Sanjay Karmakar
22 hrs  ·
জীবনমুখী লেখা, "সংসার", চতুর্দশতম খন্ড
(চতুর্দশতম খন্ডটি পাঠ করবার আবেদন রইল)


কাননেতে তার-সংসার, প্রষ্ফুটে শত কলি
কত না পূজিত মন্দিরে তা; কত শত হয় বলি।
ক্রূরতায় উন্মত্ততায়- জ্বলন ও দহনে প্রাণে
সত্তা হেথায় বিষময় বায়, স্ফুরণে গগন পানে।


হিংসা ও ক্রোধ, কাম ও রিপুর; আবর্তেতে নীড়
মলিন হেথায় হৃদ সে সাগর; হাল আজি অবনীর.
নীড়েতে আজিকে নীববে বাহিত গরল সে তার স্রোত
ধর্ম আজিকে হানিতেছে ঘাত, বিছায়িত রণপোত।


বিশ্বপাতার পাতায় পাতায় রণিত সে নাদ তারি
বাজিতেছে সুর বিষাদ বিধুর বাজিতেছে রণভেরী।
তূর্য সে তার শৃঙ্গ শিখর; দেশ হতে দেশ ধায়ে
বিষম বিধায়ে সবারে কাঁদায়ে; খল সে অভিপ্রায়ে।


সে দায় কে তায়! স্কন্ধেতে বায়, কহিতেছি মহামতি?
সুজনে কূজনে পালিত এ মন-পূজিতেছি দিবারাতি।
হেতু কিবা তার, জানিবার; ধাবিত এ মন তায়
রচিতে গড়িতে সৃজন ও সমনে কিবা সে অভিপ্রায়!


কানন>উদ্যান, সত্তা>অস্তিত্ব, এখানে জীবন, বায়>বায়ু, স্ফুরণ>জ্বলজ্বলে, জাজ্বল্যমান, আবর্ত>ঘূর্ণি, রণপোত>রণতরী, যুদ্ধজাহাজ, রণভেরী>শিঙ্গা, তূরী, তূর্য>শিঙ্গা, শৃঙ্গ>সরু চূড়া, শিখর>সর্বোচ্চ সীমা, খল>খারাপ, অভিপ্রায়>উদ্দেশ্য, স্কন্ধ>ঘাড়


জীবনমুখী লেখা,"সংসার" প্রথম খন্ড


মায়ায় ঘেরা এই সংসার বুঝেও অবুঝ মন
আঁখিরো দোলেতে এ পাড় কূলেতে নীরব সমর্পণ।
কখনো ঝঞ্ঝা কখনো তুফান; রৌদ্র খরতাপ
কেহ বহে সুখ সোনার চামুচ কেহ করে অনুতাপ।


আষাঢ় ভাসায় হেথা, বারি জলে একাকার
শরৎ-এ শিউলি, সুবাসিত ভোর-মোহন হেথায় দ্বার।
জৈষ্ঠে জমিন ফেটে ফেটে হীন, চাতকের হাহাকারে
শুষ্ক হেথায়ে জীবন দহন-নাহি পারে সহিবারে............


কেহ নাই পল রোদন ও বিজনে-আগে পিছে নাই কেহ
তাপিত সে ক্ষণ সঙ্গ সাধিতে; নাই প্রেম নাই স্নেহ।
আপনার গেহ আপনি বহিছে নিরত সদাই রণে
বিরূপে বিহনে আপনার জনে দহনে গোপনে প্রাণে।


অহিত সাধনে অহি সে স্বরূপে দিন যায় কাল বেলা
বিঁধিতে তূণেতে বিপ্রতীপেতে ভাসায়ে সে কূট ভেলা।
বহ্নি বাহারে আহারে বিহারে বধিতে সে কূল নরে
আপনার জনে আপনি বিখারে-অহম ও অহঙ্কারে।......(চলবে)


