(ফেসবুকে দুইজন মানুষের কথোপকথন নিয়ে লেখা একটি কবিতায় তুমি আমি। কবিতার সব পঙক্তি জীবন্ত। প্রতিদিনের কথোপকথন নিয়ে পর্ব ভিত্তিক এই লেখা আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নারী ও পুরুষের মাঝে কাব্যকথায় এই কথোপকথন। এই পাশে আছি আমি, ঐ পাশে আছেন কলকাতার কবি মোনালিসা।)


আমি:
সমস্ত শরীরে তোমার কোলাহল গেছে মিশে,
ত্রিমাত্রিক নিশিতে অভিলাষী জ্যোৎস্নায় কিছু চাই,
দিতে পারো নির্ঘুম দুটো শিকারি চোখ,
কিংবা গোপন কর আমার কিছুটা নিঃশ্বাস।
আরও দিতে পারো সন্ধায় গোধূলি মাখা নিপীড়ন।


কবি মোনালিসা :
তুমিও দিতে পারো দুঃসহ জ্বালার,
অভিপ্রায় ঘটিত যাতনাময় দিনরাত্রির কাব্য,
উপহারে দোষ দেবো না।
নষ্ট চাঁদ বাঁকা চোখে হাসে কারুকার্যময় হাসি।
এই তো সেদিন কিভাবে কেটে গেল দিনযাপনের ঘ্রাণ।
মূত হয়ে ওঠে প্রতীকি প্রেম।


আমি:
এই ভাবে প্রেম যাবে আর কতোকাল,
আর কতটুকু হলে পরিপূর্ণ জীবন?
মিথ্যে নয়, ওগো মিথ্যে নয়,
তোমার হরিণ চোখে নেমে এসেছে জ্যোৎস্না
চাঁদের পরাজয়ে বেসামাল নিশ্চুপ ঠোঁটের কোণ।


আমাদের সারাটি দিনরাত্রি ভেঙে ভেঙে
মিলনের শেষে ক্লান্ত জলবিন্দু আবারো অপেক্ষায়,
শান্ত বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে ভাষাহীন ছন্দে,
ওরা খেলতে শিখে গেছে তোমার আমার ছায়ায়।


তোমার আমার করতল ছুঁয়ে বিশ্বাসী প্রলয়,
কাঁকন বাজে কতোটা তপ্ত সুখে!
প্রেম চিনতে চিনতে বর্ষণ ফুরাবে ব্যস্ত আকাশের নিচে,
অন্তরের মোহন বাঁশিতে গন্তব্যহীন সুর,
সতীর্থ স্রোত জেগেছে আজ উত্তাল তৃষ্ণার্ত বুকে।


ভালোবাসা আছে তাই,
আজো জেগে আছে দুটো চোখ,
ভালোবাসা আছে তাই,
শত কালবৈশাখীতেও মেঘ ঢেকেছে শোক।


কবি মোনালিসা :
ভালোবাসা আছে তাই
তুমি আমি বেচে আছি অনেকটাকাল ।
এখন তোমার অঙ্গীকারে মন ভরে যায়।
তবুও কি বিস্মৃত হওয়া যায়.....
কেউ কথা রাখে না।
অন্তত রাখতে চায় না।
যদিও কখন বা মনে পড়ে


আমি:
তোমার আশকারা পেয়েছে আমার হস্ত যুগল
ইচ্ছে করে ঘূর্ণির মতো ধেয়ে যায় বার বার,
অন্ধের মতো হাতড়ে খুঁজি,
তুমি আমি একাকার হই,
গোলাপে গোলাপে,পাপড়ির ঘ্রাণে।
এতো চুপ কেন?
তুমি কি বুঝনা আমার শরীরের কাব্য?


