গত সংখ্যায় লিখেছিলাম এলিমিনেশন থিওরি নিয়ে বিস্তারিত লেখব আর সেই থিওরি আত্মস্থ করতে পারলে কবিতা লেখা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাই কথা অনুযায়ী আজ এলিমিনেশন থিওরি নিয়ে আলোচনা করব। এ একান্তই আমার ব্যাক্তিগত আবিষ্কার এবং মন মানসিকতার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।


যাই হোক ভনিতা শেষ করে আসল লেখায় প্রবেশ করি। এলিমিনেশন মানে বাদ দেওয়া বা সরিয়ে দেওয়া। খেতে বসেছি টেবিলটা এমনভাবে আছে যে হাত পা নাড়াতে অসুবিধা হচ্ছে। টেবিলটাকে সরিয়ে নড়িয়ে ঠিক করে নিলাম বা যে বিষয়গুলির জন্য বসতে অসুবিধা হচ্ছিল সেগুলি সরিয়ে সড়গড় হয়ে বসলাম মানে এলিমিনেট করলাম। টেবিলে রাখা ফুলদানিটার জন্য অ্যাকুরিয়ামের মাছগুলি দেখতে পাচ্ছি না তো ফুলদানিটাকে সড়িয়ে দিলেই হলো। এগুলি গেল বস্তুর ক্ষেত্রে।


কিন্তু যদি দার্শনিক ভাবে চিন্তা করি। চলে আসি কবিতার প্রসঙ্গে। কবিতা লিখতে গেলে মনকে একাগ্র করতে লাগে কিন্তু বাস্তব কঠিন কঠোর জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত প্রত্যহ প্রতি মু্হুর্ত্তে মনকে আঘাত করতে থাকে। ধন সম্পত্তি বিত্ত আসয় কাম ক্রোধ ঘৃনা লজ্জা ব্যথা বেদনা সম্পর্ক ঝগড়া ঝাটি, অভাব অনটন, বাচ্চার পড়াশুনা, স্কুল কলেজ ও আরও নানাবিধ যাতনা প্রতি পলে মনকে আঘাত করতে থাকে। একাগ্রতা কিভাবে হবে।


শোলার মুকুট পরে বিবাহ হয়। পরবর্তীকালে সেই শোলার মুকুট লোহার মুকুট হয়ে ধরা দেয় আর তাই মনকে একাগ্র করতে হলে এলিমিনেট করতে হবে নানাবিধ বিষয় আসয় সমস্যা ইত্যাদি। তাই কী সম্ভব। কেন নয়! ব্যাক্তগত চাহিদা আর ভবিষ্যতের রূপরেখা নিশ্চিত ভাবে একটা থাকতে হবে। কোনও সমস্যা নিয়ে মনকে জেরবার নাই বা করলাম। আগামীকাল যে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে তার একটা রূপরেখা তৈরি করে আজ না হয় সে নিয়ে চিন্তা নাই করলাম। সমস্যা যতবড়ই হোক না কেন মনে মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখতে হবে, সময় বসে থাকবে না, সমস্যা আসবে যাবে , সমাধান হোক আর না হোক বছর ঘুরে যাবে, প্রকৃতির নিয়মে কোনও পরিবর্তন হবে না। তো কিসের জন্য মনকে অনর্থক কষ্ট দেওয়া, বিমর্ষ হয়ে থাকা। আমার বাবা গত। ভাবি তিনি যখন আমার বয়সে ছিলেন কতই না সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। আজ তিনি কোথায়! সময় পার হয়ে যাবে, আমিও থাকব না। কাজেই কোনও সমস্যাকেই মনে ঠাই দি না মানে এলিমিনেট করে দি। ছোটখাট বা বড়সড় সাংসারিক সমস্যা নিয়ে মনকে জেরবার করি না মানে ততক্ষণ প্রর্যন্ত তা এলিমিনেট করি, যতক্ষণ না তা সামনে আসছে। তা সামনে এল, মোকাবিলা করলাম মিটে গেল। দশদিন আগে থেকে মনকে বিমর্ষ করে লাভ কী! ছোটখাট ব্যাপার তো ধর্তব্যের মধ্যেই ধরি না আর তাই যখন যে বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করি তার অভ্যন্তরে ঢুকে যেতে পারি।


কথা কলমে যত সহজভাবে বললাম কাজটি কিন্ত অত সহজ নয়। এর জন্য লাগে অধ্যবসায় আর অনুশীলন। অনুশীলন কিভাবে করা যায়! আমি বলি ভুলে যাও। ধরুন বাইকে কিক মারতে গিয়ে ব্যাক করে এমন জোরে গোড়ালিতে ব্যথা লাগল যে বলবার মত নয়। আমি ভুলে যাই সে কথা। ব্যথার মত ব্যথা হতে থাকে আর আমার মত আমি কাজ করতে থাকি। একসময় ব্যথা কমে যায়। এমন হলে আমি তাকিয়েও দেখি না। এটা বিজ্ঞান সম্মত সত্য। মানুষ মনকে এভাবে কন্ট্রোল করতে পারে। ঠিক এভাবেই আর দশটা মানসিক ব্যথা বেদনা দুঃখ শোক আনন্দ ভুলে যেতে পারি নিমেষেই। চেষ্টা করলে সবাই তা করতে পারবে। আমার ছোট মেয়ে কিছুটা লব্ধ করেছে। তাকে আমি প্রশিক্ষণ দেই। এখন ব্যথা ট্যাটা পেলে বলে "বাবা ভুলে গেছি'।


যাই হোক চেষ্টা করলাম ঠিকমত বোঝানোর। কিন্তু একটা দার্শনিক ভাব বোঝান এত সহজ ব্যাপার নয়।


এবার ছোট্ট করে বলি এই এলিমিনেশন থিওরির সাথে কবিতা লেখবার সম্বন্ধ কী? আছে আর তা হলো এভাবে আর দশটা ব্যাপারকে এলিমিনেট করতে পারলেই মনকে একাগ্র করা যায় আর একাগ্রতা কবিতা লেখবার মূল রসদ। অর্জুন মাছটাকে এলিমিনেট করতে পেরেছিল আর তাই মাছের চোখটাই শুধু দেখতে পেয়েছিল।


আপনারা আমাকে যা ইচ্ছে তাই একলাইন লিখে দিন আমি সে লাইনে একাগ্রভাবে প্রবেশ করে আপনাদের কবিতা উপহার দেব।


আন্তরিক শুভকামনা সহ আপনাদের প্রিয় সঞ্জয় কর্মকার।