"রাজার মত সাজাও দেখি আমায় একটিবার,
রাজা সাজতে বড্ড ইচ্ছে করে"...


কানে মোতির দুল,
আর গলায় চন্দ্রহার,
বাজুবন্ধ হাতে, দশটা আংটি সাথে...
সলমা জড়ির তৈরি চাদর, আর
মখমলের ধুতির সাথে দিও মোতির পাড়...
কোমর থেকে ঝুলিয়ে দিও হাতির দাঁতের খাপ,
তরোয়ালটা রাখব হাতেই যেন খোলা সাপ।
পায়ে মশমশ শব্দ করে চলা নাগড়া,
রেশম সুতোয় হবে গাঁথা ভুলো না যেন তা...


আর হ্যাঁ,
বেশ কিছু বড়ো রত্ন দেওয়া উঁচু মুকুট দিও মথায়...
ভীড়ের মধ্যে কষ্ট করে যেন খুঁজতে না হয় আমায়,
চুক্তিখানি রেখ মনে মন্ত্রী তুমি আমার...
সত্যটাকে গোপন রেখো তুমি, খাটো রাজার।


রাজার মত পাত্রমিত্র সাথে
আমি খেলব শুধু সকাল-বিকাল মাঠে,
হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে শুধু দুলব দোলনা, গাছে দড়ি বেঁধে...
রানীরা সব মাঠেরই ধার থেকে
রেঁধেই যাবে ভালোমন্দ খাবার,
একটাই তো রাজা আমি তাদের, কষ্ট কি আর এতে তাদের আবার!


যখন তারই মাঝে পুতুল ঘোড়ায় চেপে,
মন্ত্রী সেজে বলবে তুমি আমায়...
"মহারাজ, যুদ্ধু করতে হবে, ওঠো দেখি খেলাধুলো ছেড়ে"।
আমার তখন ভীষণ ঘুম পাবে,
খেলার ধকল সয়না সারাদিনের...
"শত্রু রাজা ঢুকে গেছে গড়ে? তোমরা তবে আছ কিসের তরে?
নিয়ম যাকিছু সবই করা আছে, অবহেলা সইব না কো কাজে"।


ঘুমের থেকে ক্লান্ত উঠে খেলা ধুলার মাঝে
এসব কথা ভাবার কি আর ইচ্ছে তখন জাগে?
কলম আছে, দোয়াত আছে, আছে লাঠিয়াল,
কামান আছে, গোলাও আছে, আছে তরোয়াল-
তবু চেয়ে আমার পানে; একি কলিকাল!
সবাই মিলে পারো না কি ধড়তে দেশের হাল?


আমার কিন্তু জেনো এখন ওজন অনেকখানি
বেশভূষা আর বহুমূল্য মুকুট খানির তরে,
তাই নড়াচড়ায় ধন্দ লাগে ভারি...
রাজবেশটা খসে যদি পড়ে!
ভীরের মধ্যে দেখতে পাবে, লক্ষ্যটা ঠিক রেখো
উঁচু মাচার থেকে কীসব বলছি সেসব শুনো;
অনেক কথাই খেলতে গিয়ে গুলিয়ে গেছে মনে,
শুধরে নিও সেসব কিছুই আমি বলার আগে...
রাখবে লিখে সেসব কথা আমার নিয়ম বলে।
খেলার মাঝে আবার যদি সুধাও তুমি এসে
রাজা আমি, রাগের মাথায় কোটাল ডাকব শেষে।
খেয়াল রাখো চতুর্দিকে, জাগো আনিমেষ,
কোনও কাজেই ভক্তি যে নেই দেখতে পাচ্ছি বেশ!
আবার যদি দেখো কোনও যুদ্ধুটুদ্ধু হবে
দেশের থেকে জোয়ান ডেকো, জান লড়িয়ে দেবে।


আমি রাজা, রাজমহলেই মানায় আমায় বেশ।
জান না তো ঘোরে মাথায় কত চিন্তা-রেশ!
"যাও এখন, জালিও না আর, খাটা-খাটনির মাঝে
খেলব কখন সময়টা যে গড়িয়ে গেলো সাঁঝে...
সাঁঝের পরে রাতের আঁধার আবার চোখে ঘুম...
রাজকার্যে বাধা প্রদান, যত সব নির্গুণ"।