জীবনমুখী লেখা,"সংসার",দ্বিতীয় খন্ড


বোধে নাই সার মৌন মুখর আড়ালেতে ফাল ঢালি
সমুখে বাহার সুবাসিত দ্বার-মুখরে কুসুমে মেলি।
বিরাজে বিজয়ে ক্ষয় আর লয়ে-বিরামে নাহিকো ক্ষণ
রচিতে গাহিতে কূজনে বাহারে-আপনি শোভিতে মান।


স্থবিরতা তায় জড়ায়ে হৃদয় গিরিখাতে কিনারায়
উত্থানে গীত গীবতে অসাধে-পঙ্কে সাধিতে হায়।
মর্মে তাহারি গগনো বিহারী-অভিলাষে মন ধায়
রকমে সাধিতে পুরী-তে বাহারে নব নব লতিকায়।


লাভ ও অলাভে আপনার হিতে নাদিত সে সুর-ধ্বনি
স্বপ্ন জড়ায়ে হৃদ সে ভরায়ে তাল লয়ে রিনি ঝিনি।
বিকিকিনি তায় আপণে নিলয়ে-অভিযানে অভিপ্রায়ে
বোধ হীন তল দীন সে স্তবক- বাসনা রসনা লয়ে।


সাধিতে কড়ি-তে আপণে ভরিতে লিপ্ত ছলেতে নতি
দয়া হীন কায় কামনাতে ধায় দিবশ ও রজনী মাতি।
সংসারে সার বাহিত সে ভার লতায় পাতায় জনে
আর কিছু নাহি ধন শুধু চাহি-তথায় নিরত ধ্যানে।......(চলবে)


গীবত>চুকলি,পুরী>প্রাসাদ, আপণ>বিপণী, দোকান, নিলয়>বাসভবন, নতি>অনুরক্তি,আগ্রহ


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", তৃতীয় খন্ড


বিভেদ ও বিবাদে বিপ্রগমনে বিয়োগেতে বিভাজনে
অসূয়া হেথায়ে প্রকার ও বিকারে নিত্য আঘাত হানে।
শয়ন  ও স্বপণে গোপনে লোচনে ষড়ন্ত্রনের প্রীতি
নীরবে গগনে লোলুপে বিহারে বিমুখেতে প্রাণ গতি।


অশ্রু হেথায় বিঁধতে সে প্রাণ ভাদর ও আষাঢ় ভরে
নিত্য অভাব অলাভেতে হৃদ, প্রমোদ গুমরে মরে।
স্বপ্ন রঙিন আর্ত মলিন-অলীক কুসুম ধায়
বিবাদে বিজনে নীরবে কূজনে; স্তিমিত এ প্রাণ হায়।


তারি মাঝে বয় স্নিগ্ধ কোমল প্রবাহনে সুশীতল
নাই বিষ তায় মন্দ মলয়-সুরোভিত সুকোমল।
সাধ্বী সে জন সাধনে ভজনে সদনে সেবায় রত
অসূয়া তথায় ছুঁতে নারে তারে-নীরবেতে অবিরত।


অমলে অরুণে সাধনে আচারে-আঁকড়ে নিবিড়ে প্রাণ
বহু সে কমলা শোভিত সুবাসে; গূঢ় সে বিভেদ মান।
বৈভবে তার প্রকাশ সে জন-চারুতে বাঁধিতে নীড়
প্রেম ধন তার, সে ধন সাধন-কাননেতে সুনিবিড়।.......(চলবে)


বিপ্রগমনে>পিছন পানে চলা,অসূয়া>অপকারেচ্ছা, হীনতা, লোচন>চোখ, ষরন্ত্রন>ষরযন্ত্র, বিহার>ভ্রমণ,  অলীক কুসুম>অবাস্তব, সাধ্বী>সচ্চরিত্র, সদন>বাসভবন, অমল>নির্মল, আঁকড়ে>দুহাতে জড়িয়ে ধরা, গূঢ়>অতিপ্রাকৃত, চারু>কমনীয়


