Sanjay Karmakar
11 mins  ·
"গ্রামখানি সপ্তম খন্ড"


গতরেতে খাটি মোরা শীত আদি গ্রীষ্মে
আছে কি গো হেন গ্রাম-নাই সারা বিশ্বে।
ফল আদি চাষাবাদ-পাট তার পচানি
বায়ে ভাসে বাস তারি সুমধুর গ্রামখানি।


রমণী সে নীড় সাধে তালপাখা ঘোরে হাতে
সময়েতে মাঠে গোঠে আঁখি তারা গোবরেতে।
তাল তাল তুলে লয় বালটি সে ভরে তায়
মুঠা ভরি হাতে হাতে দেওয়ালে ঘুঁটে দেয়।


সায়াহ্নে ধূপ ধূনা অঙ্গনেতে লেপে সে তা
সুখোনীড়ে গাভী ছেকে দাদা কিবা বড় জ্যাঠা।
লাউ তারি মাচানেতে সারি সারি ঝোলে ফল
প্রাণ দিয়ে গ্রাম সাধা- প্রশান্ত কাটে কাল।


পাঠশালা সুদূরেতে গৃহ হতে তিন ক্রোশ
পদব্রজে চলে শিশু, খোকা তার নাই রোষ।
তিল তিসি চাষ আদি বিবিধের সমাহার
শ্রমে খেটে বিকিকিনি কভূ জিৎ কভূ হার।


প্রকৃতির লেখা,"গ্রামখানি", প্রথম খন্ড


সুমধুর গ্রামখানি; ভিটে মাটি যাহা মোর
ছায়া ঘন তরু তার-ই অরন্য ঘনঘোর।
তারি ফাঁকে ফাঁকে ঘর; ঘন ছায়া ঘেরা
সুশীতল ভুমি তারি সুখী সবে মোরা।


গরু আছে আছে গোলা সোনা ফল সাধি
নিকানো সে অঙ্গনেতে তুলসির বেদি।
কর্তা-মা আছে তার জপ তার মালা
হরিবোল নাদ ধ্বনি দেয় দুই বেলা।


বার দিনে হরিলুট বাতাসা ও খুরমাতে
লুটে পুটে লই মোরা ভরে লই দুই হাতে।
ঘুঁটা দিয়ে জ্বলে চুলা আর খড়ি কাঠ
দিনে আলো রবি করে কুপি জ্বালা রাত।


পুকুরেতে নাই মোরা জলকেলি জলে
মাতোয়ারা মোর গ্রাম ফুল আর ফলে।


"গ্রামখানি খন্ড দুই"


গাই মোরা গাড়ি টানি বলদেতে হাল
হাঁস চাড়ি গামলায়; ছাগলের পাল।
বীজ ধান তলা তার জল কাঁদা ভারি
গোবরেতে দেয়ালেতে ঘুঁটে গড়াগড়ি।


মাটি দিয়ে গড়া গৃহ ভিটে তার কাঁচা
তারি পাশে গড়া বাঁশে মুরগির খাঁচা।
গৃহ তার গড়া চাল খড় আর বাঁশে
ছোট বড় ডোবা দুই আছে তারি পাশে।


নবান্নে ধান কাটা গোলা ভরে খড় তায়
ঘরে ঘরে পিঠে পুলি শুভ তারি বারতায়।
বর্ষাতে থই থই বানভাসি প্রাণ সাধি
দয়া নাই নদী জলে হই মোরা অপরাধী।


বাঁধ তারি উঁচু তল ত্রাণ আর ত্রিপলেতে
জঠরেতে জ্বালা ধরে নিতে হয় হাত পেতে।
শরৎ-এর আগমনে কাশে কূল ভাসে তার
বোধনেতে মা যে খেলা; সিঁদুর ও আলতার।


প্রকৃতির লেখা,"গ্রামখানি তৃতীয় খন্ড"


ছোট ছোট আশা হৃদে ছোট ছোট গৃহকোণ
হাসি খুশি রহি সবে নাহি কভূ মাতি রণ।
আহারেতে পিঁড়ি পেতে একত্রে বসা
দেউড়িতে প্রেম প্রীতে নানা কথা খাসা।


বধূ তারি ঘোমটায় টানা শাড়ি আধোমুখ
আলো তারি জ্যোৎস্নাতে উছলেতে বহে সুখ।
লাবন্য প্রণিধানে প্রেম দিয়ে ঘেরা গাঁয়
সুখ দুখে সাথী সবে নাহি রহি হীনকায়।


শঙ্কা ও বিপদের সূচনাতে সুখ হরা
এক জোটে দিবা রাতি; গ্রাম মোর মনোহরা।
সুখোনীরে তারে ঘিরে স্বপ্ন ও আশা ছোট
নিষ্টা ও শ্রম দিয়ে পরিণত করি ব্রত।


পানি তারি সেচ হাল; গরু আর বলদেতে
একান্ন হাঁড়ি কড়া গড়া গ্রাম মোহনেতে।
জেলে মাছ ধরে জাল, কুমোরের চাক
শোভা সে তো মোহময়ী; পথ, আঁক বাঁক।


বন তারি ঘেষা গ্রাম সারি সারি তরু
নদী বাঁধ বালুচর ফালি পথ সরু।
ধান কাটি কাস্তে; শ্যামলিমা তারি
কাটা ধান ফসলেতে গরু তার গাড়ি।


হেঁই রব হেঁইয়ো শ্লথ গতি শম্বুকে
গ্রাম বড় ভালো নহে কহে শুধু নিন্দুকে।
রবিকরে ঊষা জাগে মুখরিত কলতানে
পাখ আর পাখালিতে মধু সুরে সুর টানে।


