আমি এখন প্রতিরাতে
মধুচন্দ্রিমায় যাই
সঙ্গে থাকে অরুনিমা
জীবনের জরা-ব্যাধি, ক্লান্তি বিনাশের জন্য
তিন কুড়ি বয়স পেরিয়ে
এক কুড়ি বয়সে দাঁড়ায়ে
বেশ চমৎকার সময় কাটে !


উড়ন্ত ঘোড়ার পিঠে চেপে
আলোর গতিকে হার মানিয়ে
চলে্যাই কোনো সাগর তীরে
বালুকার মাঝে ঝিনুক কুড়াই
মালা গাঁথি বুকের তার ছিঁড়ে
কিংবা উড়েযাই শতসহস্র
শতাব্দী পুরোনো সভ্যতার দেশে ;
রাজাদের প্রাসাদে ঘুরি হাতে হাত রেখে
ইট-পাথরের ফাঁক-ফোঁকর থেকে
লেজ বাঁকা বিছা আমাদের পায়ে
ঢেলে দেয় বিষ, তারপরও হাঁটছি
মাকরসার জাল ছিঁড়ে, বাদুড়ের পাখনার
ঝাঁপটা বেশ ভালোলাগে
পুলক শিহরণে আমরা একটু চমকাই
আমাদের রথ থামেনা ।


অনেক পথ পেরিয়ে আমরা এখন
ব্যাবিলনে ঝুলন্ত বাগানে; মুগ্ধ বিমূঢ় !
আলেকজান্ডারের মুখোমুখি হলে
জানতে চাইলাম – এতো মানুষ হত্যা করে
এতো দেশ জয় করে কি পেয়ছ তুমি ?
স্মিত হেসে জবাব দিলেন –
একটা খেতাব ‘আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট ‘ !
তাঁকে কুর্নিশ করে আবার চলে এলাম
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসরে,
ফেরাউনের সাথে দেখা হলে
জিজ্ঞেস করলাম – তোমার স্রষ্টা
আল্লাহ্‌ কে জানো ?
বিমর্ষ বদনে বলল – ‘নীল নদের পানি যখন
দুদিক থেকে চেপে এলো তখন
জেনে ছিলাম আমি নই; মুসা (আঃ) এর
আল্লাহ্‌ কে বিশ্বাস করি’ ।


এবার আমাদের যাত্রা মরক্কো
ইবনে বতুতার সাথে কুশল বিনিময় শেষে
বিনয়ের সাথে বললাম আমার দেশ
প্রাচীন বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলুন,
তাঁর অবয়বে আনন্দ উচ্ছ্বাস –
‘শ্যামল সবুজ মায়া ঘেরা এক অনন্য দেশ,
এমন অতিথিপরায়ন সহজ-সরল মানুষের
দেশ দেখিনি আর কোথাও’ !
তুমি চিরন্তন চিরঞ্জীব ধন্যবাদ তোঁমাকে
এবার বিদায় হে বন্ধু !
অরুর চোখে আনন্দ অশ্রু !


ডিঙ্গায় চেপে দুলতে দুলতে পার হয়ে
এলাম অনিন্দ্য সুন্দর জিব্রাল্টার প্রণালী,
স্পেনের উপকুলে ডিঙ্গা রেখে
ঘোড়ায় চেপে ছুটলাম;
গাজী সালাউদ্দিন এর তাবুতে ঢুকে
তাঁকে সালাম দিয়ে আসন গ্রহন করলাম,
আদর আপ্যায়ন শেষে তাঁকে প্রশ্ন করলাম
ধর্মের নামে এতো রক্ত ঝরিয়ে কি পেয়েছ তুঁমি ?
উত্তরে হেসে বলল – ‘কেন এই যে
“মহান উদার গাজী সালাহউদ্দিন” !


ভূমধ্য সাগরের নীল জলে
প্রমোদ তরীতে ভেসে ভেসে পৌঁছে গেলাম
সাইপ্রাসে;  অ্যাফ্রোদিতির সঙ্গে দেখা হতে
শুধালাম তাঁকে তুঁমিতো প্রেমের দেবী;
নির্ভেজাল প্রেম-ভালোবাসা কী,
সত্যিই কী তুঁমি প্রেমের দেবী ?
উত্তর এলো জানিনা, লোকে বলে !


অরুর নিরুত্তাপ চোখ আমার চোখে রেখে
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল এবার চলো
রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী রোমে যাই ।
রোম সম্রাটের অতিথি হয়ে
গ্যালা্টিয়রে বসলাম
আজ রোমে এক মহাউৎসব
রোমের ঐতিহ্যবাহী উৎসব
নিরাস্ত্র বন্দী বীরদের সাথে
সম্রাটের আদরের পোষা হিংস্র জানোয়ার
সিংহ এর রণ উৎসব
গ্যালারী ভরা দর্শক উহাদের মাঝে আমরা দুজন
ক্ষাণিক ক্ষণ পরে শুরু হলো উৎসব
দর্শকের বীভৎস উল্লাসে কান ফেটে যাচ্ছে
চোখ দুটো খোড়ল থেকে বের হয়ে আসতে চায়;
আমার হাতে অরুর হাত
নখগুলো যেনো আমার চামড়া ছিঁড়ে
বিঁধে যাচ্ছে হাড্ডি পর্যন্ত, অরু কাঁপছে,
আমাকে খুব জোড়ে চেপে ধরছে, চাপ আরও বাড়ছে ;
জড়ানো গলায় বলছে – মনি আর পারছি না !
আমি শুধু বুঝতে পারছি না এটা কী
রমনের চরম উত্তেজনা, না ভয়-আতংক;
রণ বীভৎসতার কোনো নিরব উল্লাস !