Sanjay Karmakar
1 min  ·
জীবনমুখী ধারাবাহিক,"বীর অষ্টম খন্ড"
- সঞ্জয় কর্মকার
Sanjay Karmakar
JtSusptuf cusoinnsooswgrsedS  ·
(অষ্টম  খন্ডটি পাঠ করবার অনুরোধ রইলো, বাকি সাতটি খন্ড আমার প্রকাশনার সুবিধায় প্রকাশ দিলাম। দয়া করে একটু স্ক্রল করে নেবেন, একটি বিষয় হটাত করে প্রথমে প্রকাশ দিলে তা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পরে তাই শেষ খন্ড শেষেই প্রকাশ দিলাম।)
"বীর-প্রথম খন্ড"


কত শত স্মৃতি ধরা; জেগে ওঠে মনে
বেদনার বালু চরে ব্যথা তারি সনে।
আনমনে গেয়ে চলি বেদনার-ই কলি
আহত সে কোকোনদে আধো আধো বুলি।


প্রেম তারি মোহনাতে ভেবে চলি বেলা
কুসুমো কাননে তার; আলোকের খেলা।
নীড়ে তারি নমনেতে দুখে বহে কাল
হারিয়ে সে ধন তারে ভগ্ন সে ভাল।


চাওয়া আর পাওয়া তার হিসেবেতে মাতি
বিষাদে বিরহ গানে কাটে দিবা রাতি;
দিন তায় ঢলে নীড় গগনেতে তারি
বিজিত সে দুখ সনে খেলাগড় গড়ি।


গড়নে সে গিরি সম উঁচু তারি চূড়া
স্বপ্ন ও আশা তারি চারিধারে ঘেরা।
কূহকের মায়াজালে বাঁধা স্নেহ নীড়
বাহিত সে নদ তাহে বহিতেছি বীর।


"বীর দ্বিতীয় খন্ড"


দিন যায় মন ধায় সুখ তারি পানে
বিষাদের ছায়া ঘেরে ব্যথা জাগে প্রাণে।
প্রশমণে নাই হৃদ শত কত চাওয়া
চাতকের আঁখি ধরা খরো তারি হাওয়া।


ধন তারি মোহে দিন বাসন্তী কাঁদে
চরা জেগে ওঠে নদ শত অবসাদে।
অপত্য সেবা তারি, দিন যায় ক্ষণ
তাপিত সে ধরা তাহে খল আলাপন।


লালিত্যে ঘনঘোর ললনা সে পটে
মহীয়ান উষসী সে স্বরূপেতে মাতে
অটবি সে ঘন ঘোর নাহি তল তায়
ধারা তারি বরিষণে সজলো সে বায়।


ক্ষনপ্রভা বিজুলি; সুখ তারি নীড় ছায়
দুখ শত ঘায়ে রবে; ঘন ঘন চমকায়।
তরঙ্গ উতরোল আলোড়ন তাহে নীড়
বসুধায় নিবারিতে রণ তাপে সদা বীর।


"বীর তৃতীয় খন্ড"


ধূ ধূ মরু বালুকার তুফানেতে মন উড়ে
ছায়া নীপ নাই তরু বিজনো সে প্রান্তরে।
মরীচিকা গ্রাসে মন উষ্ণ সে বালুকায়
শশীপ্রভা নাই তাহে রুক্ষ সে বায়ু হায়।


করালো সে শিখা তাহে জতু তারি সিঞ্চন
আশে তারি ধন মোহে অনলেতে গ্রাসে মন।
মোহ আর রতি কামে সম্ভোগে কিনারেতে
কুহেলীর পিছে ছুটে হতাশাতে মন মাতে।


প্রপঞ্চ প্রণিধানে দ্বিপদেতে পশুবৎ
লুক্কায়িত ছলনাতে হৃদয়েতে করে ক্ষত।
মহামতি মূঢ়তায় বিগ্রহে নিধনেতে
সদা মন ধ্যান তারি ক্ষতি তারি সাধনেতে।


অনলেতে ঘেরা তাহে ধন মন তন কায়
জলধিত গগনেতে বিজুলি সে চমকায়।
থরো থরো কাঁপে হরি হেরি তরি দুই তীর
রণ ব্রতে মেতে হত নিত্য সে হয় বীর।


