"আর এক টাকা দিন, কম আছে।"
- "সাত টাকাই আছে তো"
"বাসে পা দিলেই এখন সাত টাকা"
- "আসার সময় যে আজই সাত নিল।"
"দিন এক টাকা না হলে নেমে যান।"
গিয়েছিলাম সেদিন আমি বাস থেকে নেমে
হয়ত এক টাকা জমানোর ইচ্ছে
বা ষোল আনা অপমানের জন্যে।


স্কুল ফাইনাল দিয়েছি; স্বপ্ন বুনছি, ফলের অপেক্ষায় বসে
দজ্জাল মা, মদে ডুবে থাকা বাবা দিয়েছিল আমার বিয়ে।
বিয়ের পর পরই পেট ভরিয়ে দিয়ে; হয়েছিল শহিদ,
মদের টানে, পরিবর্তনের নামে আমার মরদ।
তারপর থেকে, আমার পেটে অসহ্য খিদের জ্বালা।
এমন সময়, মাতৃত্বের জ্বালা নিয়ে হাজির হল বুকের রক্ত চোষা
"আলালের ঘরের দুলাল।"
সেদিনও পঞ্চায়েতের মোড়ল আমার শুকনো বুকে
নজর দিতে ছাড়েনি; কাজের জন্যে, ভাতের জন্যে।
বাধ্য হয়ে ভাতের খোঁজে -
শহরে আসা শহরতলি থেকে।
হাওড়া অব্দি ট্রেন, তারপর বাস।
এই আমার বাস - দৈনন্দিনের বাস, প্রয়োজনের বাস,
ভারসার বাস, গন্তব্যের বাস।
যে বাস থেকে আমায় হয়েছিল নামতে
শুধু একটা টাকার জন্যে।
এই সেই বাস, যে বাসে একবার আমার
মাস-মাইনেটাও যায় মার।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম ফুলবাবুদের শহরে
আমার থেকেও কেউ অভাবী থাকে।
দৌড়ে ট্রেন ধরা, বাসে ওঠা নামা
এ ভাবে বেশ চলছিল সুখের দিন অভাগীর ঘরে।


করোনার হঠাৎ আক্রমণ গোটা শহরে, গোটা দেশে।
কাজ গেল, মাইনে গেল, আমি বসে চৌকাঠে
বৃষ্টির অপেক্ষায় ফাঁকা হাতে।
আমি নিশ্চিত বৃষ্টি আসবে; এলও সে
ঠিকঠাক করে গেল সব, সবকিছু তছনছ করে।
আমার স্বপ্নের শহর, আমার রোজগারের শহর
নতুন সাজে আজ আমার শহর।
আজ আমার শহরে বাস ভাড়া চারগুন,
আমার শ্রমের দাম অর্ধেক!
দিদি শুনছেন, দাদা শুনছেন -
আমার ভাঙা মনে আর জোর নেই
আজ আমার ভাঙা শরীর ছাড়া কিছু নেই।
বলতে পারেন, ভাঙা শরীরের খদ্দের কোথায় পায়?
দিদি শুনছেন, দাদা শুনছেন -
আমার সংখ্যা গোনা হবে না?
আমিও যে কোরানাতে মৃত।