কবি মোনালিসা :
বুঝতে চেয়ে বার বার পিছিয়েছি এ ঘোর ঘনঘোরে
দিনযাপনের বিষাদলগ্নে ক্লান্তিতে মূহ্যমান
সেদিন ছিল শ্রাবণ মাস।
ধারায় ধারায় সিক্ত বিছানা বালিশ
তক্তোপোশ স্মৃতির অতলে ডুবে যাওয়া তারা মাস কাল
বছরের পর বছর
আজো কি আমি একা নই প্রিয়?
আজো কারো কাব্যে উচ্চারিত হই আমি।
সেদিন কত দূর ।
অন্তিমলগ্নে বিদায়সম্ভাষণে
আসি ছোট্ট শব্দে কি শ্লেষ!
রোদনভরা বাক্য !


আমি:
এতোদিন একা একা খেলেছি পরাজিত প্রেম,
কঠিন পাথর শুনিয়েছে লাল নীল সন্ধ্যার গল্প,
তোমার গান বুকে নিয়ে একলা ফিরেছি কতোদিন!
ধূপের মেলায় পার করেছি সোনালী একলা প্রহর।


কবি মোনালিসা :
একটা মেয়ে যার সত্যই একটা মন ছিল।
যার পায়ে ছিল সরষে।
যার পায়ে ফুল ফোটায় অনুর্বর ভূমি।
যার দুটি ইচ্ছে ডানা ছিল...
যার সত্যি কথা বলতে একটুও বুক কাঁপত না।
স্বপ্ন দেখত দুর্বার
প্রেমের কবিতায় মুখ গুজে কাটত প্রহর।
সেই ক্ষণে প্রেম দিয়েছিলে তুমি।


আমি:
প্রহর! সোনালি প্রহর, রুপালিপ্রহর
আজো প্রহর খুজে বেড়ায় তোমার লাল টিপে,
কখনও তোমার গোধুলি রাঙা ঠোটে,
চিবুকের নিজর্নতায়,


কবি মোনালিসা :
যেদিন তোমার অবাধ্য প্রেমকথায়....
উজ্জীবিত আমি প্রিয় ভুলে যাই নিয়মের বেড়াজাল।
খুজে ফিরি জীবনের আস্বাদ।
জীবনের তাল, লয়, ছন্দ
আজো খুঁজে তোমার উষ্ণতা।


সান্ধ্য বিকেলের আড্ডায়।
তমসাঘন রাত্রির বেড়াজাল ভেঙ্গে নতুন ভোরে......
বেহিসেবি আমি।


আমি:
সকাল দুপুর বিকাল নিশ্চুপ সন্ধ্যা
তুমি বয়ে চলো শরীরময়।
আমার বনে হন্যে হয়ে ঘোরে তোমার শ্বাস প্রশ্বাস,
আমি তোমার কবি হতে চেয়েছি,
চেয়েছি তুমি কাব্য হও,
তোমার বুকে ফুলেল আঁচড় কেটে লিখব
প্রথম পুরুষ হওয়ার গল্প।


যে কাব্য তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি
আজো অপেক্ষা করি তোমার সীমান্তে দাঁড়িয়ে।


কবি মোনালিসা :
আমি আকাশ হব।
আমি সহস্র বারিধারায় স্নাত গাছ।
অজস্র ভালোবাসায় লিখব এক নতুন ইতিহাস।
আমি নদী হবো মুক্ত বহমান।
সমস্ত ক্লান্তি গ্লাণির পলি নিয়ে,গড়ব.....
তোমার অবয়ব অসমান।
আমি তোমার কবিতা হব
তোমার বুকের অনুচ্চারিত শব্দ।
তোমার নিজস্বে ছন্দে ঠাসা কথামালায় রব।


আমি:
এইবার এলে, থামব না,
অধর ছুঁয়ে পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে,
যে ভালোবাসা, প্রথম বেসেছিলে,
বুকের মাঝে পুষ্পবানে জেগে তুলব
আমার পৌরষ।