'বীর', চতুর্থ খন্ড


বীর তারি মানসেতে পটে আসে শৈশব
নানা রঙে বিকশিত নব নব বৈভব।
ছায়া তার স্নেহ নীড়ে বিদুষীনি মাতাময়ী
নিরালাতে আঁখি ধারা কপোলেতে যায় বহি।


স্মৃতি পটে আলো ধায় নিখিলেতে ঝলকেতে
বেদনার বালুচরে আঁখি তারা লহমাতে।
কাল তাহে করালেতে মরু জাগে মন তায়
রিক্ত সে ধরা সনে পশু সম ক্রূরতায়।


খান খান হয় তারি স্বপ্ন সে মদিরায়
কুহেলি সে ঘন কালো ত্বরিতে সে খরো বায়।
প্রবাহিত গরলেতে যুযুধান রণ তাহে
বীর তারি অসি তার দৃঢ়তাহে আপনায়ে।


হাহাকার ধ্বনি রবে নীদাঘেতে ক্ষণ বহে
ক্ষত তারি প্রদাহেতে অনুনাদে বিষ তাহে।
বিষাক্ত হলাহলে শূর বীরে গ্রাসে মন
চপলো সে স্মৃতি ছায়ে বেদনার আলাপন।


"বীর পঞ্চম খন্ড"


স্রোত তারি জহরেতে নাগপাশে হৃদ তার
তমানিশা ঘেরে বীর সাথী তারি দৃঢ়তার।
ক্ষণে ক্ষণে রুধিরেতে লিপ্ত সে হয় মন
বিবিধেতে বিচারেতে ন্যায় নীতি আরাধন।


শত আশা বধ তাহে মানবিক হৃদে হায়
ক্ষতে তারি প্রদাহেতে সত্য সে বীর গায়।
নিরালাতে নির্জনে ব্যথা সেথা বীজ বোনে
রোদনেতে নাহি মন হেতু তারি বিষ বাণে।


একে একে দূরে বায় বীর তারি স্বজনায়
শূন্য সে আঁখি তারা কুপিত সে ছলনায়।
রণ ভেরী বাজনাতে শতধায় ওঠে মেতে
স্থিতধী সে বীর সেতো;প্রেম তারি মালা গাথে।


অরি তারে বাঁধে প্রাণ হা হা রবে দুর্জনে
ছিন্ন সে হিয়া তার খল-তারি আরাধনে।
জালিকা সে দৃঢ় তারি কূট সেথা ক্রন্দন
বিদ্ধ সে তূণে বীর রণ সাজে হিতে মন।


"বীর ষষ্ট খন্ড"


ছলকে সে হৃদয়েতে ক্রোধ তাহে বাঁধে মন
দুন্দুভি বাজে তায় বহ্ন্বি সে প্রায় প্রাণ।
দিশারি সে পূব তারি; বিভ্রমে গতি ধায়
বিনাসিতে খরো বায়ু; অসূয়া সে বাঁধে তায়।


ক্রোধ-বাড়ি অগ্নি ও; পণ তারি অঙ্গনে
ভীষ্ম সে রণ চায় প্রতাপের আগমনে।
প্রণিপাতে নাই হৃদ প্রতিশোধ চায় তারি
বীর তারি দৃঢ়তায় হাতে লয় তরোবারি।


জিঘাংসা বোধে মন; অশ্বিনী বাসনাতে
পরা তারি তেজ অতি ধ্বংসেতে মন মাতে।
বিদ্রোহে পল তারি শব তারি সাধনায়
উষ্মতা গ্রাসে মন; নয়নেতে বারি ধায়।


শত প্রভা হয় লীন ত্বরিতে সে ভুবনেতে
স্নেহ তারি নাগপাশ পায় গতি স্খলনেতে।
বোধ আর নিরধের সংঘাতে নীড়ে তার
বীর তাহে পল গোনে; কাল তারি যাতনার।


