বিবর্ণ দুপুরে শুভ্র কপোতীর মত তবু কিসের টানে সে এসেছিল,
ফোন দিয়ে বলেছিল-‘আমি ‘ভুবন প্রেয়সী’,
কেয়ারীর নিচে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি কোথায়?’
আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলাম-
‘...তুমি জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ হতাশার মোড়ে চলে এসো।’
__আমি ওগুলো চিনি না।
__তাইলে হোস্টেল গেইটের দিকে আস...
তারপর?
তারপর সন্ধানী ধবল বকের মত একটি কৌতুহুলী মুহূর্ত পার করে দিলাম।
খোলা ‘প্যারেড ময়দান’র ও__দিক থেকে উত্তরী হাওয়া এসে
যেন এক অচিন বীণ বাজিয়ে গেল কানে কানে,
সূর্যের আলোয় গাছের ছায়ারা যেন প্রফুল্ল চিত্তে উন্মাতাল নৃত্তে মাতোয়ারা
হৃদয় বেলাভূমিতে তখন অজানা প্রেমের চুপ চুপ শান্ত ঢেউ
ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার সমগ্র পৃথিবীকে।
হঠাৎ পিছনে দাঁড়িয়ে __সে অচেনা প্রেয়সী!
ঝরঝর করে বালির প্রাচীরের মতো নিমিশেইচুর্ণ-বিচ্ছুর্ণ হয়ে গেল অদেখার অদৃশ্য বাঁধ,
অবশেষে দেখা হল।
আমি কয়েক পলকে তাকে দেখে নিলাম, সেও হয়তো আমাকে...
তার মায়াবী চেহারা যেন মায়াজাল হয়ে
এক অস্পর্শী বন্ধনে আমাকে বন্দী করতে শুরু করলো,
তার হরিণী দু’টি চোখ যেন মন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই
আমার বিশাল পৃথিবীকে একটি ছোট্ট প্রাসাদ বানিয়ে দিল
আর তাতে ‘রাণী বিলকিস’র মত মহা সম্রাজ্ঞী সেজে বসে আছে সে।
মনে মনে অনুরণিত হতে লাগলো__
তুমি কি ‘সিংহল দ্বীপ’র রপসী রাজকন্যা আলাওলের ‘পদ্মাবতী’?
তুমি কি বঙ্কিমের ‘কপালকুণ্ডলা’ __চাঁদনী রাতে হৃদয় হরনী?
তুমি কি নজরুলের ‘গোপন প্রিয়া’? শিউলিমালার ‘শিউলি’?
তার স্ফটিক হাসি থেকে যেন ঝরে পড়ছিল অজস্র লাল-সাদা বেলি,
আমি বিস্মিত-বিভ্রান্ত দুটি চোখ দিয়ে আহরণ করে চলছি ঝরে পড়া সেই ফুল।
সে কোকিলকণ্ঠী কোমল স¦রে আমাকে বলেছিল- ‘কেমন আছেন?’
__এই তো ভালো, তোমার...
__এই তো আছি...আরো কত কথা!
একে অপরের ব্যাপারে ‘সূচনা-সমাপ্তি’ জেনে নিলাম।
তার প্রতিটি কথা যেন প্রেমের সুধা মিশানো সুতীক্ষ্ণ বান
একে একে বিঁধে যাচ্ছিল আমার হৃদয়ে, ব্যাকুল চিত্ত যেন জ্যৈষ্ঠের তৃষিত প্রান্তর।
অতৃপ্তির তীরহীন সাগরে আমাকে ডুবিয়ে
উত্তুরে হাওয়ার অনুকূলে পাল তোলা তরীর মতো সে চলে গেল দূরে
ঐ দূরে...
তখনো ছিল অচেনা প্রিয়ার অজানা প্রেমের কিছুটা আবেশ...


    (১৫/০১/২০১৪