১ম ক্লাসে লিখেছিলাম যার কথা লিখছি তার মনের সাথে আমার মন সমানুপাতিক হতে হবে। কথাটি সহজ কাজটি কিন্ত এত সহজ নয়। দৈন্যন্দিন জীবনে আমরা কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হই। স্বার্থের সংঘাত লেগেই থাকে অহরহ। সবাইকে পিছে ফেলে আমি বা আমরা সফল হতে চাই। আর ঠিক এখান থেকেই শুরু হয় মানবিক অবমূল্যায়ন। আমার সফলতা কারুর যে দুঃখের কারণ আর তার মনের কী পরিস্থিতি হতে পারে তা আমরা চিন্তাই করি না বা চিন্তার ব্যাসার্ধের মধ্যে গন্য করি না। স্বাভাবিক কারণেই আমরা আজ অত্যন্ত স্বার্থপর। আজকের কম্পিটিশানের মার্কেটে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা আর দশজনকে পদ কুচলিত করে উপর সিঁড়িতে উঠতেই ভালোবাসি। তাহলে অনুভব বা একাত্মা আমরা কী হতে পারব। না , কখনই নয়।


এখানেই কবির মাহাত্ম। একজন কবি স্বার্থবিহীন হয়, শুধু কবিতা লেখবার সময়ই নয়, তার সার্বিক জীবনেও। মানবিক বোধ অনেক অনেক উঁচু হয় আর দশটা সাধারণ লোকের চেয়েও। লোভ আকাঙ্খা তার থাকে না। নির্লিপ্ত নিরহঙ্কার জীবন যাপন করতেই তিনি ভালোবাসেন। স্থিতধী হন তিনি মানে, সুখ দুঃখে তিনি একই প্রকার থাকতে পারেন। তিনি জ্ঞানের ভান্ডার অর্থাৎ সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি সহজেই ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে পারেন আর তাকে পদাঘাতও করতে পারেন রাগ আর ক্রোধে, যেমন করে কোমল শিশুরা।


মহানতা, উদারতা স্নেহ মায়া মমতা তার ভূষণ হয়। তিনি জীবজগতের বা মহাবিশ্বের রচনা বা সৃষ্টিকাহিনী জানতে পারেন। তিনি তার মৃত সত্তাকে আসল সত্ত্বা ভাবে গ্রহন করেন আর ভোগ কাম মায়া মোহ বিহীন হন। আর তাই তিনি ভূত ভবিষ্যৎ সবই হাতের মুঠোয় রাখেন। একজন কবি হওয়া মুখের কথা নয়। তাই যদি হতো তবে বিভিন্ন পেশায় সর্বাধিকারীরা কবির কোনো মর্যদা দিত না। কিন্তু তারাও একজন সফল কবিকে দেবতা রূপে পূজা করে থাকেন, যেমন রবিঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম।


কতখানি উদার আর জ্ঞানের অধিশ্বর হলে পশু পাখি নর নারায়ণ ঈশ্বরের সাথে সমানুপাতিক হওয়া যায় তা কল্পনার বাইরে। আর তাই একজন কবি মানে একজন সাধক আর মুনি।


এ পর্যায়ে আসতে পারলেই একজন মানুষ অন্য আর কোনও প্রানীর সাথে একাত্ম হতে পারে মানে তার আত্মা ধারণ করতে পারে আর তার কথা লিখতে পারে।


কেউ কেউ স্বভাবসিদ্ধ আর কাউকে তপস্যা করে এ বল অর্জন করতে হয়। এ এমন কিছু অসম্ভব নয়।


এ বল অর্জন করতে হলে, আমার মতে যারা এ বল অর্জন করতে চান তারা সবাই শ্রী ভগবত গীতা কিনে আনুন আর তার তাৎপর্য সহকারে তা আত্মস্থ করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে জাগতিক মোহর বন্ধন আপনি অতিক্রম করতে পারবেন। পারবেন দুখী বা সুখী মানুষের আত্মা বা যে কোনও প্রাণীর আত্মা আপনার মধ্য টেনে নিতে। পারবেন সিদ্ধিলাভ করতে আর যার কথা লিখছেন তার মনের সাথে সমানুপাতিক হতে।


যাই হোক, অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেললাম। পরের সংখ্যাতে আবার কবিতায় ফিরে যাব। তার পরের সংখ্যাতে আবার জ্ঞানের আলোচনা। পর্যায়ক্রমে চলবে কবিতা লেখবার ক্লাস।


অনেক অনেক শুভকামনা সহ আপনাদের প্রিয় সঞ্জয় কর্মকার।