কবি মোনালিসা :
আমি ঘটমান বর্তমান,
আমি আবার মানুষ হব নিরভেজাল দায়িত্ববান।
আমারও কিছু স্বপ্ন আছে
ইচ্ছের ও কিছু দাপট আছে সুতীব্র বাসনা।


আমি:
আমার বেলা অবেলায় যতটা এলোমেলো পথ,
যেতে যেতে নিভে গেল অস্তপারের সন্ধ্যাতারা,
সূর্য ডোবার গোপন বিরহে কেঁদে উঠে করাল দুপুর,
রাষ্ট্র জেনেছে নির্মমতায়, নাগরিক স্তব্ধে নির্বাক শহর।


কবি মোনালিসা :
ভাবনারা আসে একলা কথা বলে।
তারা বড় নিবিড়। ক্লান্ত ঘন রাত্রির কথা
খুনসুটিতে ভরা নদীর গোপন কথা।
দু:খভরা।হয় নাকো শেষ।
দিন যদি হয় শেষ র ইবে কি তার রেশ।
ভাবনারা একলা কথা বলে নিজস্ব নিয়মে চলে।


আমি:
দিন আমার গেয়ে যায় অবেলার গান,
শুন্যতা আমার, তোমার শাড়ির আচলে লুকায়,
তুমি একলা নও, এই আমি তোমার আচলে,
আর লুকাবো না,
আমি হব তোমার কাজল রেখা চোখ।
তোমার জলে স্নান হবে, শুদ্ধ হব,
তোমার গানে ছন্দ হবে, রুদ্ধ হব।


কবি মোনালিসা :
কালের খেয়ালে খেয়ালি স্বপ্ন সবকিছু বাধাধরা ।
নিয়মে বন্দী।
তবুও কি তুমি দেবে ধরা আপন খেয়ালে।


আমি:
আজ ঘুম নেই চোখে,
তাই স্বপ্নরা পালিয়ে বেড়ায়,
আমি ভিজিয়ে রেখেছি ভাবনার দরজা,
একটু কড়া নেড়ে দেখ,
আমাকে পেতে পার আপন খেয়ালে।
খুব ইচ্ছে হয় দুই হাত ছুঁই
খুব ইচ্ছে হয় ব্যবধান শুন্য করি,
তুমি কোন স্বপনের দ্বারে,
কেন আড়াল কর নিজেকে,
আঁচল পেতে দাও,
ওখানেই বসত হবে আমার।


কবি মোনালিসা :
মালায় গাথা যে ফুলগুলো দিয়েছিলে একদিন
আজ তা শুকিয়ে আমসি এর পর কি হবে নতুন ভোর?


আমি:
তুমি আমি প্রতিদিন নতুন ভোর
নতুন আকাশ, নতুন মেঘ।
নব ধারা, নব জল।
আমাদের প্রেম প্রতিদিন নতুন হয়,
প্রতিদিন ইচ্ছে করে তোমাকে প্রেম নিবেদন করি।
তুমি আজ বুঝতে পারো, ভালবাসা কি?
উত্তরের হাওয়ায় কালে ভাদ্রে গোলাপ হয়,
চুল শুকাও ভোরের আলোয় গোলাপ পরিয়ে দেব।


কবি মোনালিসা :
আমি জানি কাব্য করে,
আর কাটবে না দিন কাল।
তুমি আবার আসবে ফিরে এই তীরে,
যেথায় নৌকাটি ঠিক বাধা আছে,
ভেসে যায়নি ভরা জোয়ারে


ভাবনারা একলা কথা বলে।
শিশির ভেজা সকালবেলায় । প্রলয়দোলায়।


আমি:
প্রনয় হোক শত প্রলয়ের মাঝে,
জানি, রাঙাবে দুই ঠোট,
সকাল বেলার সাজে।
আমার সকাল,তোমার সকাল
দুই হৃদয়ের মাঝে।