প্রিয় কবি লক্ষ্ণণ ভান্ডারী মহাশয়ের আজ প্রকাশিত "অন্ধজনে দেহ আলো" কবিতাটির আলোচনা।
তার লেখাটি এইরূপঃ


দেখিনু সেদিন অফিস যাওয়ার পথে,
ছোট খুকি এক মাগিছে ভিক্ষা বাটি ধরে হস্তেতে।
একটি পয়সা দাও গো বাবু সারাদিন খাইনি কিছু,
শত ছিন্ন তার হাত কাটা ফ্রক লজ্জায় মাথা নীচু।
দুই চক্ষু ভরিয়া আসিল জলে,
এমনি করিয়া ভিক্ষা চায় ওরা সহস্র জনতার কোলাহলে।
রাজপথা কত ছুটিছে বাইক, বাস মোটর চলিছে জোরে,
ট্যাক্সি থেকে নামি মেমসাব তারে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে,
মুদ্রা ক'টি তার বাটিতে নাই আর, পথে গড়াগড়ি খায়,
কপাল কাটিয়া, রুধির ঝরিছে, বহিছে অঝোর ধারায়।
ট্যাক্সিতে চরে মেমসাব এবার তার গাড়িতে স্টার্ট দেয়,
রাজপথে পরি কাঁদে ছোট খুকি বল কেবা খোজ নেয়।
কান্না শুনিয়া আসিল ধাইয়া অন্ধজন এক লাঠি ধরে,
স্বহস্তে ধরিয়া উঠাইল তারে কতই না যতন করে।
চক্ষু থাকিতে দেখিতে না পায় কি হবে সে চক্ষু দিয়ে?
অন্ধের কাজ অন্ধে করিল একা, নিজ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে।
চক্ষুস্মানের কাজ করে দৃ্ষ্টিহীনে বিবেকের চক্ষু দিয়ে।
ভগবান তুমি কি সুখ পাও ওদেরই দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে?


মানুষ এ জগতে সর্বোৎকৃষ্ট জীব কারন সহযোগিতা অনুকম্পা ভালোবাসা দয়া করুণা ইত্যাদি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষই একমাত্র জীব যারা এ পৃথিবীতে সমাজ গড়ে তুলেছে সুস্থভাবে জীবন ধারনের জন্যে। প্রশ্ন হল সমাজ যদি না গড়া হতো তবে কি মানুষ বেঁচেবর্তে থাকতে পারত না? অবশ্যই পারত। অন্য সব জীবজন্তুর মতোই বহাল তবিয়তে থাকতো তবে খাদ্যের জন্য হানাহানি কাটাকাটি লেগে থাকত সর্বত্রই এবং সদাই। এখন প্রশ্ন জাগে প্রাণে তাহলে এক ধরা কেন অর্ধাহার আর অনাহারে দিন কাটায়। সমাজ গড়বার তাহলে অর্থ কি দাঁড়াল।


সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাতে জানা যায় ভারতবর্যের ৯০ কোটি নাগরিকের মিলিত যে পরিমান ধন রয়েছে তার চেয়েও বেশি পরিমান ধনরাশি মাত্র ৫৭ জন ভারতীয় নাগরিকের কুক্ষিগত।  দেশে দেশে একই হাল পরিলক্ষিত।


এই কি সমাজ ব্যবস্থা! এই কি সর্বশ্রেষ্ট জীবের উদাহরণ। এক পৃথিবী না খেয়ে কাটাবে আর এক পৃথিবী ধনরাশিতে বলিয়ান হয়ে দম্ভভরে আকাশ বাতাসে উত্তাল উড়ে ঘুরে বেড়াবে। তাদের কাছে গবীব লোকের কথা ভাববার সময় নাই। তাদের যে আরো আরোও অনেক অনেক চাই। তারা নিষ্পেষিত করেন গরীব এবং মধ্যবৃত্ত আয়ের সাধারণ নাগরিক সমাজ কে। শোষণ আর বঞ্চনা সমাজের রীতি নীতি হয়ে উঠেছে । তাদের পদলেহনে বেঁচে থাকতে হয় দেশের আর ৯০ কোটি নাগরিক জন।  


মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে সমাজ কেন? গরীব কেন গরীব থাকবে? কেন অনাহারে অর্ধাহারে ক্লিষ্টটায় এক পৃথিবী হাহাকারে ভেসে যাবে ধরা?