জীবনমুখী লেখা,"সংসার",চতুর্থ খন্ড


সুরভি সে তায় ছড়ায়ে আলয়; অনুরাগে দেয় দোলা  
বন্ধনে নীড় স্নেহ সুনিবিড়; সে তল ভাসায়ে ভেলা।
নিরোধে বিরোধে সদনে বিরাজে, দমনে বিভেদ তায়
জারণে আপনে-হিত প্রণয়নে; আপনি বিলায়ে যায়।


রক্ষ রূপেতে রমণ ও দমনে কত শত শূর বীরে!
স্থলনেতে নীচ, অধমো আচারে-উপণিত হয় নীড়ে।
পীড়ণে কাননে কুসুমে সে তার, পীড়িত সে জন তায়
নিঘাতে নীরবে সাধনে নিলয়ে; নিথরে সহিয়া যায়।


ব্যথায় ব্যথায় সার, সংসার; ভ্রমিতে সে লোক তায়
সুখ আর দুখ বাহিত সে লোক; ন্যায় নীতি আর অন্যায়।
কখনো রবেতে কখনো শবেতে, প্রেম পরিণয়-প্রীত
আশাহত; কভূ গগনো বিহারী-গাহিত জীবন গীত।


ধারাপাতে তার গণিতে ফলিতে, চপলো সে কাল ক্ষণ
কভু সে সুখের সাগরে শায়িত-কভু দুখ আনয়ন।
সমরে সমুখে বাণ আর তূণে; বাহারে জীবন ভাতি
ক্ষনিক সে পল সুখ আর দুখ-ঘূর্ণনে দিবা রাতি।


পীড়ন>যন্ত্রণা, প্রণয়ন>রচিত কোনো কিছু, রক্ষ>দানব, স্খলন>বিপথগমন, নীচ>জঘন্য,ফলিত>ব্যবহারিক, আনয়ন>প্রস্তাবনা


জীবনমুখী কবিতা,"সংসার", পঞ্চম খন্ড


অ-সুখে অলাভে স্রবণে দ্রবণে-পরিহারে খল তায়
আনিত সুখের-ই দ্বারেতে দুয়ারে, সুখ বহে দ্বারকায়।
আচারে বিচারে বিছায়িত ক্রূর; ক্রূরতা যথায় ধ্যান
সে জন বিজনে পতিত গহীনে, দীনতা তাহার মান।


আপনার জনে আপনি নিরিখে তমসা যেথায় রাতি
উগ্র যেথায়ে অভিলাষে মন-কামনাতে মন মতি।
হলাহলের ওই, বাষ্প সে বিষ-সমীরণে তার ধায়
প্রণয় ও প্রেমের অবসান হায়! বিয়জনে প্রত্যয়।


রুদ্র রূপেতে সাধ্য সাধনে ভাঙনে সে বাঁধ তায়
কাম ক্রোধ আর রিপুরো স্ফুরণে পশু সম ক্রূরতায়।
তিক্ত সে পল নিপীড়নে ধায় পতিত সে কূল দ্বারে
আশা ভালোবাসা, নাশ করে তায়; সংহারে সংসারে।


আপনি বিলোপে বিলাপে বচনে-দুঃখ সেথায় ঝরে
পূজনে নাহিকো পুরীতে সাধনে, সার নাই সংসারে।
সার ও অসারে বাহিত সে নদ বোধে তার হয় মান
যে জন সেবিছে মননে মানসে-কভু নহে ম্রিয়মান।......(চলবে)


ক্ষরণ>ক্ষরণ, দ্বারকা>স্বর্গের দ্বার,সমীরণ>বাতাস, প্রত্যয়>আস্থা, বিলোপ>ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া, ক্রুরতা>নিষ্ঠুরতা, সংহার>হত্যা, ম্রিয়মান>নত হওয়া


