🔳 মাতৃবিদ্বেষী
-শ্যামল কুমার সরকার
মূলহারা ওই স্বর্ণলতাটা কুলের গতর ধরে,
আলিঙ্গনে সে বুকে মাথা রেখে, বলে, ফেলোনা আমারে!
আমার নাই রে কেউ তুমি ছড়া দুখের এই ভূগোল!
মাটিকে ভুলেছি, চাইনা আমি ভুলেও মায়ের কোল।
মাকে ভুলে আমি তোমারে চাই গো, রেখো তোমারি আবেশে।
তোমারে কতটা প্রাণ থেকে চাই, আহা মরি ভালবেসে!
স্বর্ণলতার প্রীতিবাক্ শুনে গললো কুলের প্রাণ;
কুলগাছ তারে রাখে বুকে ধরে গায় সে প্রেমল গান।
এভাবে অনেকদিন গেল কেটে- স্বর্ণকুলের কাল,
স্বর্ণলতাটা কেবল বাড়ছে ধরে প্রমিকের ছাল।
আজ কুলগাছ আর নাই পায় কূল সে জীবনে তার,
মাতৃবিদ্বেষী ওই রূপসীর প্রকৃতি কত যে অসাড়!
কুলের জীবনে মূলহারা ওই স্বর্ণলতা এসে,
কুলগাছটাকে মরলোরে আহা, সেই ভালোবেসে!
হঠাৎ একদা কবি আসলো কুলগাছটার কাছে;
বললেন তিনি, মাতাকে হিংসে যদি অন্যকূল যাচে,
ও-কূলও হবে নির্মূল এ-সত্যলেখা কবিতায় আছে-
মাটিতে তোমার অস্তিত্বটা খাড়া; ভুলো না'ক তাঁরে
মা-মাটিরে ভুলবে যে'ই, ভুলবে একদিন সবারে।
মূলে থাকা চাই টান -
মূল-নিন্দায় জগতটা গ্রাসে হারায় কূলের প্রাণ।
৩ এপ্রিল, ২০২১
কেরানীগঞ্জ,
🔳 বৈশাখের বীরত্ব
-শ্যামল কুমার সরকার
তোমার উৎসবে আমি বড়ো এক তীক্ষ্ণ সত্য দেখেছি লুকানো,
জ্ঞানের শুদ্ধতা পেয়েছি আমি তোমাকে
দেখে; পহেলা মাসের একটা মূল্য যে আছে, জানো?
পথচলা হবে ওগো তোমার বীরত্ব-বার্তা মেখে।
সেই বজ্রকন্ঠ আজ আবার সবার পড়ে মনে
তুমি গো বৈশাখ, সেই যে ছিল তোমার সহচরী
'কালবৈশাখী' নামটা; আমার সব যে জানা ঢোনেকোণে।
তোমার সহচরীকে অনেক যে ভালো লাগে আমার!
কালবৈশাখীর কন্ঠে শুনেছি রে আমি 'সত্যি' বহুবার।
সে নাকি প্রকৃতি থেকে 'অসাড়-আকাঠা' করে থাকে চুরমার।
আমি জানি, কেন সেই কালবৈশাখী ওমন কাজ করে চলে --
শুনেছি, অসাড় হ'য়ে অহংকার বেড়েছে যার
তাকেই শাখা-প্রশাখাসহ ভেঙে দেয় সে নির্মূলে।
আর ধরার বুকের রুগ্ন ধূলি সব উড়ায়,
তুমি মহাবীর; দেখে তোমারে দুর্বলতা পালায়।
🔳 মানবিকতা
-শ্যামল কুমার সরকার
মানবিকতার ঘুম পড়িয়ে মানুষ হবার ভন্ডতা!
পশু কিন্তু রইল পশু, নাই বলে তার মানবতা।
মানুষ হবে কীসে-
মানবিকতার হাত ছাড়ে যে, পশুর কূলে ও-সে!
