আফ্রিকার ঘন জঙ্গলের কোল ঘেঁষে ঘেঁষে
নিকষ আধাঁরের মাঝে এ কোন কালো মানিক জ্বলে?
ভদ্রতার  ভেকধারী সাদা দের অভদ্রতার মাঝে
এ কোন বীণার বাণি উঠে?
সভ্যতার ভাঙা মিনারে দাঁড়িয়ে,
ভগ্ন দালানের পাশে, ছাই ভস্ম মাড়িয়ে
নতুন পৃথিবী গড়ার ডাক দেয়
কালের মহা পুরুষেরা, ইতিহাস কথা কয়।
মাদিবা থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা
আজ তোমাকে ঘিরেই আমার এ কাব্যগাঁথা।
তুমি বলেছো গায়ের রঙ নয় বরং
মনের রং ই আসল রং, অভিজাতের
রক্ত বলে কিছু নেই, সবার রক্তই লাল!
দেহে মেলানিনের উপস্থিতিতে সাদা আর কালোর প্রভেদ
তাতে মানুষের কি হাত?
কিন্তু অযুক্তির কাঠামোতে যুক্তির ভেকধারীরা
তোমার টুটি চেপে ধরে, কোটি মানুষের
অধিকারকে পিষ্ট করে, নির্বাসিত তুমি কুখ্যাত রবিনসন দ্বীপে।
৪৬৬/৬৪ নম্বর কক্ষে ভারী দেয়ালের নিচে তোমার কন্ঠ চাপা পড়ে,
কিন্তু প্রতিবাদী মনের নিরব ভাষা যে গোপন ইথারে ভেসে অধিকার
বঞ্চিতদের কানে কানে সুর তোলে সুনামির তীব্র স্রোতের সৃষ্টি করে
তা নিকৃষ্ট রক্ত পিপাসুরা যুগে যুগে ভুলে থাকে।
অতপরঃ ড্রাকুলার রক্ত বাঁধা পেড়িয়ে তুমি জনগনের মাঝে মুক্ত মানুষ রূপে।
তুমি পারতে চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিতে
কিন্তু ক্ষমাই যে ঐক্য গড়ে, আলোচনা, সংলাপ ই
যে একমাএ সমাধান তাই তুমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছো।
বিভক্ত জাতি, বিভক্ত সমাজ, বিভক্ত
গোত্র, বিভক্ত চেতনাকে তুমি এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছো।
সাম্রাজ্যের গন্ডি পেরিয়ে মানব রাজ্যে নিয়েছো ঠাঁই।
আজ তুমি নেই অথচ দেখ
কালো আর সাদা বালিকাটি গলাগলি ধরে কাঁদছে!
প্যারিসের রাস্তায়, লন্ডন,
ওয়াশিংটন পেরিয়ে ঢাকার সন্ধ্যায় সোডিয়ামের আলোতে মানুষের উদাস দৃষ্টি,
আফ্রিকার নিভৃত পল্লীর মায়েদের কান্না আমাজান,
নীলনদ, সাহারা পেরিয়ে আন্দামানের নিভৃত দ্বীপে ঝড় তোলেছে।
এখানেই তোমার স্বার্থকতা-
একজন মানুষ যা অর্জন করতে পারে তারচেয়ে
বেশি অর্জন করেছো তুমি,
তাই তোমার হাস্যজ্বোল বিদায়ের
মাঝে আকাশে বাতাসে কান্নার রোল উঠে আজ।