গত তিনদিন প্রথমে হসপিটাল আর তারপর সেখান থেকে শিফটিং হয়ে আনন্দলোক নার্সিং হোমের এস ডি ইউ তে। ব্লাক স্টুল আর ব্লিডিং(ডিওডেনাম আলসার)। সবকিছুই আচমকা। ব্লিডিং বন্ধ হয়েছে তবে আমি বন্ড সই দিয়ে একটু আগেই বেড়িয়ে এসেছি যে এবার বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা কর বো। ইমারজেন্সিতে ভর্তি হবার সময় আমার স্ত্রীর কাছে  আমার একটাই অনুরোধ ছিল একটা লম্বা খাতা আর একটা পেনের। আমার নেশার কথা উপলব্ধি করে সে দিয়েছিল তা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে যেসব লেখা লিখেছি আজ আর আগামীকাল প্রকাশ দেব। সুস্থ থাকলে আগামীকাল থেকে সবার লেখায় যেতে পারব। শুভকামনা।
হুল


রে বুলবুল কোথায় গেলি হিতাক পানে চা না রে,
হাসপাতালের বেডে শুয়ে, কালো মল হচ্ছে বে।
ক্যান হবেনা বল বুলবুল রোজ রাত্রে শরাব পানি,
আর কবিতা ধরতে আসর, বাত কি আর চাট্টিখানি।
নাড়ি ভুড়ির মাথা খেয়ে এখন বেড হাসপাতালে,
হাতের মধ্যে স্যালাইন সুঁই, আর কবিতার খাতা বে।
খাওয়া দাওয়া বারণ সব আর সিগারেট কোথায় পাব,
শরাব পানি দূর বহুদূর, গাঁদা গাঁদা ঔষধ খাব।
বাঁচবো কিনা খোদায় জানে জাল গুটাবে নাকি বুল,
তল পেটেতে ডান দিকটায় ভোমরা যেন ফোটায় হুল।
হুলুস্থুলুস কান্ড রে বে তাও কি তুই শিস বাজালি,
হাসপাতালে এসেও রে তোর, আর গেলনা কথাকলি।
আজ যে খেয়াল আর হবে না বলবে সবাই আচ্ছা বেশ,
গাদা গাদা লেখা পড়ার, আর খুশিতে নাঁচের রেশ।
তাও কি জানিস কয়েকজনা খবর আমার রাখে বে,
কাল সকালেই ধরবে ফোন, খেয়াল কোথায় গেল রে।
দ্যাখ বুলবুল আমার হলাম দিন দুয়েকের মেহমান,
হ্যাচকা টান দিলই যদি, ভাসতে চলি আসমান।
জিবটা কেন হটাৎ করে অবশ যেন হচ্ছে বে,
উপর বাড়ির সময় বোধহয় ঘনায় ওরে আসছে রে।
তাও কি ভাল জানিস বুল জ্যোতিষীটা কয়েছিল,
অনেক অনেক আয়ু আমার, তাইলে বোধহয় হব ভাল।
প্রেসার ট্রেসার মাপলো ওরা বলে বেশ ঠিকই আছে,
খাতা পেন লিখেন কি! নার্স এসে জিগায় কাছে।
আমি বলি না না বাবা! সুইসাইডাল নোট না,
সময় কাঁটাই কাব্য লিখে, এইটুকু ছাড় দেন না।
দেখতে যেমন মনটা তেমন বলে তালে লিখেই যান,,
হাঁপ ছেড়ে ভাই বাঁচি আমি, দেয়নি আমার খাতায় টান।
আবার কেন গুলায় পেট ঔষধ তো ভাই সুঁই দিছে,
তাইলে কি কাজ করেনি, টয়লেট টা কোন দিকে।
সব রক্ত বেড়ায় যদি বন্ধুদের ফোনে ধরি,
বি-পজেটিভ কয়েক বোতল, আয় না নিয়ে তাড়াতাড়ি।
আবার বাজাস! কি আর হবে, ভব দরিয়ায় পড়বে দারি,
যমের সাথে করবো রে ফাইট, ছাড়তে না চাই দখলদারি।
হায় রে কপাল কী বলে রে-মেডিক্যালে রেফার দেবে,
বলে কি'না এন্ডোস্কপি আর পেট কেটে ভাই সিলতে হবে।


হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোম এখন এস ডি ইঊ,
আরে বাবা করছে কি বে, আমি তো ভাই সুস্থই।
হেই আসে রক্ত নেয় আমি মরি যন্ত্রণায়,
তাও তো বুল বাঁচার বাঁচা, খাতা পেন বিছানায়।
যন্ত্রপাতি ভরা শরীর মনিটারে ফুটছে আঁকা,
হরেক রকম হিসাব কিতাব, রেখাগুলি আকাবাঁকা।
আরে বাবা আমার তো পেটের রোগ হৃদয়টাতো বেশ ভাল,
তাইলে কেন ই সি জি ভাই, বল তো বুল করতে গেল!
সুগার মাপে সুঁই ফোটায় রক্ত গ্রুপেও তাই,
আরে বাবা আর কত রে, সহ্য রে হয় ভাই।
আবার সেই হাঁক ডাক কাকু অপনি করেন কী!
আরে বাবা লিখছি রে ভাই, চক্ষু রে বুল কানা নাকি!
সারে বারো এখন রে ভাই আসরটাকে ভাবছি মনে,
ভাবছি রে বুল আজকে ছুটি, দিতেই হলো আপন জনে।
এর মাঝে ভাই ক্যানক্যানে স্বর বলে কাকু লাইট নিবাই,
চমকে বলি না না না, কেমন করে লিখব ভাই।
তাই কি শোনে আমার কথা এখন দিলাম দারি,
থাকলে বেঁচে লিখব কাল যতটুকুন পারি।


“পথিক তুমি কোথা বাইতেছ নাও”
(রাত সারে তিন টায় এস ডি ইউ তে বেডে শুয়ে লেখা)


পথিক তুমি কোথা বাইতেছ নাও
প্রাণের বন্ধ্যা তরী,
আজ ধরনী রক্ত লোহিত
চলো ধরি, আজ সে তরবারি।
পথিক তুমি কোথা বাইতেছ নাও
প্রাণের বন্ধ্যা তরী।
হেথা জ্যোছনা হারায় ‘বৈভব শান’
কান্তি তপন দিশা,
আঁধার ঘনায় দশ দিক মান
গহন তমানিশা।
উছল প্রেমের অমর গীত
অমৃত সুর ধ্বনি,
রক্ষ নিনাদ করিতেছে বাস
হতাসায় দিন গুনি।
পথিক তুমি কোথা বাইতেছ নাও
প্রাণের বন্ধ্যা তরী,
আজ ধরনী রক্ত লোহিত
চলো ধরি, আজ সে তরবারি।
শঙ্কা যেথা নিনাদ তোলে
দুরুদুরু বুক কাঁপে,
ভগ্নী মা'য়ের মুক্ত বলয়
অশনীত ভরা তাপে।
জাত দেশ মান দশ দিশাতে
বজ্জাতিরই বীণ সে বাজি,
আর শিশুপ্রাণ ধ্বংস বিতান
হিংসার দ্বার মরন আজি।
ধর্ম বুলি রাজ ওঠে বল
সমাজ দীনতায়,
শঠ কপটা আর সে ধরা
হীন সে মনোতায়।
ক্লান্ত ধরা আজ ধরনী
ক্ষীণ সে বোলে ডাকে,
পঠিক তুমি বাইতেছ নাও
কোনে সে নদীর ঘাটে!
পথিক তুমি কোথা বাইতেছ নাও
প্রাণের বন্ধ্যা তরী,
আজ ধরনী রক্ত লোহিত
চলো ধরি, আজ সে তরবারি।


“বাতিক”


