১৮৫৬ সালের একুশে এপ্রিল অস্ট্রোলিয়া শ্রমিকরা একযোগে সারাদেশে কর্মবিরতী পালন করেন। তাদের দাবি একটাই কাজের সময় সীমাবদ্ধ করতে হবে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা। সেখান থেকেই শুরু শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার সময়ে সবচেয়ে বড় তিনটি শ্রমিক সংগঠন ‘‘দি ফেডারেশন অব অরিজিন্যাল ট্রেডস এন্ড লেবার ইউনিয়স্ অব ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড কানাডা (ফটলু), দি নাইটস্ অব লেবার (কেওল) ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কি পিপল এসোসিয়েশন’’ এই সংগঠন গুলো একজট হয়ে সারা দেশে শ্রমিকদের নিয়ে একযোগে ধর্মঘাট পালন করেন। আর সে ধর্মঘাট দিনটি ছিল ১লা মে। শ্রমিক পক্ষ কেওল শ্রমিকদের ফুসলিয়ে আন্দোলনের মাঝে ফাটল ধরার চেষ্টা করে। এভাবে সারা যুক্তরাষ্ট্রের একযোগে বড় বড় শহর গুলোর মাঝে ধর্মঘাট ছড়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি লোক জামায়াত হয় শিকাগোতে। প্রায় লক্ষাদিক শ্রমিক এক হয়ে ধর্ম বর্ন ভেদাভেদ চলে আসে এক পতাকার তলে তাদের দাবি একটাই ৮ ঘন্টা কর্মদিবস তাদের স্লো-গান ৮ ঘন্টা ঘুম, ৮ ঘন্টা শ্রম, ৮ ঘন্টার বিনোদন। তার পর ১৮৮৬ সালে ৩ মে মালিক পক্ষের প্রতারনার স্বীকার কেওল শ্রমিকরা যে কারখানায় কাজ করে সেই কারখানার পার্শ্বেই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে শ্রমিকদের সাথে মালিক পক্ষ একটা দন্ড লেগে যায় এবং পুলিশ দিয়ে পরিবেশ সামলার সামে গুলিবর্ষন করে। তারপর শ্রমিক নেতা স্পাইস পুলিশকে দায়ি করে প্রতিবাদ পত্র মজদুরো প্রস্ত্তত হয় শ্রমিক হত্যার প্রতিশোধ নেও। প্রতিকার প্রকাশের মাধ্যমে শ্রমিকরা আরও স্বংক্রিয় হয়ে উঠেন। শ্রমিক নেতা স্পাইস সেদিন সভার মাঝে বক্তব্যে দিতে বলেন, ‘‘এ সভা কোন বিশৃঙ্ঘলা জন্য নয়। বরং উদ্দ্যেশ্য ৮ ঘন্টা কর্মদিবস সম্পর্কে সবাইকে অভিহিত করা’’। তারপর শ্রমিক নেতা পারসন বক্তৃক্তা শুরু করেন। এরই মাঝে ১৮০জন পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র সস্ত্রু নিয়ে হাজির। পরিস্থিতির শান্ত। পুলিশের কিছু করার নেই। হঠাৎ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে  বোমা বিস্ফারিত হয়। বোমায় পুলিশ অফিসার ম্যাথায়েস জে জিগাস মারা যান। পুলিশরা ক্ষোভের রাতের অন্ধকারে একযোগে গুলিবর্ষন শুরু করে। অনেকের ধারনা পুলিশটা নিজেরাই নিজেদের গুলি করছে। সেখানে পুলিশ নিহত হন ৭ জন আহত ৬৫ জন। আর শ্রমিক নিহত হন ৪ জন আহত ২ শতাধিক। এর পর ঘটনা আরও দুঃখজনক পুলিশ হামলাকারিদের সনাক্ত করতে না পেরে পুলিশ ৪জন শ্রমিক নেতাকে  গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ১১ই নভেম্বই ১৮৮৭ সালে কোন প্রকার প্রমান না থাকা সত্বেও শ্রমিক নেতা আলবার্ট পারসন আগস্ট স্পাইস জর্জ এনগেল এবং ফিসারকে ফাসির দরিতে ঝোলায়। ফাসির সময় আগষ্ট স্পাইস চিৎকার করে বলেন, ‘‘আজ হয়তো তোমরা আমাদের কন্ঠরোধ করছো। কিন্তু একদিন আমাদের নিরবতাই হবে অধিক শক্তিশালি’’। আর এই নিরাবতার কালের সাক্ষীদের জীবন বিসর্জনের ফলে ১৮৮৯ সালে পেরিসের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সর্বোচ্চ কাজের  সময় ৮ ঘন্টা নির্ধারনের দাবিতে ১৮৯০ সালে ১মে বিক্ষভ প্রস্তাব পাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, চিলি, পেরু সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেই দিন স্বতঃস্ফুর্তভাবে মে দিবসে বিক্ষব অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই মে দিবস, শ্রমিকদের দিবস এবং বিশ্ব শ্রমিক দিবসের পৃথিবীর সবদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একযোগে পাল হয়ে আসছে। শ্রমিক নেতা স্পাইস তার জীবন বিজনের মাধ্যমে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারন করেন কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা আশুলিয়া তাজরিন গার্মেন্টের আগুনে পুড়ে জীবনের কি সাফলতা পেয়েছেন। শুধু মালিক পক্ষের অবহেলার জন্য রানা প্লাজার ৮তলা ভবনের নিচে পিপিলিকার মত পিসে জীবন বিসর্জন দিতে হয় ১ হাজার ১’শ ৩৪ জন শ্রমিককে। কি পেয়েছে অসহায় হাজার হাজার শ্রমিক যারা এই রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে আহত এবং মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে এই কি আমাদের দেশের শ্রমআইন। এই কি আমাদের দেশের ন্যায্য অধিকার। শ্রমিকরা অধিকার আদায়ের দাবিতে আজও কাঁদে।  ১৮৫৬ সাল থেকে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের কান্না শুরু। আজ ২০১৪ সালেও তাদেরকান্না থামেনি। জানিনা। তাদের দাবি আদায়ের কান্না কবে থামবে। আমিতো শুধু এটাই জানি শ্রমিকরা মালিক পক্ষের অবহেলার নৃস্বংহভাবে জীবন বিলিয়ে দিয়ে কেদেই চলছে। আজও কাঁদছে।


*****************************
এস এম জাহিদুল ইসলাম জাহিদ
সভাপতি
যুগান্তর স্বজন সমাবেশ
সাঘাটা, গাইবান্ধা।