প্রিয় কবি শ্রী লক্ষ্ণণ ভান্ডারী মহাশয় তার নিবেদিত কাব্যটিতে এমন হতাসা আর পাষাণ সমাজের চিত্রই অঙ্কিত করেছেন। তিনি অফিস যাবার পথে লক্ষ্য করলেন এক  দীর্ন শীর্ণ ভিখারিনী ছোট্ট একটি মেয়ে তার ভিক্ষার বাটিটি মেলে ভিক্ষা করে চলেছে নগরের পথে পথে। শত জীর্ণ পোশাক আসাক তার। মলিনতায় লজ্জিত নতমস্তক সে। সে দৃশ্য দেখে কোমল কবিমন কেঁদে উঠতে চায় সামাজিক বৈষম্য ভাবনাতে। তিনি নিমেষহীল পলকে এসব কথাই ভাবতে থাকেন।


তার নজরে আসে হটাৎ এক মেমসাহেব গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ভিক্ষার বদলে ঘারধাক্কা। বিশ্রী কুশ্রী মেয়ে তার ধারেকাছে কেন আসবে। ক্ষমতার মদ-মত্ততায় গরবিনী ধনী লোকের চরম কুশ্রী নিবেদন। ভিক্ষার বাটিটি ঝনঝন রবে রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। মেয়েটির কপাল কেঁটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। যেকটি পয়সা ছিল ছিটকে পরে রাজপথে। পরিহাস করতে থাকে মানবতাকে। লিখতেই চোখে জল এসে গেল তাহলে এমন দৃশ্য দেখে কোমল কবিমনে কতকানি আঘাত আসতে পারে!  তাই তো তিনি ব্যক্ত করেছেন তায় তার হৃদয়ে জেগে ওঠা সেই কম্পণ, সেই অমানবিক আচরণ।  অথচ সে দৃশ্য মেমসাব তোয়াক্কাই করলেন না। গাড়ি স্ট্রার্ট করে নির্বিকার চিত্তে চলে গেলেন তিনি। আর কোন কেউই এগিয়ে এল না অসহায় মেয়েটির শুশ্রুষায়। চিৎকার করে কাঁদছিল ছোট্ট মেয়েটি। তার কান্না অনুসরন করে এক অন্ধ ব্যক্তি লাঠি ঠুকে ঠুকে এগিয়ে এলেন শিশুটির পানে। পরম স্নেহে তার সেবা শুশ্রুষায় মেতে উঠলেন।


তাই তো কবি বিলাপ করেছেন কাব্যকথায়। যাদের দেখতে পাওয়া উচিৎ ছিল তারা দেখতে পায় না আর যাদের চোখ আছে তারা অন্ধের মত থাকে। কি বিচিত্র খেলা ভগবানের। হায় রে! হায় রে ক্ষমতায় মদমত্ত মানব জাতি! হায় হায়! একদিকে মানবতা হরা ধরা আর অন্যদিকে স্বর্গের সুবাস।


কবে জেগে উঠবে মানব জাতি? কবে শেষ হবে এ বজ্জাতি? কবে সুস্থ বিধান হবে সমাজের?


অপূর্ব সুন্দর ভাবনায় অসামান্য লেখা নিবেদন করবার জন্যে প্রিয় কবিকে জানাই হার্দিক অভিনন্দন, সেলাম আর ভালোবাসা। ইতি, আপনাদের প্রিয় সঞ্জয় কর্মকার।