১৯৭১ সালে জন্মেছে মেয়েটি
বাবা কে জানা নেই
মাও তার অচেনা।
কানাডার মন্ট্রিলে বেড়ে উঠা
মা বাবাও কানাডীয়
এতদিন তাই জানত মেয়েটি।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া
উচ্চ ডিগ্রিধারী মেয়েটা যখন
আগামীর স্বপ্নে বিভোর
তখনই জানল আসল সত্যটা।
তার কানাডীয় মা বাবা জানিয়েছে
সে তাদের সন্তান নয়
১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া ছোট্ট দেশ
বাংলাদেশের যুদ্ধ শিশু সে।
সত্য বড় নির্মম,  সত্য বড় নিষ্ঠুর
বড় তিক্ত, বড় করুণ বেদনাময়
তবুও করতে হয় সত্যকে আলিঙ্গন।
এতদিনের লালিত বিশ্বাসে চিড় ধরা মেয়েটি
বড় অসহায়, বড় একা
পরিচিত মুখগুলো বড় অচেনা লাগে
অদেখা মা বাবা কল্পনার চোখে ভাসে।
তুইতো আমাদেরই মেয়ে তবুও সত্য টা জানালাম।
না জানালেই পারতে বাবা
এইতো বেশ ছিলাম তোমাদের কোলে
এখন আমি সইতে পারিনা, এ নির্মম সত্যটা।
আমি যাব বাবা ওদেশে
আমার জন্মস্থানের ধূলোবালি মাখব আমার গায়।
একদিন মেয়েটি বাংলাদেশে আসে
সে জানে না কে তার মা, কে তার বাবা?
১৯৭১ সাল, বাবা গিয়েছে যুদ্ধে
মা তখন হাসপাতালে প্রসব বেদনায়
বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধের মাঝে জন্মের পর
যুদ্ধের তীব্রতা তাদের করে ফেলে আলাদা
মিশনারিদের মাধ্যমে সে চলে যায় কানাডা।
অনেক খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার জন্ম বরিশালে
জীবনানন্দের বরিশাল,  রূপসী বাংলার তীর্থস্থান
উইকি পিডিয়া তাকে জানিয়েছে এ কথা।
অনেক নদি পার হয়ে সে বরিশাল আসে
নদী তীরে হাটে, কাদা মাটি গায় মাখে
তীব্র আবেগে ফিসফিস করে বলে-
এ আমার মাটি, এ আমার মা
কিন্তু তার গর্ভধারিনী মা তার অচেনাই থাকে।
ঐ যে রাস্তার ধারে যে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছে
সেকি তার মা হতে পারে না? কিংবা
যে বৃদ্ধা রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছে?
ইচ্ছে করে কাউকে জড়িয়ে ধরে
মা মা বলে কাঁদে, কারণ
এদের মাঝে কেউ না কেউ তার মা।
সে কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারে না
জড়িয়ে ধরে বলতে পারে না
দেখ মা আমি তোমার মেয়ে
সেই যে একাত্তরের যুদ্ধে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
তবে সে কাঁদে....... একা
কেউ তার কান্না দেখে না
যুদ্ধের নির্মমতা কেড়ে নিয়েছে তার মা ডাকার অধিকার
মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার অধিকার।