(অশ্বিনী :ঘোটকীরূপ ধারিণী সূর্যের পত্নী। এর আরেক নাম সংজ্ঞা। সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীর থেকে নিজরূপ ‘ছায়া’ নাম্নী এক নারীকে বের করে তাকে প্রতিনিধিরূপে রেখে সংজ্ঞা পিত্রালয়ে পলায়ন করেন। তার পিতা বিশ্বকর্মা মেয়ের এহেন আচরণে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন। পতিসেবা ত্যাগ করে অতি অন্যায় করেছে, সেজন্যে তার মুখ দেখবেন না বলে হুমকি দেন। সংজ্ঞা অভিমান করেন। পিতার বসতবাটি ত্যাগ করে উত্তর কুরুবর্ষে যান ও ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন। এদিকে সূর্য যোগবলে সকল কথা জানতে পারেন। তখন তিনিও অশ্বের রূপ ধারণ করে ঐ স্থানে আসেন। সেখানে কিছুদিন অশ্বিনীর সাথে থাকায় তার গর্ভে সূর্যের ঔরসে অশ্বরূপী যমজ দুই পুত্রসন্তান জন্মে। এই দুই পুত্র অশ্বিনীকুমার নামে পরিচিত হন। তারা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে স্বর্গে চিকিৎসা করায় “স্বর্গবৈদ্য” উপাধি পান। তারা মাদ্রীসুত নকুল ও সহদেবের জনক।)


"বীর-সপ্তম খন্ড"
.
প্রবাহিত গতিধারা উস্মা ও তেজ তায়
নিবারিতে কেহ নাহি বীর তারি বসুধায়।
ঘন বায়ু ক্ষণে ক্ষণে ঘূর্ণিত পাক তারি
ধূমায়িত ফেনা রাজি গতি ধায় হঠকারী।


স্থিতধী সে কাঞ্চনে; লাভা স্রোতে উদগত
রক্তিম আভা তারি অবনত তথাগত।
জতু তারি জ্বলনেতে ক্রোধ ছোঁয় আসমান
পতনেতে অসূয়া সে ধ্বংসের গাহে গান।


দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের আলো ছায় করে খেলা
তারি মাঝে ক্রন্দসী প্রহেলিকা দেয় দোলা।
নীড় তারি নীলাকাশে স্মৃতি ঘেরে বীর তারে
থর থর কাঁপে হিয়া নাহি মন হরিবারে।


গূঢ়তায় মন ধায় নাহি মতি দ্বন্দ্বে
পীড়নেতে জ্বালা তারি বাহিত সে স্কন্ধে।
তরঙ্গ আলোড়ন উঁচু নিচু স্রোত তায়
শুচি কভূ কভু খাদ চিড় ধরে দৃঢ়তায়।


স্থিতধী; স্থিরবুদ্ধি সম্পন্ন
তথাগত:  তথা অর্থাৎ পরম অবস্থা গত অর্থাৎ প্রাপ্ত; নির্বাণ প্রাপ্ত ব্যক্তি।


"বীর অষ্টম খন্ড"


আসুরিক বলে তার ভাটা চলে উজানেতে
অশ্রু সে কমলেতে ক্রোধ তারি নিবারিতে।
বীরতার বাহকেতে বারি ঝরে বেদনার
চুর চুর হয় হৃদ; রোল উঠে কান্নার।


ন্যায় নীতে অবনীতে দোলাচলে বহে পল
ত্যাগ ব্রতে উপনীত আনীত সে হয় কাল।
উপশম হয় বীরে উস্ম সে ক্রোধ বারি
তিতিক্ষা সাধনেতে স্খলিত সে তরোবারি।


ভবলোকে আরোধায় মন ধায় সাত্ত্বিক
রজ তম পরিহারে আলোকিত হয় দিক।
লহু স্রোতে বহু শোকে প্রাজ্ঞ সে বীর তায়
ক্ষমা তারি ন্যায় বোধে ক্ষমে সবে স্বজনায়।


দীপ্তি ও প্রভা তারি জ্যোতি তারি নীলিমায়
কৃচ্ছ্রতা সাধনতে মননেতে গতি ধায়।
শূর বীরে গ্রাসিত সে সাত্বিক বোধদয়ে
উন্মেষে ঘটা তাহে সুরো তাল বাজে লয়ে।


