লেখাটির অন্তিম স্তবকে কবি কিছুটা ভাবাত্মক হয়ে উঠেছেন। স্বগতোক্তি তে তিনি নিজের মনের কাছে নিজেই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন-


স্নেহ মমতা ভালবাসা হীন প্রাচুর্যে ভেসে মিলেছে কি সত্যি সুখ !
নাকি অন্তরে পোষা সুখের শেষে দেখতে পায় দাঁড়িয়ে একঝাঁক দুখ


সুখের সংজ্ঞা কবি জানেন। তিনি জানেন একজন মানুষ কী কী শর্তে সুখী হতে পারে। বিশ্লেষণে যাবার পূর্বে সুখ জিনিসটা কী আর তা কিভাবে লব্ধ হতে পারে অল্প কথায় তা জেনে নেওয়া যাক।


সুখ একটি মানবিক অনুভূতি। সুখ মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক, বহির্মুখী বা অন্তর্মুখী অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা, আশাবাদ, ধর্মীয় সম্পৃক্ততা, আয় আর সুখী মানুষের সাথে নৈকট্য সুখের সঙ্গে পারস্পরিক ভাবে যুক্ত। এককথায় সুখ হলো মনের সম্পৃক্ততা। ব্যক্তিগত চাহিদা ও পূরণ-অপূরনে মানসিক প্রতিক্রিয়াই হলো সুখ দুঃখ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি।  


একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবার যারা পরিমিত আয় আর ভোগে তাদের মনের সম্পৃক্ততা আনতে সক্ষম হয়, একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে পারে, ভালোবাসা প্রেম প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে তবে বিলাস বাহুল্যের সক্ষমতা না থাকলেও সেই ব্যক্তি বা পরিবার নিতান্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেও অনেক অনেক সুখী হতে পারে।


অপরদিকে যে ব্যক্তি বা পরিবার বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও তাদের চাহিদার যদি অন্ত না থাকে আরো চাই আরো চাই বাসনাতে মন ও হৃদয় মগ্ন হয়ে থাকে, একে অপরের প্রতি যদি শ্রদ্ধাশীল না হয়, হিংসা আর কলহের বাতাবরণ আর অপ্রাপ্তির দুঃখে সেই ব্যক্তি বা পরিবার সত্যিকারের সুখের মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। ধন দৌলত বিষয় আশয়ের বাড় বাড়ন্ত থাকলেও তারা প্রকৃত সুখী হতে পারে না।


কবি তার কবিসুলভ মন দিয়ে আজকের সমাজের আজকের মানুষ জনের এরূপ মনোভাবের প্রকটতাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আর সেই কারণেই বৈরিতা আর বিদ্বেষের বাতাবরণে সমাজ আজ উত্তপ্ত। বিষয় আশয় বিত্ত সম্পত্তি লোভ আর ক্ররতায় আপন আপন ভাই বোন এর মাঝে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ চলতে থাকে।আপন পিতা মাতার প্রতি তারা আজ দায়িত্ব্ বিমুখ।, সত্যি বলতে কী আজকের মানুষেরা আজ আর অন্যের সুখ বা প্রপ্তিতে উল্লসিত বা সুখী হতে পারে না। কোনো এক কবির লেখা এমনই ভাবনার কবিতার উত্তর দিতে গিয়ে তাই লিখেছিলাম, "সেই কাল আজ যে আর নেই"।  হিংসার গনগনে আঁচে মানব অন্তর ভস্মীভূত হতে হতে আধুনাতে তা রুক্ষ বঞ্জর ভূমিতে পরিণত। হিতৈষী ও সত্যিকারের বন্ধুর সন্ধান আজ আর মেলে না।


আমি আমার লেখা একটি কবিতায় লিখেছিলাম,"ঘোর কলি আজ  জেতার বাজি মানবতার হার"। সত্য সত্যই মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত ভূপাতিত। যে কোনও মূল্যে সে পথ যতই হিংস্রক বন্য হোক না কেন জিততে হবে। আর দশ জনের চেয়ে বেশি বিত্ত যশ প্রতিপত্তি আদায় করতে মানুষ আজ মানবতা রহিত হয়ে পড়েছে। তাই মানুষ আজ আত্মকেন্দ্রিক সহমর্মীতা হীন। আজকের মানুষ কী সত্যই সুখী!! কবি অবাক হয়ে  দার্শনিকের মতই উচ্চারণ করেছেন-


সুখের জন্য কতটুকু প্রয়োজন।


ভেদভাব পারিবারিক অশান্তি কোন্দল  শারীরিক আর মানসিক অসুস্থতা ডেকে আনে। মানসিক ভাবে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে তাকে। শুধুই অগাধ ধন সম্পত্তি প্রাচুর্যের বাহার একজন মানুষকে কী সত্যই সার্বিক ভাবে সুখী করে তুলতে সক্ষম!! কবিতার শেষ দুই পংক্তিতে কবি তাই হতাশ ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছেন-


সব পেয়েছির ভরা নায়ে যাত্রী শুধু সে একা, নেই হিতৈষী-বন্ধু স্বজন
আমার আমিতে ভেসে বুঝতে পারে কি ? সুখের জন্য কতটুকু প্রয়োজন ।


অত্যন্ত উৎকর্ষ মন্ডিত এমন একটি কবিতা উপহার দেবার জন্য প্রিয় কবির প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। (সমাপ্ত)