ড. শাহানারা মশিউর (চারুলতা কবি)


ক্ষুদ্র একটি দেহের ভেতর
বৃহৎ একজন আছে,
দৃশ্যমানের অভ্যন্তরে
অদৃশ্য মন বাঁচে।


ছোট্ট একটি কাব্য কবিতা কিন্তু এর  অভ্যন্তরে লুকিয়ে রয়েছে তারকা খচিত এক সুবৃহৎ নীহারিকা। কবিতাটির মূল ভাব মানুষ ও মানুষের আচার ব্যবহার প্রকৃতি সমূহ নিয়ে। কবি তাঁর অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে এই স্থুলকায় শরীরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রয়েছে এক সুবৃহৎ হৃদয় আকাশ যার পরিব্যপ্তিতে একজন মানুষ এক অতিমানব বা মহাত্মাতে পরিণত হতে পারেন আবার বিপরীতে বিকশিত হয়ে আত্মপ্রকাশে হতে পারে এক নিষ্ঠুর ক্ররতা ভরা মন নিয়ে এক মহাবিনাশক দানব রূপ।


সৃষ্টির ঊষালগ্নে পরম পিতা সৌন্দর্যমন্ডিত এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সৃজন করবার সাথে সাথে তাঁর এক হতে বহুতে বিকশিত হবার অভিপ্রায়ে মনুষ্য প্রজাতি সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর সমস্ত গুণাবলি তিনি মন প্রাণ দিয়ে মানুষের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন। মানুষকে এক সুবৃহৎ অন্তর তিনি দান করেছিলেন যেখানে প্রেম ভালোবাসা, দয়া ক্ষমা, করুণা মমতা, সৌহার্দ্য সম্পৃতির বীজ তিনি বপন করেছিলেন। আর তা করতে গিয়ে মনুষ্য প্রজাতির অন্তরে তাঁকে অনুভূতি উপলব্ধির মতো শক্তি দিতে হয়েছিল। সেখানেই হয়েছিল বিপর্ষয়।
এই অনুভূতি উপলব্ধি গুণের কারণেই লোভ, ক্ষোভ, বাসনা, স্বার্থপরতা, হিংস্রতা ক্রুরতা দানা বাসা বাঁধে মানুষের অন্তরে। একে অপরের চেয়ে বেশি সুখি হতে চায়, একে অপরের চেয়ে বেশি ভোগ করতে চায়, অপরের চেয়ে বেশি বিত্তবান হতে চায়। আর তা কারায়ত্ত করতেই মানুষ সৌহার্দ্য সম্পৃতি দয়া, ক্ষমা, মায়া মমতা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়ে পার্থিব জীবন মহাসুখে নির্বাপণ করতে হিংস্র আর ক্রুর হয়ে ওঠে। পরম পুরুষ হতে বহু ক্রোষ পথ দূরে সরে গিয়ে নিজেদের মধ্য সর্বদাই মহারণে মেতে ওঠে। গোষ্টি কোন্দল থেকে শুরু হয়ে দেশে দেশে শুরু হয় মহা বিনাশক যুদ্ধ, রক্তপাত আর ধ্বংস।


আজ মানুষ অধঃপতনের রথে চড়ে ক্রমশঃ অবনতির পথে নিমজ্জনের পথে। দেশে দেশে মানুষ আজ প্রত্যহ নিপীড়িত, সভ্য সংস্কৃতি আজ ধ্বংস প্রায়। নারীর মান মর্যদা অহরহঃ লুন্ঠিত হচ্ছে দেশে বিদেশে। জন্মেই শিশু প্রাণ রুধির বানে শরশয্যায় চোখ মেলেই আর্ত চিৎকারে আশঙ্কিত। মহাপ্রলয় আসন্ন প্রায়।


এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কবি মন স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছেন প্রতিটি মানুষকে, প্রতিটি জাত সমূদায় কে, যে মানব আজ ধ্বংসের যজ্ঞে মেতে উঠেছে সেই মানুষই ইচ্ছা করলে পারে এই মহাবিনাশ কে রুখে দিতে, ইচ্ছা করলেই তাঁরা পারে এক সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ করে এক হরাভরা পৃথিবী  উপহার দিতে। তাঁর জন্য তাদের নিজেদের কে আবিস্কার করতে হবে নতুন ভাবে। প্রতিটি মানুষের অন্তরেই পরম পিতার বাস আর প্রতিটি মানুষের হৃদয় আকাশ অসামান্য নানা গুণে সমন্বিত। তিনি বলেছেনঃ-


ক্ষুদ্র একটি দেহের ভেতর
বৃহৎ একজন আছে,


আসুন আমরা সবাই এই বৃহৎ একজনকে আমাদের মধ্যে খুঁজে বার করি আর এক নতুন পৃথিবী সৃষ্টি তে মনোনিবেশ করি, যেথানে হিংসা, জাত পাত, ক্রুরতা বন্যতা রাজ করবে না। সৌহার্দ্য আর সম্পৃতির বাতাবরণে মিলে ধরি নিজেদের কে।


এত সুন্দর লেখা উপহার দেবার জন্য লেখক কবির জন্য রইল আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।