বাড়ি ভাঙতে যে কেউ পারে কিন্তু বাড়ি কেউ কেউ বানাতে পারে কারণ ভাঙা সহজ গড়া অনেক কঠিন। যে কোনও কিছুই গড়ার জ্ঞান না থাকলেও ভাঙতে আমরা সহজেই পারি আর সেক্ষেত্রে সেটি গড়বার জ্ঞান না থাকলেও চলে। এটা একটা ছোট্ট বাচ্চাও জানে। ছন্দ দু-প্রকারের হয়। একটি পদ্যছন্দ আর একটি গদ্য ছন্দ। তাই বলে কিন্তু গদ্য নয়। সে গদ্যছন্দের লেখায় তরঙ্গের মত বয়ে যায় হৃদয়ের আবেগ আকুতি। গতি লয় তাল বিস্তারে তা অনেক ক্ষেত্রেই পদ্যছন্দকে অতিক্রম করে যায়। সে লেখা পাঠ করলেই বোঝা যায় যে এটি একটি পদ্য রচনা, গদ্য নহে। এ ছন্দে কবিতা লেখা অনেক অনেক কঠিন। অনেক নামি দামি কবিগণের দ্বারা ও এ ছন্দে লেখা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। গদ্য ছন্দের ভিতরেও রয়েছে অনেক বিভাগ। সে সব আলোচনায় এ মুহূর্তে যাচ্ছি না। আধুনাতে লক্ষ্য করে দেখেছি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরেট একটি গদ্য লেখাকে কবিতার মত সাজিয়ে মন চুটিয়ে লোকে লিখে যায়। সে সব লেখা পাঠ করতে করতে একদিন আমি এ আলোচনার পাতায়  লিখেছিলাম যে, "গদ্য যদি কবিতা হয়, তো গদ্যের সংজ্ঞা কী"! তবে পদ্যছন্দে লেখাও অনেক কঠিন কাজ কারণ এখানে ভাবের বিস্তার তো করতেই হবে উপযুক্ত শব্দের প্রয়োগে তদুপরি তাল লয় গতি প্রকৃতি বিস্তারে মনের ভাব প্রকাশ করতে হয় সে লেখায় তাও আবার অত্যন্ত মধুর অন্তমিল তাল সহকারে। সে প্রকারে লেখবার সময় মন আর হৃদয় কে একসাথে অনেক গুলি পথের ধারায় সম্পৃক্ত করতে লাগে। অনেক অনেক একাগ্রতা না থাকলে এতগুলি বিষয় খেয়াল রেখে অসাধারণ কিছু লেখা সম্ভবপর নয়। যে কাজটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিরলশ করে গিয়েছিলেন আর তার ফলশ্রুতিতে তিনি বিশ্বজয়ী কবি আর বাংলার ইতিহাসে অমর। আমরা কবিরা তাকে অন্তরে রাখি অথচ তার সে সুচারু ধারা মানতে রাজি নই। আধুনা বাংলা কবিতা তাল লয় গতি ছন্দ সবই হারিয়ে ফেলেছে আর তার ফলশ্রুতিতে তৎ পরবর্তী ১০০ বছর পার হয়ে গেলেও সমগ্র বিশ্ব আর একটি বাঙালি কবিকে সে মানে উত্তীর্ণ করে নাই বা করতে পারে নাই। এটা একদম সত্যি কথা একটা লেখা লিখবার পর তা নিজের কানে কী রূপ ঘাত সৃষ্টি করতে পারে, সেটা উচ্চারণ করে সে লেখা পাঠ করলেই উপলব্ধি করতে পারা যায়। তার গুণগত মান ও নিজেই উপলব্ধি করতে পারা যায়। কাজেই শব্দ বন্ধন তাল লয় গতি বিস্তার বুঝতে উচ্চারণ আর কানের মানে হৃদয়ের সংমিলিত প্রয়াসেই একটি লেখা অনন্য হয়ে উঠতে পারে। সে পদ্য বা গদ্য ছন্দ যে ছন্দেই লেখা হোক না কেন। কবিতা স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি বিষয়। লেখা পাঠ করেই আনন্দ , উচ্ছ্বাস, বেদনা, দুঃখ দুর্দশা হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। কবিতার রসাস্বাদনের জন্যে আবৃত্তিকারের মধু মেশানো কন্ঠে শোনবার প্রয়োজন পরে না। সেটি একটি সম্পূর্ণ ভাবে পৃথক বিষয়, যেমন গান। আসরে নিয়মিত অনেক অনেক অনন্য সুন্দর লেখাও পাঠ করে হৃদয়ঙ্গম করতে পারি আবার বিরস জটিল জ্যামিতিক ধাঁধা জাতীয় লেখায় প্রাণ ওষ্টাগত হবার ও জোগার হয়। পরিশেষে কামনা করবো বাংলা কবিতা তার হৃত গৌরব আর একবার ফিরে পাক। জয় বাংলা ভাষা আর বাংলা কবিতার জয়।