বিকশিত শত কলি বাগ আর বাগিচায়
বধূ সড়া কলসিতে, কাঁখে তারি পথ যায়।
মন্দিরে বাজে ধ্বনি হরি হরি নাদ ধরা
স্নিগ্ধ সে গ্রাম মোহে অপরূপ মনোহরা।


"গ্রামখানি চতুর্থ খন্ড"


হলাহলে নাই গেহ, গৃহ মাটি ভূমি তার
নাহি কিছু অমেয় সে; ভয় নাহি হারাবার।
গাঁ'এর ওই সুশীতল সুখো নীড়ে অবিরাম
ফল্গু সে ধারা বহে গোলকেতে হরি ধাম।


মাতা তাহে ফাল্গুনী বিভা তারি যশোধরা
তারি স্নেহ বারি তপে হই সবে সুখী মোরা।
হরিনামে ব্রত তথা সুরোচিত গীত তারি
স্নিগ্ধ সে ধাম অতি রূপে গুণে মনিহারি।


তপো তারি আরাধনা কৃষকের লাঙলেতে
সুখে দুখে সাথী মোরা রহি মোরা মন মেতে।
গাই তারি গোচনাতে বন্দনা গীত তায়
রঞ্জকে গুণগ্রাহী; পূজি মোরা স্বজনায়।


ছলা কলা রহিত সে পূজ্য সে হরিধাম
সবুজের বলয়েতে ধরা মোর সুখী গ্রাম।


"গ্রামখানি-পঞ্চম খন্ড"


শাখে শাখে ডাকে পাখি সোহাগের সুর অতি
নীড়ে তারি বন্ধনে শোভিত সে প্রেম প্রীতি।
স্নিগ্ধ সে গাঁ-এর ওই নদী তারি বাঁধ পাড়ে
বাউলেতে গাহে গীতি সঙ্গতে এক তারে।


সারমেয় দলে তারে বোঝে নাতো সুরো-তান
ঘেউ ঘেউ রবে ঘিরে তারি পিছে করে রণ।
কলু তার বলদের ঘানি দেয় ঘুর-পাক
জেলে ডিঙি নায়ে ভাসে মন্দিরে বাজে ঢাক।


মাঠে গরু ঘুটা বাঁধে দাদু তার কুঁজ ভারি
গাই সনে নদী পার করে ফেরে নীড় তারি।
মাঠে খেতে জোনাকের বাতি জ্বলে আর নিভে
আর তারা সারি সারি গগনেতে জ্বলে নভে।


প্রশান্তি দানা বাঁধে নীড় তারি অনুরাগ
রাত তারা আকাশেতে শান্ত সে কলোরব।
নিসাড়ের আলাপনে রাত কাটে ঊষা ভোর
প্রেম দিয়ে বাঁধা গ্রাম রহি তারি বাহুডোর।


"গ্রামখানি-ষষ্ট খন্ড"


বিল তার জলাশয়ে শত কলি কোকনদ
জলকেলি বিল খেলি নাই কোনো রোষ নাদ।
উড়ি ঘুরি সারাদিন গুলি কি বা ডাংগুলি
আঁখি তারা এক মুদে নিশানাতে অঙ্গুলি।


লেজ তার উড়ে ঘুড়ি আকাশেতে গগনেতে
মাঞ্জাতে সুতা ভারি কাটাকাটি খেলা মেতে।
শৈশব যেন রব স্বর্গের সীমানায়
কতকথা নাই ব্যথা গুরুজনে দেয় রায়।


অন্তরে ভ্রান্ত রে আজি ধরা নগরেতে
ধন আদি কৃষকায় রই মোরা হৃদ পেতে।
পবিত্র ভূম তারি কায় মনে প্রেম তায়
নাহি কোথা হেন সুখ নাই ওগো বসুধায়।


চপলতা প্রেম তার বন্ধনে কিশোরেতে
স্বপ্ন ও হৃদ সাজে লাজ আর শরমেতে।
রিক্ত সে হয় হিয়া মরমেতে বেদনায়
প্রিয়া তার নিকাহেতে চলে গেলে দূর গাঁয়।


বন্ধনে মাখামাখি গ্রাম মোর সুমধুর
বেণু তারি বাজে মসি নাই ঢাক গুড় গুড়।
সুমধুর গ্রামখানি স্মৃতি তারি আঙিনায়
লব্ধ সে সুখ আজি নগরেতে নাহি হায়!


"গ্রামখানি সপ্তম খন্ড"
গতরেতে খাটি মোরা শীত আদি গ্রীষ্মে
আছে কি গো হেন গ্রাম-নাই সারা বিশ্বে।
ফল আদি চাষাবাদ-পাট তার পচানি
বায়ে ভাসে বাস তারি সুমধুর গ্রামখানি।


রমণী সে নীড় সাধে তালপাখা ঘোরে হাতে
সময়েতে মাঠে গোঠে আঁখি তারা গোবরেতে।
তাল তাল তুলে লয় বালটি সে ভরে তায়
মুঠা ভরি হাতে হাতে দেওয়ালে ঘুঁটে দেয়।


সায়াহ্নে ধূপ ধূনা অঙ্গনেতে লেপে সে তা
সুখোনীড়ে গাভী ছেকে দাদা কিবা বড় জ্যাঠা।
লাউ তারি মাচানেতে সারি সারি ঝোলে ফল
প্রাণ দিয়ে গ্রাম সাধা- প্রশান্ত কাটে কাল।


পাঠশালা সুদূরেতে গৃহ হতে তিন ক্রোশ
পদব্রজে চলে শিশু, খোকা তার নাই রোষ।
তিল তিসি চাষ আদি বিবিধের সমাহার
শ্রমে খেটে বিকিকিনি কভূ জিৎ কভূ হার।