিয়ে লিখেছেন ‘ওশান অন অ্যা টী-কাপ’; বাংলায় অনূদিত নাম ‘বিন্দুতে সিন্ধু’।


মাহামারি প্রেক্ষিতে তাঁর রচিত ‘পুণ্যপুঁথি’ গ্রন্থে বলা আছে , ” সম্মুখে তোদের ঘোর অন্ধকার, সেদিন ক’টা প্রাণকে বাঁচাতে পারবি?… প্রচারে পাগল হ্।” তিনি এমন কোন ব্যধিময় পরিস্থিতি তাঁর চোখে যেন স্পষ্ট দেখেছিলেন, তা তাঁর ছড়ায় প্রমাণ পাওয়া যায়।


আজ আমরা করোনা মোকাবিলায় নাকে-মুখে হাত দিলে হাতটি সাথে সাথে ধুয়ে নিই; শ্রীশ্রীঠাকুরের ‘অনুশ্রুতি’ নামক ছড়াগ্রন্থের প্রথম খণ্ডে সেই সময়েই বলেছেন ‘নাকে-মুখে হাত দিলে /অমনি তাহা ধুতেই হয়/ নইলে কুটিল রোগের হাতে/ নষ্ট জীবন হয়ই হয় /। তাঁর এমন বহু বলা খুঁজে পাই ; সংক্ষেপে তুলে ধরা কঠিন!



আমরা জানি, কোভিটটেস্টে লালা নেয়া হয়ে থাকে।এই লালার মধ্যে তিনি তখন জীবণুর ইঙ্গিত প্রকাশ করলেন! তিনি বললেন, /চুমুক দিয়ে খাইয়ে কিছু / না-ধুয়ে পাত্র খাস্‌নে আবার, / জীবাণু অযুত লালার সাথে/ করতে পারে ঢুকে সাবাড়।/


আজ আমরা কোভিটের কারণে একজন আরেকজনের পোশাকপরিচ্ছদ ধরা ঠিক মনে করছি না।শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, /পরের গামছা কাপড় পরা/ বিছানা বালিশে শোওয়া, / ব্যধির বিপাক দুর্দ্দশাকে / কুড়িয়ে দেহে লওয়া।/


এমন যুগদর্শনে তাঁর কয়েক হাজার ছড়া আছে। মহামারির সাযুজ্যে তাঁর একটি সুন্দর ছড়া : রোগ হ’লে তুই থাকিস স’রে / কিছুতেই তা ছড়াবি না,/ ছোঁয়াছুঁয়িতে নাকাল হ’বি/ সমাধান ওটা চারাবি না।/ এ-কারণেই তাঁর বাইশ বছর বয়সের রচিত গ্রন্থ ‘সত্যানুসরণ’ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “এঁর বয়স বাইশ হাজার বছরেরও বেশি।”


তাই,আসুন আমরা সুস্থসুন্দর থাকতে সচেতন হই।আর সচেষ্ট হই অনুকূলসাহিত্য পাঠে : জানতে ও শিখতে।