সাহিত্য কী!


আমার কোনও বই পড়া নলেজ নয় শুধুই আমার অনুভব ব্যক্ত করবার চেষ্টা করছি। আদতে বাস্তবেতে স্কুল লাইফ এর পর আমি কোনও বই পাঠ করি নাই বা করি না। শুকতারা আমার ফেবারিট বই ছিল তখন। খাবার সময়ও সে বই এর গল্পগুলি গিলতে গিলতে খেতাম। তাই আমার খেতে বেশ ঘন্টা লেগে যেত। বাবুর মানে বাবার শাসন ছিল আলগা। জোর করে কিছুই বাদ দিতে বলতেন না। শুধু বলতেন খাবার সময় বই পড়লে লোকে পাগল হয়ে যায়। আজ বুঝি কেন তিনি এত বড় মিথ্যে কথাটা বলতেন। চোখে জল এল।


সাইন্স ফ্রিকশন আর গোয়েন্দা গল্পগুলিই আমার ফেবারিট ছিল। গোগ্রাসে গিলতাম সে গল্পগুলি আর সেখান থেকেই আমার সাহিত্য চর্চা শুরু। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, কাজলা দিদির কবিতা, কথা কাহিনী, ছাড়পত্র, কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান, মন হারাতাম এগুলিতে আর এখান থেকেই সাহিত্য কী তা কিছুটা শিখেছি।


আমার অনুভূতিতে সেটাই সাহিত্য যা বা যে কাহিনি কথ্য ভাষা থেকে দূরে গিয়ে কিছুটা রূপক আর কিছুটা কথ্য ভাষা থেকে আলাদা ভাষায় উপলব্ধি প্রকাশ। বাদল বাবু স্যার বাংলা পড়াতেন। বার বার বলতেন গদ্যের ভাষা আর কবিতার ভাষা আলাদা। যেমন পদ্ম গদ্যের ভাষা কিন্তু শতদল কবিতা। এমন ভাবেই তার কাছে শেখা কবিতার ভাষা গুলি।


আবার সে প্রসঙ্গে চলে আসি ,সাহ্যত্য কী? আমার হিসেবে সাহিত্য তাই যা সাধারণে ব্যক্ত করতে পারে না। যার মধ্যে মৌলিকতা তো থাকতেই হবে, সুমধুর হতে হবে আর রূপক।


"আমি ভাল নাই কারণ সংসারে অনেক জ্বালা",  এ তো সবাই বলতে পারে কিন্তু আমি যদি বলি,


"নাই পানি তটিনীতে ধারা কীবা বহিতে,
সংসারে লহ মাতি, কী বা সুখ
কহিতে"।


একই কথা দুটোই।


আপনার কাছে কোনটা সাহিত্যিক প্রকাশ মনে হচ্ছে, বলুন।


সংযোজনঃ


নাই পানি তটিনীতে ধারা কীবা বহিতে,
সংসারে লহ মাতি, কী বা সুখ
কহিতে।
অশ্রুর ধারা বহে অনন্ত বিজনেতে
রাত কী বা দিন বহি-বহ্নির
ঘেরাটোপে।
অশান্ত লহরেতে তুফানেতে ঘূর্ণিত
ঘোরপাকে ঘনঘোর দিশা তারি
চিহ্নিত।
বায়ু বহে হলাহলে কোলাহল রব তারি
কুঞ্চিত ভাল তলে অশ্রুর ধারা
বারি।
জ্যোছনার ভরা চাঁদে কালিমাতে লেখা প্রাণ
দীঘলেতে তারি কায়া, হাহাকারে লেখা
গান।
পারি নাতো ফেলে দিতে বাঁধা তারি লাল ফিতে
দাসত্ব শৃঙ্খলে, বাঁধা তাতে দলে দলে;
জীবন।


শুভকামনা।