তোমার কষ্টের কথাগুলো জানাতে গিয়ে
আমি যে আজ বাকরুদ্ধ!


ছোটবেলায় কিশোরী বয়সে হারালে মা;
যে বেলায় মাকে কেন্দ্র করে গড়তে তুমি গোটা জগৎ,
সে বেলায় জগৎ শূণ্য করে
বড্ড অবেলায় হারিয়ে গেল তোমার প্রিয় মা!


মাকে হারিয়ে তুমি হয়ে পড়লে স্তব্ধ!
মায়ের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে
কাটতে লাগলো তোমার দুঃসহ দিনরাত্রি!
ঘুমের ঘোরে তুমি চিৎকার করে উঠো "মা"!
কিন্তু মাটির অন্তঃপুর থেকে মা তো আর ফিরে আসে না!
বাবাকে দেখতে কষ্ট তাকেও কুড়ে কুড়ে নিঃশেষ করছে!
সে কষ্টও তোমার কষ্টকে করে তুলতো দ্বিগুণ!


দিন মাস বছর পেরিয়ে একসময় তুমি হলে যুবতী
যৌবনের সব আলো তোমার উপর বিধাতা ঢেলে দিলেন।
নিজেকে সংকোচে রাখা তুমি,
পা বাড়াতে চাওনি কখনও ভালোবাসার দিকে!
কিন্তু বিধাতার যে ছিল অন্য রকম ইচ্ছে!


এক হৃদয়হীন অভিনেতার ভালোবাসায় তুমি হারিয়ে গেলে
তোমার স্বপ্নগুলো সাদাকালো থেকে হয়ে উঠলো মিথ্যার রঙে রঙিন!
স্বপ্নের পুরুষ কেউ ছিলো না তোমার
কিন্তু সে হৃদয়হীনকেই নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হলে তুমি!


তোমার ভালোবাসা ছিলো এতটাই তীব্র
সে হৃদয়হীনের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগাতে ব্যর্থ হলেও
তাকে জীবনের সাথে জড়িয়ে রাখতো পেরেছ আজীবন!


হয়ে গেল তোমার ভালোবাসার জাগতিক স্বীকৃতি "বিয়ে"!
বিয়ের রাতে বুঝতে তুমি পারলে
এ জীবনটা তোমার ছিল মাতৃহীন দুঃখের।
কিন্তু সে রাতেই তুমি বুঝে গেলে
সেদিন থেকে জীবন হবে তোমার চিরদুঃখের।


একদিন অভিনেতার সুঅভিনয়ও তুমি বুঝতে পারলে!
কিন্তু ভালোবাসার শক্তির উপর ভরসা করে
তুমি নিজের জীবটাই অনিশ্চিতের উপর রেখে দিলে!
না! না! সে বিশ্বাস তোমার ভাঙ্গলো
ভরসা হল তোমার বিশ্বাসঘাতক
ভালোবাসা হল তোমার ব্যর্থ!
তারপরেও তুমি স্বপ্নের সংসার গড়তে চাইলে অনাস্থার উপর!


একদিন যে কোল জুড়ে আসতে পারতো সন্তান
সে কোল খালি হয়ে গেল দু'বার!
মাতৃত্বের স্বাদ নিয়েও তুমি সন্তানকে আকড়ে ধরে বাঁচাতে পারলে না!


অভিনয়কে সত্য ভেবে বিশ্বাস করার ভুল আবারও করলে তুমি!
সে ভুলের মাশুলও তোমাকে একদিন দিতে হলো চোখের দুর্নিবার জলে!
তোমার ভালোবাসার মানুষ নামক অভিনেতাটি
তোমায় ছেড়ে মেতে উঠলো
বিশ্বাসঘাতকতার নোংরা নাটকে
আরেক অভিনেত্রীকে নিয়ে!


মা মরা মেয়েটিকে কষ্ট দিতে তার বিবেকে সেদিন একটুও বাঁধলো না!
বিশ্বাসের হত্যা নামক এ নাটকে
তোমার অভিনেতাকে সাহায্য করলো তারই আপনজন
আরেক পুরানো অভিনেত্রী, তা মা!
তার মা নিজে মেয়ে এবং মা দুটোই হয়েও
মা হারা তোমার কথা একটিবারও ভাবলো না!
নাটকে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে তোমার বিপক্ষে দাঁড়ালো
তোমার ক্ষণকালের আপনজনেরা!


সেদিন তুমি ভেঙ্গে পড়লে, কিন্তু নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে না।
বরং নাটকের মহরায় বাহবা দিলে।


তারপর আজ পর্যন্ত কেটে যাচ্ছে কত প্রহর! কত ক্ষণ!
দিন, মাস, বছর!
তিলে তিলে তুমি শেষ হয়ে যাচ্ছ।
সে অভিনেতা অভিনয়ের ছলে তোমাকে দেয়
প্রাণ সংহারী কষ্ট!
সে কষ্টকে জীবন মনে করেই
জীবনটাকে করে দিচ্ছ তিলে তিলে তুমি নষ্ট!


ক্ষুদ্র এ জীবনে পেয়েছ অনেক অনেক কষ্ট।
তোমার কষ্টের কথাগুলো তুমি লিখতে পারবে না
তাই আমি লিখে গেলাম তোমার কষ্টের ইতিবৃত্ত!
ভেবেছিলাম পারবো না,
লিখতে যে আমারও হয়েছে অনেক কষ্ট!
কিন্তু লিখে রেখে গেলাম,
এক দুঃখী মেয়ের নষ্ট জীবনের সব কষ্ট!