জীবনমুখী কবিতা,"সংসার", ষষ্ট খন্ড


প্লবতার সনে যে জন বুনে বাঁধনে সে তল লোক
বন্ধনে প্রেম গাহিতে কূজন; তার ইহলোক পরলোক,
প্রভা সে তাহার সুবাসে বাহার জ্যোতিময় হয় কাল
সুরোলয়ে গীত পূজনে সে তার; সুরভিত হয় ভাল।


সৌরভে তার সদনে সমরে, কাল নাহি তার ক্ষয়
জরা ও অসুখে লভিতে সদনে আপনার জন রয়।
সাধিতে অহি-তে হিংসা ও দ্বেষে-প্লাবনে যে কূল নরে
জরা কালে তার গতি সে হারায় পঙ্কে জীবন ভরে।


ধন কী সাধে! সাধ্য সাধন-ঐক্য যেথায় বল
দৃঢ়তা যথায় বন্ধন গীত; মমতা তথায় ঢল।
মরম যেথায় নমনীয় রয়, রমণী যথায় প্রাণ
জীবনী তথায় উচ্ছলতায় গাহিতে জীবন গান।


মর্ম যেথায় কর্মে বাঁধা শিকড় যেথায় তল
গহীন যথায় হৃদ সে মোতি তথায় অবিরল,
শ্রান্তি নাহি ভ্রান্তি সে নয়-গুঞ্জরণে অলি
মানব তথায় দীপ্তি শিখায়, মলিন নহে ডালি।


প্লবতা>হালকা মেজাজ, ভাল>কপাল, প্রাণোচ্ছলতা, অহি>সর্প, সৌরভ>সুগন্ধ, সমর>যুদ্ধ, লভিতে>লাভ করা, পাওয়া, নমনীয়>কোমল, নম্র, সদন>বাসভবন, প্লাবন>বন্যা, আকস্মিক বিপর্যয়


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", সপ্তম খন্ড


যে জন বোধনে আপনার মনে জাগায়ে জ্ঞানের বাতি
ভাসায়ে সে তার ভেলায় প্রেমের, ভবনেতে দিবারাতি।
যে জন আলয়ে আবহে নিশানে ধারণে মানব ধন
প্রেরণা সে তার হয় পারাবার - মহীয়ান তিনি হন।


চিত্ত বিহারে বিরূপে বিধানে বিমোচনে দায় ভার
কূজনেতে কূ গাহিতে যে নর বাহিত অঙ্গনে তার,
পারাবার! পারাবার তার লঙ্গনে দ্বার-অকূলে পতিত নরে
নিশা সে তমায়, আলয়েতে তার; সার বোধে সংসারে।


সংসার! ডালে ডালে তার, পাতায় পাতায় আলোছায় করে খেলা
নিত্য সে লোক ভবলোকে তার মেলা বসে দুই বেলা।
ব্যাপার ও ব্যাপারী আপনো আচারি কভূ জিৎ কভূ হার
মেলা তার মোল, মৌলিক প্রেম-সাধিতে সে লোক দ্বার।


ক্ষণিকের প্রেম হীরে মোতি হেম-ক্ষণ সে প্রভায় তায়
বিরোধে বিবাদে অবাধে সাধিতে, হরিত সে সুখ হায়!
স্মরণে মরণে সে লোক মননে-ভাবে নাই তার গতি
সাধনেতে তার অমোঘ যে দ্বার; জগৎ সে তার পতি।.........(চলবে)


মহীয়ান>পরম, সর্বোচ্চ, পারাবার>সমুদ্র, লঙ্গন>অতিক্রম করা, অঙ্গন>উঠান, এখানে গৃহ বা বাসভবন, নিশান>ধ্বজা, পতাকা, মোল>মূল্য, মৌলিক>প্রাথমিক, হেম>স্বর্ণ, হরিত>হৃত, হরণ বা চুরি যাওয়া


