“ধ্রুবতারা”


কাজী নজরুল ধ্রুবতারা এক-পথের দিশার সাথী,
গহন আঁধার বাদার বনে-
আলোক প্রতিভাতি।
রুদ্র প্রলয় ঝঙ্কারে গীত-বিদেশ শাসক পতি,
ভয় ভীত প্রাণ রুদ্রবীণায়
কারায় দিল গতি।
কারার ওই রক্ত সোপান-বাঁধতে নারে মুক্তির গান,
জয় জয়োগান ধন্য মাতার-পুণ্যবতীর
প্রাণ সন্তান।
বৈশাখী ঝড় বাজলো মাদল-জাগলো তরুণ দল,
ঊষার আলোক অরুণ গানে
বিদ্রোহেরই দল।
ভক্তিনিশান-বিদ্রোহী গান-দিতেই সবল বজ্রাঘাত,
ধন্য মায়ের কায় তনু প্রাণ-আর নজরুল
হানতে আঘাত।
কাজী নজরুল ধ্রুবতারা এক-পথের দিশার সাথী,
গহন আঁধার বাদার বনে-
আলোক প্রতিভাতি।


“বাণ”


আর কতদিন বইতে হবে-বলনা মা'গো তরী,
শৃঙ্খলেতে জড়িয়ে হাতে-গলায়
পায়ে বেড়ি।
বল'না মা'গো বল, আর পারিনে বৈঠাখানি
এই ধরণীর তল। বল'না মা'গো বল।
লকলকে মোর জিহ্বাখানি গনগনে আঁচ ফেলে,
দুচোখ ধারায় আর বাণেতে
বাক রুধে যায় গলে।
তোর আঁচলে ছোট্টকালে কাঁদতে শিখি নাই,
আর দুনিয়া পৃথক আমি-
মিশতে পারি নাই।মিশতে পারি নাই।
দু'চোখ ধারা কপোল বহে-ভ্রান্ত পথের দিশা,
পতঝড়েতে হৃদ ঝরে মা
নিশান পথের আঁকা।
বল'না মা'গো বল, আর পারিনে বৈঠাখানি
এই ধরণীর তল। বল'না মা'গো বল।


“কত্তাবাবু”


কত্তাবাবু দুই দিন মান
খাওয়া জুটে নাই,
তাইতো এঁটো ঘাঁটাঘাঁটি
যদি কিছু
পাই।
বাপ জানিনে কে আমার
মা'টা ম'ল ফুটে,
ভিক্ষাও কেউ দেয়না বাবু
লাথ গালিটাই
জুটে।
গা ঘিন ঘিন বয়স কম
কাজ দেয়না কেউ,
আস্তাকুরে ঘাটতে গেলে
কুত্তা করে
ঘেউ।
কান্নাকাটি আর করি নে
বন্ধু পাতাইছি,
এখন আমি কুত্তাগুলির
পাক্কা ভাই-
জি।


(গতকাল দিগন্তে প্রকাশিত "চাহিদা", কবিতাটি বিশ্লেষণ সহকারে)
“চাহিদা”


সভ্যতার শিখরে এভারেস্টের জমাট বাধা হিমশৈল,
আন্টার্টিকার বরফ জমা সাগর।
টাইটনিক রোজ ধাক্কা খায় শৈল শিরায়,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাসের সারি।
মনে পরে প্রায় দশ বছর আগে
আমার গিন্নিকে আমি একটা ভুল কথা বুঝিয়েছিলাম,
অন্ততঃ ২০ জনের মৃত্যুর খবর
সংবাদপত্র যদি না ছাপতে পারে প্রতিদিন তবে,
সে সংবাদপত্রের লাইসেন্স ক্যান্সেল হয়ে যায়।
দুর ছাই কী লিখে যাচ্ছি যা তা
চাহিদা এখন অনেক
বেড়ে গেছে।


পাহারের যত উঁচুতে ওঠা যায় ততই শীতল হতে থাকে বাতাস। একটা সময় আসে যখন তুষারে তুষারে একাকার হয়ে যায়। সারা বছরই সেখানে শুধুই বরফ। প্রাণের অস্তিত্বও থাকে না সেখানে , না থাকে উদ্ভিদ। ঠিক একইভাবে আমরা দেখতে পাই মানব সভ্যতা যতই উন্নতি করেছে স্বাভাবিক মানবিক গুণগুলি যেন ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছে। আজ সভ্যতার শিখরে সে গুণগুলি যেন বরফের মতো জমে গেছে। প্রাণ তার উষ্ণতা হারিয়ে ফেলেছে। পাহার শিখরে যেমন তুষার ঝঞ্ঝা কেড়ে নেয় পর্বতারোহীদের জীবন প্রাণ, ঠিক সেই তুষার ঝঞ্ঝার মতই, মানবিকতার বিলোপে দানবিকতা রাজ করতে চলে। হিংসা দ্বেষে ছেয়ে যায় মানবিক সমাজ গোষ্টি দল। ঝঞ্ঝার মত বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি জেগে ওঠে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ প্রাণে নির্যাতন আর যাতনার প্রবাহ বয়ে চলে। দেশে দেশে দিকে দিকে অরাজকতা বিরাজ করছে আজ। টাইটনিক ছিল সেই সময়কার সবচেয়ে উন্নত বিলাসবহুল একটি জাহাজ। ঠিক সেই রকমই মানবের সর্বোত্তম গুণ মানবিকতা। প্রতি পলে পলে লুন্ঠিত আজ মানবিকতা।“টাইটনিক রোজ ধাক্কা খায় শৈল শিরায়”। রক্তে ভেসে যায় নদী সাগরের জল। হাজার হাজার নিরীহ প্রাণের প্রতিদিন হয় বিনাস। আজ সভ্যতার শিখরে মানব সমাজ ঠিক এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন গুজরান করে। কবি এখানে ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি কাহিনী বলেছেন। কবিজায়া প্রতিদিন সংবাদপত্রে খুন খারাবির খবরে উষ্মা প্রকাশ করলে কবি তাকে একটি মিথ্যা গল্প শোনায়। প্রতিটি সংবাদপত্রকেই নাকি প্রতিদিন ২০টি করে এমন ঘটনার কথা ছাপতে হবে নইলে সে কাগজের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে ভাবুন আজ থেকে ১০ বছর আগে নাশকতা কোন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল। তারপরি কবি বিলাপ করেছেন, "চাহিদা এখন অনেক বেড়ে গেছে"। তাহলে বুঝুন আজকের পরিস্তিতি। কাগজ খুললে শত শত মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় রোজ। প্রতিদিনই এ পৃথিবীর কোথাও না কোথাও বোমা বিস্ফোরণ, আতঙ্কবাদী হামলা অথবা রাস্ট্রের অত্যাচারের বলি শত শত প্রাণ। উন্নতির শিখরে আজকের পৃথিবীর কদাকার দৃশ্য কবিতাটিতে বর্ণিত।