🔳 আলোক-ঈর্ষা
-শ্যামল কুমার সরকার
আলোর মহান উজ্জ্বলতায় চায়না তাকাতে কেউ;
তোমার কর্মে কেকা ধ্বনিটা ওদের কর্ণে ঘেউ!
জীবের ধর্ম এই-
জীবন্ত হলে তোমার জীবনে বিষম ঘটাবেই!
তুমিও থাকবে নীরবে সতত; কবি যে চায় রে তাই-
আলোক ছড়াবে; যে যাই ভাবুক- আলোকিত হবেই।
ধন্য তুমি হে -
তোমার উপরে চক্ষু রাখতে চায়না তবু তো 'সূর্য' বলে।
🔳 ভেতরে ঢাকা
-শ্যামল কুমার সরকার
কান পেতে শোন দেখি-
তোমার মনের ঘরে হিজিবিজি কত
আধোয়া-আলাপ ওই ই ধূলো ছড়াত,
তুমি সেকথা জানো কী?
নিজের ভেতর ঢাকা-
কামমোহ আর কত না পরনিন্দা যে
ক্রোধচোখ তৈরী করে আহ্ কত বাজে!
তাকা, আপনমনে তাকা!
🔳 নববর্ষে জীবনবৃদ্ধি-সুর
-শ্যামল কুমার সরকার
পুরাণ যা-কিছু তা'র বীর্যোদ্ভূত প্রাণে,
নবীনে গাঁথুক তার নবরূপ-ঘ্রাণে।
নবীন-জাগৃতি বাঁধুক হিয়ার কোণে।
অস্তিত্বের যা-কিছু বিষম-ধারা
ওরে, ধুয়ে ফেল্! তোরা নবজাত যারা।
নবীনেরে বরে লও-
পুরাণে জীব-বহতায় বৃদ্ধির সুর গাও।
🔳 বুকের ভেতর
-শ্যামল কুমার সরকার
বুকের ভেতর যদি নাই পারো ঢুকতে
রুদ্ধদুয়ারে যদি অভক্তির তালা
ঝুলে থাকে, আঘাত করিও বুকেতে;
তোমাকে ছাড়া যে আমি চিরদিন একলা!
🔳 অমৃত-জীবন
-শ্যামল কুমার সরকার
মরি ক্ষণে ক্ষণে কত বার, জন্মি পুনঃ ক্ষণে ক্ষণে
তিলমাত্র মরিলেই তাঁর তরে, আহা, অমৃত জীবনে!
বাঁচিতে চাই কেবল। কী হলো গো বেঁচে বেঁচে!
বেচে দিয়ে বাঁচার রীতি মরণে যায় গো যায়; যেচে-
জীবন পথে মরিতে চাই; জীবন-কবরে পাবই ঠাঁই,
জীবনের মাঝে মরণ কোথা কবে! জীবনপথ তাই-
শত বছর খেয়ে-দেয়ে ক্ষণিকই বাঁচিলো রে ক'জন!
জীবন চলে গেলেও বাঁচে সে, হয় না কভু তার মরণ!
⬛ মুমূর্ষুর জন্য প্রার্থনা
-শ্যামল কুমার সরকার।
তুমি ফিরে এসো সুস্থ জীবনে,
আমাদের বুকে সূঁচফোঁটে দেখো!
তোমার চোখটা খুলো, শত জনে
কত কাঁদে আজ, এই ডাকে থেকো!
⬛ দ্বিপ্রশ্ন
শ্যা ম ল কু মা র স র কা র
জগতের কতো শুভকাজ ধীরে ধীরে যায় ধুয়ে।
জগতের দেহে কতো মন্দ বীজ কতো শত জনে যায় রুয়ে।
জগতের কিছু চাষি চষিবার তরে যেন আসে।
জগতের বুকে কত চাষানাম তারা আগাছার সহবাসে।
জগতের কোলে নিরিবিলি আমি আঁধারের পাশে।
জগতের কত কী যে জগতটা ঠকাবার আশে।
জগতের নেই কোনো প্রাণ?
জগতের পেটে থেকে জগতকে করি আমি ত্রাণ?