বাইরে বৃষ্টি পড়ছে অঝোর ধারায়।
থামবার কোন ইচ্ছে নেই বোধহয় আজ।
সকাল থেকে এখন অব্দি,
বৃষ্টি পড়ে চলেছে একাধারে।
কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে সামান্য।
কিন্তু মেঘের প্রাচুর্য বোধহয় ফুরাবার নয়!
বিদ্যুতের ঝলকানি ও মেঘের গর্জন যেন আজ কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।
আজ কেবল একা বৃষ্টিরই রাজত্ব!


এতদিনের তপ্ত গরমে অতিষ্ট জনগণের মাঝে
অবশেষে পরম প্রশান্তি নেমে আসে।


গাছপালা আজ ভিজে আনন্দে আত্নহারা!
তাদের পাতার পৃষ্ঠ,
আর গায়ের বাকলে বহুদিনের জমানো ধূলিকণা ,
আজ বৃষ্টির জলে ধুয়ে গড়িয়ে বিশুদ্ধ করে যাচ্ছে।


পথের গায়ে জমে থাকা ধূলা
বারিজলে ধুয়ে পথের আসল রং ফিরিয়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে।


গাছের নির্ভেজাল ফল
পরিপক্কতার জন্য নতুন রসদ পেয়ে গেল!


ফুলের উপর বৃষ্টির ঝর্ণাধারার প্রবাহ
ফুলকে করে তুলেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত!


অভুক্ত পাখিরা ভিজে বসে আছে গাছের ডালে
কিংবা কার্নিশে।
দাঁড়কাকটা মাথা ঘুরিয়ে ঝেরে নিচ্ছে ভেজা শরীরটা।


নারিকেল আর লতানো বন্য গাছে ঘেরা পুকুরে
বৃষ্টির ফোঁটা তৈরী করছে ছন্দময় জল তরঙ্গ!


টিনের চালে বৃষ্টির আক্রোশ যেন দুর্নিবার!
রোমহর্ষ ধাতব শব্দে কান যেন
ঝালাপালা হবার যোগার!
অথচ সেই শব্দের মূর্ছনাই
যেন হৃদয়ে তৈরী করছে উদ্যম!


রিক্ত-শূণ্য মাঠে বৃষ্টির ঘোলাটো দৃশ্য
হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
মাঠের ঘাসগুলোতে যেন এবার জেগে উঠবে নতুন প্রাণ!


দূরে পুরানো সূতি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে
গ্রাম্য নারী হেঁটে যাচ্ছে ভিজে একাকার হয়ে।
ভেজা শাড়িটি গায়ে লেপ্টে
তার বদনখানীকে করে তুলেছে সর্বাংশে আকষর্ণীয়।
সরল অথচ কর্মঠ সে নারী রূপ আজ প্রকৃতির আদিমতাকে উস্কে দেয়!
হৃদয়ে কামনা জাগিয়ে তুলতে আজ অতটুকুই যথেষ্ট।


আজকের বরষায়,
প্রিয়ার কথা ভেবে জানালার পাশে বসে
বৃষ্টির তাল গুণতে গুণতে কবিতা লিখছে ,
জীর্ণ মেছে থাকা টিউশনি নির্ভর ভাসিটির ছাত্রটি।
মুখ ফুটে ক্লাসের সুন্দরী প্রেয়সীকে বলতে না পারলেও
আজ তার লিখায় সে ব্যক্ত করে দেবে
তার সকল লুকানো কথা।
প্রিয়ার সৌন্দর্য বর্ণনা দিতে গিয়ে
বৃষ্টির মতো যেন তার লিখাও আজ থামবে না।  


বৃষ্টির শীতল ও আরামদায়ক পরশ
কর্মহীন আরাম পিপাসুদের
কিংবা ছুটিতে থাকা ক্লান্তদের দেহে
ঘুমের আবেশ জাগিয়ে তুলেছে।
কাঁথা জড়িয়ে তারা ঘুমের আয়োজন করছে!


এমন বরষায়,
উঠতি যৌবন থেকে শুরু করে
পড়ন্ত বয়সের নর-নারীর হৃদয়ে পর্যন্ত
কামনা জেগে উঠছে সংগত কারণে!  


রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে বারবার নব্য গৃহবধূর
মনে পড়ে যাচ্ছে বরের সোহাগের কথা!
দূরে থাকা ব্যস্ত স্বামীর আলিঙ্গন আর চুম্বন পেতে
আকুল হয়ে পড়ছে এখন তার হৃদয়!


অফিসের জানালা দিয়ে বৃষ্টির কর্মযজ্ঞ দেখতে দেখতে
আর কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে স্বামী বেচারা ভাবছে
আজকে বাড়িতে থেকে যেতে পারলে বেশ মজাই করা যেতো!
কাজে মন দেয়াটা আজ যেন দায়!
বারবার মন যেন চলে যায় শিহরণ জাগানো অনুভূতির দিকে।


কিন্তু অঝোর শ্রাবণ সবাইকে উপকৃত করে না,
কামনাবিলাসীও করে না!
ভাবুকও করে তোলে!
যন্ত্রণার ডালিটাও বয়ে আনে!


যানবাহনের অভাবে ছাতা মাথায়
বিরক্ত মেজাজে, কাদার স্রোত ঠেলে
ছুটে চলেছে শ্রমজীবি মানুষের ঢল।


এদিকে ঘরের কাজ করতে করতে
সন্তানের বাড়ি ফেরা নিয়ে
সংশয়ে উদ্বীগ্ন স্নেহময়ী মা নীলিমা।
একহাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে অপরিকল্পিত নগরীর রাস্তা
আর বাড়ির নিম্নতলা!
দুরন্ত সন্তানের উল্লাসে বৃষ্টিতে ভেজা ও
বন্যার মতো নোংরা পানি পেরিয়ে আসাটা
মাকে যেন সন্তানের অসুস্থতার আশংকায় অগ্রীম ডু্বিয়ে দেয়।


পৌঢ়ে পৌছে যাওয়া বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা
জীবনে সহস্রবার দেখা এমন দিনটিকে দেখে
আবারো আভিভূত হয়ে যায়।
যুগ যুগ ধরে যতনে রাখা স্মৃতিগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়
হঠাত, একাকীত্ব জেঁকে বসে তাদের ঘিরে!
পাওয়া, না পাওয়ার বেদনা, স্মৃতির মূর্ছনায় মিশে
বড় বেশি বিষাদময় হয়ে ওঠে!


ওদিকে,
দুরন্ত শিশুরা ছুটে বের হয়েছে রাস্তায়
বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার মজার যে তুলনা নেই!


বেণীবাঁধা চুলে কিশোরী,
জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে
আবৃত্তি করছে বৃষ্টির ছড়া!
শরীরে তার আনন্দের বাণ ডেকেছে!


কুমারী যুবতীর হৃদয়ে দোলা লেগেছে বৃষ্টির তালে তালে!
কণ্ঠে তার আজ মুখস্ত বৃষ্টির গান, বৃষ্টির কবিতা!


আবার, কোন গৃহিনী,
তার সদ্য অবসারপ্রাপ্ত স্বামীর ইচ্ছায়
প্রকৃতির সাথে মিল রেখে রান্না করছে।
রান্নার সুঘ্রাণে ভরে উঠেছে তার সারা ঘর!


আর বৃষ্টির আবেগে মাতোয়ারা হয়ে
চারপাশের সব কিছু দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে
কবিতার পসরা নিয়ে বসেছি এই আমি!


২৫ শে জুলাই ২০১৮
ফরিদপুর।