সে এক বহু বহু দিন আগের গল্প, আজিকার লোকে তা জানে বড় অল্প!
ছিল সেথা ঋষি এক আয়োধধৌম্য নাম, বেদ ধর্মশাস্ত্র সে করিত প্রদান।
তাঁহার সে আশ্রম মনোরম অতি, শিষ্যগণ সেথা থাকিত মহামতি,  
এরই মধ্যে এক শিষ্য গুরু অন্ত প্রাণ, আরুণি নাম তার আশ্রমের মান।
একবার গুরু তাকে আদেশ দিলো, আল দিতে ক্ষেতে সে তৎপর হইলো,
বহু চেষ্টা করেও সে না হয়ে সফল, দেহ ঢালি আলে আদেশ করিলো সফল;  
বহুক্ষণ গুরু তারে না দেখিতে পেয়ে, তার নাম ধরি গুরু রয় পথ চেয়ে...  
গুরুকণ্ঠ শুনি আরুণি কাদামাখা গায়ে, গুরুর সম্মুখে সে আসিলো দাঁড়ায়ে,
জিজ্ঞাসিলে গুরু, আরুণি ভক্তিভরে তার কর্মকাণ্ড বর্ণিলো সে গুরু আজ্ঞা তরে,  
শিষ্যের ভক্তিতে গুরু মুগ্ধ অপলক, পাঞ্চাল বালক পাইলো নাম উদ্দালক।


ক্রমে কর্মে উদ্দালক গুরু স্থান পায়, পাঞ্চালে ফিরিয়া নিজ আশ্রমে পুনরায়
গুরু লব্ধ জ্ঞান সে করে বিতরণ, ঋদ্ধ হয় সেথা তার বহু শিষ্যগণ।  
এরই মাঝে উদ্দালক পাতিলো সংসার, ভরিয়া উঠিলো তা ফুলে ফলে তার...
স্বেতকেতু পুত্র তার, কন্যা সুজাতা, শিষ্য কহোড়ের সে হইলো দয়িতা।  
সুখী হয় দম্পতি, সুখের সংসার, ক্ষণকালে সন্তান আসে গর্ভে সুজাতার।  
একদা এক সত্সঙ্গে শিশু গর্ভ হতে মা'র, সংশোধন করে দেয় ভুলটি পিতার,  
কহোড় এ কর্মে অহং এ পাইয়া আঘাত, গর্ভমাঝে সন্তানেরে করে অভিসম্পাত।
"পিতার ভুল ধরিস বক্রবুদ্ধি ওরে, বাঁকা হয়ে জন্মাবি জীবনের ভোরে"!
সেই শাপে জন্মে শিশু মহাজ্ঞানী হয়ে, অষ্টবক্র খুঁত দেহে বেড়ায় বয়ে,  
শরীর ভাঙ্গাচোরা তাতে আঁটখানি বাঁক, অষ্টবক্র বলে সবে দিত তাকে ডাক।


ইতিমধ্যে মিথিলায় রাজা জনকের সভায়, বন্দী নামক এক ব্রাহ্মণের হইলো উদয়...  
আসলে সে ব্রাহ্মণ রুপী বরুণ নন্দন। সলিলে পিতার যজ্ঞ করিতে নিরীক্ষণ...
পিতার আদেশ সে আসিয়া ধরায়, বেদশাস্ত্রে লড়িবারে ইচ্ছা জানায়;
পণ রাখে তর্কে হারের ফলে, পরাজিত দিবে প্রাণ ডুবিয়া জলে।
পিতার যজ্ঞাদি সমাধান কল্পে, বন্দী রচে এই ছল চেষ্টার স্বল্পে।  
এত কথা নাহি জানে বালক অষ্টবক্র, পিতামহ পিতা জেনে তার শৈশব আবর্ত!
এককালে মায়ের থেকে সকল শুনিয়া, বালক অষ্টাবক্র অনুমতি চাহিয়া
যাইলো জনকপুরি পিতার খোঁজে, দৈবের পরিহাস সে মনেতে বোঝে।  
দাঁড়াইয়া সম্মুখে জনক রাজের, নষ্ট না করে সে সময় কাজের,  
আহ্বান জানাইলো সে বন্দীকে সভায়, বালকের স্পর্ধা দেখে হাসিল সবাই।


দুঃখিত অষ্টবক্র স্লেশাঘাত হানে, সভাসদ বিস্ময়ে চাহে রাজপানে!
জনক বালকেরে কারণ জিজ্ঞাসিলে; মানব চরিত্র বালক বর্ণনা করিলে
মাথা নত করে যত জ্ঞানি গুনিজন, সত্য বুঝিয়া লজ্জিত হইলো রাজন।  
আদর করিয়া তারে দিলো সিংহাসন, বালকের পদতলে রাজা লভিলো আসন।
যুক্তি-তর্কে-বেদ-শাস্ত্রে হারাইয়া বন্দীরে, চাহিল সে সমবিচার পরাজিতের তরে,
বন্দী কহে অষ্টবক্রে নমিয়া রাজনে, আসিবে ফিরিয়া কহোড়, আর বিপ্র গণে
গিয়াছিল যারা সাগররের জলে, রক্ষিতে দৈব লাজ দৈবের ছলে!
জনক নমিয়া বালকে মাথায় রাখেন, গুরু নাম অষ্টবক্র মনেতে মানেন।
বালক ও বন্দীতে যত কথোপকথন, লিখিয়া রাখেন রাজা করিয়া যতন...
এ কথার লড়াই অষ্টবক্রগীতা জ্ঞান, অধ্যয়নে লভে মানব মুক্ত, পরম আত্মজ্ঞান।