মনটা নানির বাতিক যেন
মত্ত প্রেমে তায়,
মন মদিরায় শালার গানে
মাতাল অতি-
শয়।
মার খেল কি ফাঁটলো মাথা
মন মানে না বাও-
মনঢলানি ছবিগুলান
মন মদিরায় ভাসায়
তাও।
মালকিন তো তাই আর কি!
মনমানী ওই করতে পারে,
মত্ত ওই শালার সাথে
মনের মত নাচতে
ঘরে।
মন মানেনা নানা আমার
মরার মত তোমায় দেখে,
মন কি বাত শোন গিয়ে
মদ গিলে ওই দাওয়াত
বসে।


“তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা”
(রাত তিন টায় এস ডি ইউ তে বেডে শুয়ে লেখা)


তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা,
প্রাণ অফুরান প্রেম সে কলি
জুই বকুলের মেলা।
তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা।
রূপ লাবনী যেমন ফাগুন
মন সে কাড়িয়া,  
মন মোহনি রূপ সে তোমার
কুঞ্জে কুঞ্জে অলির গানে
পুঞ্জে পুঞ্জে গুঞ্জরিয়া।  
তোমার হাসির উছল প্লাবণ
হৃদ সে  প্রবল বান
দীল দরিয়ায় মন ভেসে যায়
সুখের সমাগম।
তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা,
প্রাণ অফুরান প্রেম সে কলি
জুই বকুলের মেলা।
পাল তোলা সেই নৌকাখানি
ভিড়তে আমার ঘাট সে কূল,
উছল লহর তন সে মোতি
দ্যোদুল দুল দুলতে দুল।
হারিয়ে গহীন প্রেম সে কলি
আকুল তোমায় নয়ন চাই,
ভালোবাসার প্রদীপখানি
আকাশ আলো জ্বালিয়ে তাই।
তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা,
প্রাণ অফুরান প্রেম সে কলি
জুই বকুলের মেলা।
তুমি আমার অন্তর দিয়ে যাও বেলা।


“আলো, আমার আলো”


আলো, আমার আলো, ওগো আলো ভুবন ভরা,
আর নাই রে নাইরে কানু
আকাশ তমস ঘেরা।
ওগো আমার আলো, আলয় কালো ধরা.
আলো, আমার আলো, ওগো
কালোয় ভুবন ভরা।


কাল নাগিনী নাচন ধরে বিষের ছোবল ঘরে ঘরে,
ভ্রান্ত পানে ছুটছে মানুষ
আজ কালো রে
দ্বারে দ্বারে।
আকাশ কালো বাতাস কালো হৃদয় ভরা তামসিক
এক ধরা প্রাণ করতে রোদন
আর জমানায়
রাজসিক।  
তাপ্পি দেওয়া মধুর বুলি আর পারেতে ধার সে ছুড়ি,
শঠ ছলনা হৃদ প্রাণেতে
কালোর দেশেই
ঘোরাঘুরি।
আহা! বুদ্ধদেবের শান্তি কাহন ওই দেশেতে নয়ন মেলি
জাত বজ্জাত ওই জাতিটাই
খেলছে আজি রক্ত
হোলি।
আহা! আর সিরিয়ায় মারতে শিশু আকাশ বোমা উচ্চ শির,
আর দুনিয়ায় আবাক দেখি
দানব আজি সাজতে
বীর।
দাদার দাদা চালায় শাসন হোল দোল তার মানুষ নাকি!
দেশ হতে তার দেয় যে ঝারন
অহং বোধে রাজ সে
মেকি।
ইজরায়েল আর প্যালেস্টাইন বইতে লহু রক্ত স্রোত
কিম কোরিয়া গারল মোতি
লোহিত বরণ দেখায়
চোখ।


আলো, আমার আলো, ওগো আলো ভুবন ভরা,
আর নাই রে নাইরে কানু
আকাশ তমস ঘেরা।
ওগো আমার আলো, আলয় কালো ধরা.
আলো, আমার আলো, ওগো
কালোয় ভুবন ভরা।