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", অষ্টম খন্ড


জাগতিক ধন কামনায় মন লালায়িত যার গতি
সাধনে নিখিলে লিপ্ত সে বায়-সে ধন তাহায় প্রীতি।
অধঃপতনে অবরোহে তায়, বিছায়ে সে জাল তার
বধ্য সে ভূম, বধিতে ক্রোধিত- অসারেতে সংসার।


বিকাশে বোধনে সাধিতে সে রণ হৃদ সে মোতির গিঁট
চালিকা সে হয়- চলন ও বলনে, সম্মেলনীর রীত।
সহায়ে অসারে পূজনে তাহারে ন্যুব্জ যে জন তায়
বলয়ে সমীপে আপনার দ্বীপে আপনি সুবাস বায়।


বিপণি বাহারে আপনারে জনে জপিতে জীবন ভাতি
পরিহারে হৃদ প্রেম সে বলয়-দিবস ও রজনী মাতি,
সে জন তমায় নীড়ে আপনায় সাধনে সে প্রেম ব্রত
আপনি বিরাজে আপনার লয়ে, আপণেতে অবিরত।


সুখ আর দুখ-্সমুখে স্বরূপ, আগে পিছে ঢাল রাহে
পলকে সমীপে, বিরাজে সমরে-কাঁটা বিঁধে আপনাহে,
সে জন কানন কাননেতে মন, নাহিকো বিরতি তায়
সংসারে সার বাহিত তথায়-নাহি ক্ষয় নাহি লয়।........(চলবে)


লালায়িত>লোভী, অবরোহ>অবতরণ, নিচে নামা, ন্যুব্জ>নমিত, নত, এখানে খারাপ অবস্থা বলতে বোঝানো হয়েছে, বিপণি>ভাণ্ডার, লয়>ক্ষয়,অবসান, সমীপে>সামনে, আপণ>দোকান, কানন>উদ্যান, এখানে নিজ বাসভবন রূপকে ব্যাবহৃত


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", নবম খন্ড


গোপনে দহনে বেদন ও রোদনে কত না প্রহর গোনে
আঁখি ধারা সনে নিত্য হেথায়ে; অনলেতে বিষ বাণে।
অহিতে নকুলে ছলে এ মহীতে-রুধিরে বাহিত নদ
সাধিতে সে রণ বিরূপ বিধান, বিনাশিতে কোকনদ।


সে নদ তাহার দুকূল বাহার সুখ ও দুখের ধারা
দীপ্ত সে কূল সুখের অঙ্গন; আর পাড়ে দিশেহারা।
দীপ্তি হেথায় সৌম্য সে তার, বাহারে জীবন ভাতি
ও পার দুয়ার তমা সে আঁধার জপিতেছে দিবারাতি।


আলোক ও আঁধারে বড় সে ধাঁধা রে, সংসারে সীমানাতে
কেহ সুখ তার, সাধিছে সে রণ-কেহ বহে বেদনাতে।
ধনের-ই আকরে বাহিত কেহ বা-নির্ধন কত শত
কেহ সে সাধিছে সোনার চামুচে কেহ রহে আশাহত।


অকূলে ভাসিতে সে তল নাশিতে কত শত বায় ভেলা
কতনা সুখের গাঙেতে ফেরি-তে-নিত্য সে দুই বেলা।
বাহারে অরূপে সে তল স্বরূপে; কোমলে কঠিন তল
কভূ সে গরলে নিহিত তথায়ে, কভূ ফোটে শতদল।.........(চলবে)


অহি>সর্প, নকুল>বেজি, বিরূপ>বিরোধী,  মহী>পৃথিবী, এখানে বাসগৃহ, সৌম্য>ঐশ্বর্যশালী, কোকনদ>জলপদ্ম, এখানে সংসার, শতদল>পদ্মফুল


