মানুষ নিজেদের সুবিধার কারণে অপরিণামদর্শিতায় অবিবেচকের মত অরণ্য গাছপালা কেটে পুকুর ডোবা ইত্যাদি ভরাট করে নগর শহর সম্প্রসারিত করে চলেছে কালের পর কাল ধরে। বিলাস বাহুল্য ভোগ লালসায় উন্মত্ত মানুষ প্রকৃতির কথা চিন্তাই করে না। ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে বনের পরিধি। বাস্তুতন্ত্রে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়ছে ক্রমাগতই। আত্মকেন্দ্রিকতার গ্রাসে আজকের মানুষ নিতান্ত আপন ব্যতীত আর কিছুই চিন্তার পরিধিতে আনতে পারে না।


পাহাড় অরণ্য সাগর নদ নদী আর নানান জীবজন্তু দিয়ে অত্যন্ত সুচারু ভাবে অত্যন্ত ভারসাম্যতার সঙ্গে স্রষ্টা সুমধুর এই বসুন্ধরা সৃষ্টি করেছিলেন। সুষ্টভাবে বেঁচে থাকবার অধিকার এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবের সমানভাবে বর্তমান। অথচ মানুষের এই অপরিণামদর্শিতার কারণে বর্তমানে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ।


প্রকৃতি সচেতন কবি লিখেছেন শহর নগরে পাখিদের কলকাকলি আজ আর শোনা যায় না মরাল মরালী মাছরাঙা বক ইত্যাদি যে সকল প্রাণী প্রধানত ডোবা খাল বিল হতে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে সেগুলি শুধুমাত্র শহর কেন গ্রামাঞ্চলেও আজ ক্রম হ্রাসমান কারণ প্রযুক্তির কল্যাণে আজ সেখানের শহরের ছায়া বিদ্যমান আর সেখানেও অবাধে পুকুর  ডোবা খাল বিল ধ্বংসের যজ্ঞ শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই।


ইতিমধ্যেই এ পৃথিবী হতে অনেক প্রকার প্রজাতীর প্রাণী সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিন্ন হয়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আরও অনেক জীব জন্তুই বিলুপ্তির পথে চলে যেতে বাধ্য। জল স্থল সমস্ত স্থানের ই বাস্তুতন্ত্র বা ইকোলজি ক্রমে ক্রমে ধ্বংস হতে চলেছে আজ আর তার কু প্রভাব প্রকৃতির উপর বর্তমান সময়েই মারাত্মক ভাবে প্রতিফলিত।


কবি তার লেখা কবিতায় লিখেছেন-


"করো না ভরাট জলাভূমি এইভাবে
ডাহুক-ডাহুকি কোথায় খাদ্য পাবে?
খাবারের খোঁজে কত পাখি উড়ে আসে
ওরা খায় মাছ-পোকা মহা উল্লাসে।  


খোলা মাঠ নেই উঠেছে ইটের বাড়ি
তাইতো দেখি না আর বকেদের সারি।
খাবারের খোঁজে জলে কাটে বারোমাস
দল বেঁধে আসে ওরা কত উচ্ছ্বাস।  


বৃক্ষ লতা পরিবেষ্টিত পরিবেশে পাখিদের কলকাকলি কতই না সুন্দর লাগে। সৌন্দর্য পিপাসী মানুষের মনকে এমন পরিবেশ আবেশিত করে তোলে। বসন্তে কোকিলের সুমধুর কন্ঠধ্বনি শুনতে ভালোবাসে না এমন মানুষ কোথাও নেই। দল বেঁধে অপেক্ষারত বকের সারির এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য অতি মনোরম। অথচ এসব এখন আর বাড়ির আশেপাশে দৃশ্যগত নয়। কবি তাই লিখেছেন-


"ওরা আছে বলে আমরাও গাই গান"


প্রকৃতি সচেতন দরদী মনে কবি তাই সকল জনতার কাছে সকরুণ আর্জি জানিয়েছেন তার কবিতায়-


"সবার জন্য আকাশ-পাহাড়-নদী
থাকে যেন প্রাণে ভালোবাসা নিরবধি।


প্রকৃতি সচেতনতায় লেখা সুন্দর একটি কবিতা উপহার দেবার জন্য প্রিয় কবির প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন প্রীতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।