আমি কেবল মাত্র একটি কবিতা বলার মত সময় পেয়েছিলাম;
শেষ হবার আগে সে অনুষ্ঠান। প্রথম থেকে থাকতে পারিনি;
তাও এতটুকু খারাপ হয় নি আমার মন।  
আমার তাতে দোষ ছিল না একবিন্দু কারণ;
আমি তো সময় মতই উপস্থিত হয়েছিলাম।
দোষ আমার কপালেই লেখা ছিল তাই কপাল কেই শুধু
দুষছিলাম।


কবিতার বই; রঙিন মোড়কে তার উদ্বোধন; আর তাতে আমার দু তিনেক লেখা;
এভাবে যে হবে ধোকা; ভাবতে পারে নি এই ধেড়ে খোকা।
আগের দিন থেকেই তাই ছিল প্রস্তুতি; জামাকাপড় থেকে,
হাতের পেন্ডিং পরে থাকা কিছু কাজ দুটি, সেগুলি বেড়িয়ে পড়বার আগেই
সেরে নিয়ে তা থেকে মুক্তি।
তাও করে নিয়েছিলাম সময় মতই; দিন তিনেক থাকবো না শহরে,
পুরোই দিয়েছিলাম ভক্তি।


সময় মতই ট্রেন আসবার প্রায় একঘন্টা আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম স্টেশনে,
প্রতিজ্ঞা ছিল ঠিক এভাবেই এবার পৌঁছে যেতে হবেই ডেসটিনেশনে।
ব্রেক জার্নি করতে হবে কারণ এভাবেই আমি দু'কাজ একসাথে সেরে নিতে ভালোবাসি;
তাই রামপুরহাটে গেলাম নেমে মা তারার বাজাতে বাঁশি;
ভোর চারটাতেই তারাপীঠের অটো ধরে নিলাম;
পূজোও হয়ে গেল সারে সাতটার মধ্যে;
প্রসাদ নিলাম বেশি করে কারণ বিলাতে হবে আর সকল
কবিগণের সান্নিধ্যে;


তারপর লোকাল ট্রেনে; বেলা তিনটার সময় পৌঁছে শিয়ালদহ ইস্টিশনে;
হোটেলের পানে গেলাম হন হনে।
এরই মাঝে আমন্ত্রক কবিকেও ফোন করতে ভুলি নাই;
কারণ সেই তো দূর সে স্থলে ছিল আমার কানাই;
তিনি বলেন, কলেজ স্ট্রিটে এসে তাকে ফোন করতে,
ব্যাস তালেই হয়ে যাবে কেল্লা ফতে।


সময় মত পৌঁছে কী যে খুশি ছিল মন কিন্তু কিসমতের ফের; ডিটেনশন!
ফ্রেস হয়ে কোট প্যান্ট লাগিয়ে যেই না গেছি কলেজ স্ট্রিটে;
মেজাজটা হয়ে গেল খিটমিটে। আয়োজক কবিকে ফোন লাগালেই বলছে;
তিনি আউট অফ রিচ; ঘন্টা ভর তাকে ফোন লাগালেও একই খিচ খিচ!


এতক্ষণে কম তো আর যায় নাই ধন! তাই অগত্যা মধুসূদন;
হাটতে থাকি হন হন। কলেজ স্ট্রিটে আর তার আগে পিছে; কী যে সরনীর নাম!
এখন ঠিক মনে পড়ছে না তবে মনে মনে রাম নাম নিচ্ছিলাম।


প্রায় দু ঘন্টা , বড় খারাপ হয়ে যায় মনটা। মনকে বোঝাই,
আমি সেদিন মুসলমানের বাড়িতে তাদের পরিবারের সাথে বসে;
গরুর মাংস দিয়ে খেয়েছিলাম; আর ফোনে তাকে তা জানিয়েছিলাম;
হইছে কাম!হয়তো বা তাই বাদ দিয়ে দিয়েছে আমার নাম।
যাই হোক তারাপীঠে তো পূজা দেওয়া গেল; এবার মন তাই এসব ভোলো।


আশা ছেড়ে যখন নির্বিকার চিত্তে কলেজ স্ট্রিট গরু খোঁজা করে খুঁজে হতোদ্যম;
মানে প্রায় সাতটার দিকে হোটেলে ফিরে যাচ্ছিলাম;
বিধি ভাঙে; দিল সে আমায় কিছু দাম;
ফোনে দুম দাম; ফোন ধরলে বলেন; আপনি কোথায়;
আমাদের অনুষ্ঠান শেষ প্রায়;
আমি বলি আমার কী বলো অন্যায়; হায় হায়!
বলে, তাড়াতাড়ি আসুন আর কবিতাটা ঝেড়ে কাশুন;
কাশুন না কাসুন্দি যাই হোক না কেন!
তাতেই আমি খুশি। অনেক বেশি।
গেলাম, আর কবিতা ফটাফট পাঠ করলাম;
আর বই ও খাবারের প্যাকেট পেলাম।
মন ভরে গেলো তাদের সাথে আলাপে, এ কথা সে কথা
বাক্যালাপে।
কেন আর একা একা কলকাতা হোটেলে থাকা!
আমায় কী কেটেছে কোনও কাল সাপে।


তাই হোটেল ছেড়ে স্টেশনের দিকে ছুটে গেলাম শন শন;
কেবল মাত্র একটি কবিতা বলার মত সময় পেয়েছিলাম;
শেষ হবার আগে সে অনুষ্ঠান।
প্রথম থেকে থাকতে পারিনি; তাও
এতটুকু খারাপ হয় নি আমার
মন।