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", দশম খন্ড


কভু সে তরণী তির তির তির সৌম্য সে তার রূপ
নীড়ে তার দোল ফাগুনে বাহারে-স্নিগ্ধ সে অপরূপ।
শ্যামলে অমলে সে দোল তাহার; বিমলে নিখিল ধায়
সমীরণে তার কুহু কুহু গীত-শুভ তারি বারতায়।


অর্ণবে তার জলধি বাহার উছলি পুলকে দ্বারে
প্রশান্তির ওই রঙ সে আভায়; পূজনেতে সংসারে।
আবিরে লালিতে ফলিতে সে তার, জৌলুসে ভরে প্রাণ
মঙ্গল গীত ঘিরে নীড়ে গায়-সাম্য সে তার গান।


বিধির বিধান! বিধানে তাহার, সে রথ সমীপে দ্বারে
হেথায় প্রাপ্তি রোগ ভোগ ক্ষয়, তাহারি অভিপ্রায়ে।
কেহ নাহি তার বাহির মায়ার-কেহ নাহি নারী নরে
ইশারাতে তার বাহিত সে দ্বার সার হেথা সংসারে।


দ্বারে দ্বারে লতায় পাতায়; জনে জনে বায় দাঁড়
কৃপা ক্রোধে তার জীবন বাহার কভূ জিৎ কভূ হার।
রঙের বাহার-সংসার; সে দায় বহিতে নরে
রজ্জুতে তার দুলিছে দোদুল ভব লোক সংসারে।............(চলবে)


তরণী>নৌকা, সৌম্য>ঐশ্বর্যশালী, সমীরণ>বাতাস, অর্ণব>সাগর, ফলিত>ব্যবহারিক, সমীপে>সামনে, রজ্জু>দড়ি


জীবনমুখী প্রকাশ,"সংসার", একাদশতম খন্ড


সংসার! এই পাড় তার ভানুর প্রকাশ, ওই পাড়ে নিশা তার
বিষাদে বিরহে বিরূপে বিধায়ে-ভব নদী পারাবার।
মন্থনে তার পীযূষ বাহার ভাঁড়ারে সে ধন তার
তারি সনে বিষ, হলাহলে তার মিলে মিশে একাকার।


সংসার! বিধাতার, বীণেতে বাদিত-রিনি ঝিনি তার সুর
বাহিত সে নদ কোকনদ আর, গীত গানে সুরাসুর।
দ্বন্দ্ব হেথায় সদা সেথা রয়; দিবস ও রজনী মাতি
হিংসা ও দ্বেষ প্রণিধানে তায়, সে ছল তাহায় নতি।


ভ্রান্তি হেথায় বিলাস তাহার ডালে ডালে ছায় হেথা
রুধিরে বাহিত কভূ সে প্রলয়; কভূ সে প্রেমের গাথা।
বহ্নি হেথায় কালে কালে বয়, দিগ্বিজয়ের আশে
ক্রোধ বারি তার উন্মেষে তায়;শত কত প্রাণ নাশে।


আর্ত মেদিনী হাহাকারে রব-চারি সে দিশায় ধায়
কলুষে বাতাসে জহরে সে নাদ; কালে কালে হেথা বয়।
হেথায় অশ্রু হর্ষ হেথায় ; দুই রঙ দুই ধারা
সুরেতে, কভূ তা বেসুরে বিষাদে-বাহিত বসুন্ধরা।


ভানু>সূর্য, মন্থন>ঘাঁটাঘাটি করা, পীযূষ>অমৃত, হলাহল>বিষ, উন্মেষ>জাগরণ, প্রণিধান>নজর, অভিনিবেশ, নতি>অনুরক্তি, জহর>বিষ


জীবনমুখী লেখা,"সংসার", দ্বাদশ খন্ড


উৎপীড়নের স্থল সে তথায়-ধর্ম দেশ ও জাতি
উদ্গিরণে বিষ বিছায়ে-বজ্জাতি দিবা রাতি।
ধ্বজা সে তার পীড়ন নিদান-ধর্ম তাহার তল
কলুষে ক্রীড়াতে ক্লেশেতে বাহিত, হেথায় অনর্গল।