সত্ব শব্দের অর্থ হলো ধর্মীয় জ্ঞানের প্রকাশ এবং সাত্ত্বিক শব্দের মানে হলো ধর্ম জ্ঞানী। সত্ত্ব শব্দটির রুট বা মূল হলো সৎ এবং সৎ শব্দের অর্থ হলো সাধু। অর্থাৎ সত্ত্ব বা সাত্ত্বিক বলতে সর্বদায় মহৎ বা উন্নত জ্ঞানসম্পন্ন উপকারী ভালো কিছুকে বোঝায়। যখন কোনো ব্যক্তি প্রতিটি পরস্থিতিতে ধর্ম, সত্য ও ন্যায়ের বিচার করে আচরণ ক’রে থাকে, তখন তাকে সাত্ত্বিক এবং তার জীবনাচরণকে সাত্ত্বিক জীবন বলা হয়।


তমঃ শব্দের অর্থ হলো অন্ধকার এবং তমঃ থেকেই তামসিক শব্দের উৎপত্তি। ভালো মন্দের বিচার ব্যতীত জীবন নির্বাহ করা অথবা কারো সকল আদেশকে বিনা দ্বিধায় পালন করাকে তামসিক আচরণ বলা হয়। অন্যভাবে, কেবল শারীরিক চাহিদা অর্থাৎ ক্ষুধা ও যৌনতার চাহিদাকে পূর্ণ করার জন্য যখন কেউ জীবন কাটায়, তখন তা তামসিক আচরণ, ইতর প্রাণীরা সাধারণত স্বভাববশতই এই ধরণের জীবন কাটায় বা কাটাতে বাধ্য হয়।


রজঃ শব্দ থেকে উৎপত্তি ‘রাজসিক’ শব্দটির। সত্ত্বঃ মানে এক কথায় ভালো এবং তমঃ মানে এক কথায় খারাপ, এই দুটো বিষয় আমরা অনেকেই অল্প পরিসরে সহজে বুঝলেও, রজঃ শব্দের সঠিক মানে কী, তা অনেকেই জানি না এবং এজন্যই বুঝতে পারি না যে রজঃ থেকে উৎপন্ন ‘রাজসিক’ শব্দটির মধ্যে আসলে খারাপ কী আছে বা ‘রাজসিক’ শব্দ দ্বারা যদি রাজকীয় কিছুও বোঝায়, তাহলেই বা এর মধ্যে খারাপ কী ? আর রাজসিক শব্দের মধ্যে যদি খারাপ কিছু না থাকে, তাহলে একে সত্ত্বঃ গুনের পরেই বা স্থান দেওয়া হলো কেনো ? পুরোটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ, শুধু মাত্র রজঃ শব্দের সঠিক অর্থ না জানার জন্য।
রজঃ শব্দের অর্থ হলো অহঙ্কার বা গর্ব। রজোগুনী ব্যক্তির মধ্যে ধর্ম বা সত্যের জ্ঞান থাকে, কিন্তু শরীর ও মন বাসনার দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং অহঙ্কার পূর্ণ মন নিয়ে বেঁচে থাকে।


সংক্ষেপে বলতে গেলে- সত্ত্ব মানে ধর্ম জ্ঞান, রজঃ মানে অহঙ্কার এবং তমঃ মানে অন্ধকার। এখন এই তিনটি শব্দ নিয়ে এক সাথে ভাবুন, সমস্ত বিষয়টা আপনার সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর তা বুঝতে না পারলে আমার কবিতার মানে কিছুই বোঝা সম্ভব নহে। অনেক দুখ ব্যথা বেদনা সইতে গিয়ে যে প্রজ্ঞ ব্যাক্তি একদা রণ দিতে চেয়েছিল প্রতিশোধ পরায়ণতায় একসময় সাত্বিক গুণের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অবশ্যই জ্ঞান দ্বারা প্রাপ্ত (কবিতাটির প্রতিটি অধ্যায় বিশ্লেষণ করে দেবো কবিতার পাতায়ই পরের অন্য কোনও সিরিজে, ইচ্ছা রইল) ক্ষমা , দয়া বশত সে রণ পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসে মন  দিল)। ইহাই মোক্ষ লাভের প্রথম চরণ। আর কয়েকটি খন্ডে চেষ্টা করবো নির্বান প্রাপ্তি অবধি, ইচ্ছা রইল। ধন্যবাদ আর শুভকামনা।