"যাহা বলিব সত্য বলিব
কখনো মিথ্যা বলিব না",
মহামান্য আদালত!
আমিই আমার খুনি,
আমি স্বজ্ঞানে,সুস্থ মস্তিষ্কে আমাকে খুন করেছি,
যত দ্রুত সম্ভব আমার ফাঁসি রায় কার্যকর করা হোক।
"অর্ডার! অর্ডার!
৩০২ ধারা মোতাবেক কবির জবানবন্দীনুযায়ী উনার মৃত্যু দণ্ডের আদেশ প্রদান করা হইল,
দ্যা কেইস ইজ ক্লোজড।"
মুহূর্তেই কোর্ট জুড়ে বিষণ্ণ নিরবতা ছেয়ে গেল,
কবি একজোড়া চোখ দেখলেন-
ছলছল নয়নে কবির দিকে থাকিয়ে আছে,
হিমায়িত বরফে আচ্ছাদিত তার নিথর দেহ,
মনে হচ্ছে প্রতিটা নিঃশ্বাস থেকে পরাজয়ের
গ্লানি নিকোটিনের ধোঁয়ার মত বের হয়ে
ভ্যাপসা বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে,
কবি বুঝলেন লোকটা উনার বিদায়ে সন্তুষ্ট নন,
কবি মৃদু হাসলেন,
কারণ কবি জানেন এটা মৃত্যু নয়,
এই মৃত্যু মানে একটি বিদ্রোহী কবিতা,
এই মৃত্যু মানে একদল বিদ্রোহী জনতা,
এই মৃত্যু মানে ঘুমন্ত বিবেকের জন্ম,
এই মৃত্যু একজন যুদ্ধার অস্ত্র,
এই মৃত্যু বিজয়ের মন্ত্র,
তাই একে মৃত্যু বলা চলে না ;
বড়জোর বলা যায় কবির প্রাণ
বণ্টিত হয়েছে হাজারো প্রাণে প্রাণে,
তিনি কতেক চোখকে দেখলেন
আগুনের মত লাল,
তাদের চোখ থেকে ক্রোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
ঝরছে,
মনে হচ্ছে,এরা কবিকে এখনই চিবিয়ে
খাবে,
কবি বুঝলেন এরা বিপক্ষের লোক,
এরা কবির জন্য মৃত্যুর চেয়ে কঠিন
কোনো শাস্তি কামনা করে,
তাঁর অপরাধ -
তিনি অন্ত্যজ রহিমুদ্দীর দুর্ভোগের কথা বলেন,
তিনি পঞ্চায়েত কমিটির একচোখা বিচারের শিকার বিধবা জমিলার পাশে দাঁড়ান,
তিনি সাহায্য চাইতে গিয়ে আহত
বৃদ্ধ  করিম মিয়াকে দেখতে যান,
তিনি টাকার খনি ও ধনকুবেরদের
গোপন তথ্য ফাঁস করেন,
তিনি প্রতিটা অনিয়ম অশৃঙ্খলে কলমের
আছড় বসান,
তিনি অনিন্দ্য সুন্দরের কথা বলেন,
তিনি পৃথিবীকে ফুলে ফুলে সাজাতে চান।
দুজন উর্দি পরা সিপাহী
কবির হাতে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে
নিয়ে যেতে আসল,
কবি অপলক নয়নে বিরাজমান চোখগুলোর দিকে থাকালেন,
এরা শেষ মুহূর্তে কবিকে কিছু বলতে চায়-
কিন্তু সময় কয় কিছু বলার,
কবি তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলতে গিয়ে বুঝলেন
উনার কণ্ঠেও আওয়াজ নেই,
তিনি যেতে যেতে বলে গেলেন-
আমার জন্য ভেবোনা,
আমাকে খুঁজে পাবে প্রতিটা সংগ্রামে,
প্রতিটা অনিন্দ্য সুন্দরে।