হেথায় আর্য হেথা অনার্য-পুরান ও কুরআন যথা
বর্ণেতে ভেদ, ভেদিতে সে লোক-বিভেদের ইতিকথা।
মরুৎ-এ হেথায় কুন্ডলে তায়-ভ্রমেতে এ লোক নতি
অরি সে ক্ষণেতে; ধাবিত রণেতে, আশাহীনে ধায় গতি।


রুদ্র প্রলয় কালে কালে তায়-বিনাশে সে তল লোক
ক্রন্দনে গীত,নিনাদে গগনে; রুধিরেতে বায় শোক।
গরজে স্বরাজে দরাজে নাহিকো-দলন ও দমনে তার
উষ্মা সে তার বিকট ও বিকারে, হরা ভরা সংসার।


বীর্যে হেথায় সৌরভে তায় শত কত শূর বীরে
পুষ্প সে তার দলের বাহার-অভিধায় অবনীরে।
সে সুখ নীড়ে পূজনেতে বীরে; ধন্য সে গীত তার
রুদ্র, কভূ সে সুখকর অতি- ধূপ ছায়ে সংসার।.........(চলবে)


উৎপীড়ন>দৈহিক বা মানসিক তীব্র যন্ত্রণা দেওয়া, উদ্গিরণ>অগ্ন্যুত্পাত, বিদারণ বা বমি, পীড়ন>অত্যাচার, ক্লেশ>নিদারূণ যন্ত্রণা, মরূৎ>বায়ু, অরি>শত্রুতা, দরাজ>উদার, প্রশস্ত, উষ্মা>তাপ, ক্রোধ, অভিধা>সংজ্ঞা


জীবনমুখী প্রকাশ,"সংসার", ত্রয়োদশ খন্ড


রতি আর কাম এ তল নিহিত; রূঢ় সে বিবেক তার
কভূ সে পূজিত নারী সে মাতায়ে-বিরূপে বলাৎকার।
ফুল দলে তার দলন ও রমনে-ব্যথিতের ইতিকথা
হিংসা যেথায়ে ছড়ায়ে সে তল; লিখিত সে তার গাথা।


গর্হিত হায়! দোহনে তাহায়, দহন ও জ্বলনে তার
রণিত সে নাদ অনুনাদে তার-পাপে ভরা সংসার।
বিধাতার, কী বা তার! কদাকার; কুশ্রী তাহার মতি
তাহারি বিধান! জনে জনে দান, সাধনেতে মহামতি!


রজ্জু সে তার দোলনে তাহার দুলিতেছে নারী নরে
পাপ আর তাপ, ব্যথা দুখ শোক-সকলি তাহারি বরে!
পাপাচারে; আচারে বিচারে-আচরণে আরোধায়
দুরূহ সে তার, জটিল ও কঠিন; কী তার অভিপ্রায়?


হানিতে গ্লানিতে শোণিতে প্রাণীতে বিরূপ বাহার তায়!
কেন হে পরম হরণে মরম- মৌন সে দ্বারকায়?
বধিতে অরিতে উজাগরে নাই-বধ্য এ ভূম তল
নাশিতে তাহায় সহায়েতে তায়; পাপ তাপে অবিচল?.........(চলবে)


রতি>সঙ্গম, সহবাস, রূঢ়>কর্কশ, গর্হিত>জঘন্য, অনুনাদ>প্রতিধ্বনি, পুনরাবৃত্তি, দুরূহ>কঠিন, শোণিত>রক্ত, মৌন>উহ্য, সোজাসুজি বা স্পষ্ট বলা হয় নাই এমন, দ্বারকা>স্বর্গের দ্বার, উজাগর>বিনিদ্র, নিদ্রাহীন