তুমি মা, তুমিই নারী
সোমা বিশ্বাস


হে মহামায়া দেবী, দেখা দাও, দেখা দাও আমাকে।
পূজি তোমার চরণদুটি, স্মরণ করি তোমাকে।
তুমি মূর্তিমতী হয়ে থাকো, আদৌ কি আছো তুমি?
মাথা খুঁড়ে ডাকি তোমায়, দেখবো তোমায় আমি।
সকলে বলে, "তুমি আছো, তুমি আছো।" তুমি কই?
শাস্ত্রে বলে, "বিশ্ববাসী, তোমার সন্তান হই।"
দেখা দাও, দেখা দাও, দেখা দিতেই হবে।
নাহলে জানবো মিথ্যা সব, মিথ্যা "মা" রবে।


এমা! একী দেখছি আমি! চোখে যে সয় না।
আলোর জ্যোতি চারিদিকে, তাকানো যায় না।
দেখছি আমি, আমি দেখছি, কী সুন্দর এক আলো!
চারিদিকে ছড়িয়ে কিরণ! লাগছে ভীষণ ভালো।
আমি দেখছি সেই জ্যোতিতে এক রমণী বসে
হাজার নাগের বেদীতে স্বামী, স্ত্রীটি তার পাশে।
স্পষ্ট বুঝছি, মা লক্ষ্মী, পাশে নারায়ণ।
কোলে নাও মা, সন্তান হই, দাও না দুই চরণ।


সেই রমণী বদলে গেল, বদলে গেল দৃশ্য!
মা তুমি কই? কোথায় তুমি? মূর্ত্তিমতী লাস্য।
ওই দেখা যায়, ওই তো সেথায়, পাতার কুটিরে বসে,
ঘোমটা মাথায় বসে আছেন, দুই সন্তান আসে,
পাশে আছেন যোগীপুরুষ, মা মা বলে ডেকে
"সীতা মা" ইনিই তবে, সন্তান মা ডাকে।
চারিদিকে অন্ধকার, চাঁদের কিরণ নাই।
ও মা! মা! কোথায় গেলে? আঁধারে ভয় পাই!


খানিক পরেই জ্যোৎস্না আলোয় গাছের নীচে নারী
আকাশে চাঁদ, মাটিতে চাঁদ, চাঁদের ছড়াছড়ি!
সে কী রূপ! সে কী ছটা! কে তুমি গো মা?
জ্ঞান ফিরলো, বংশীধারী ডাকলো - "শোনো রাধা!"
আসবে আবার প্রিয়তমা, বিরহ মানে না।
বিরহ কার নাম গো, নারী? প্রেম কী জানে না?


দৃশ্য বদলে দৃশ্য আসে, দৃশ্য আসে নতুন
কালো এক পাগলী নারী, স্বামীকে করে যতন।
ভুল করে পা বুকের পরে, স্বামী শবাসনে।
জিভটি তার বেরিয়ে আসে, নারী যখন জানে!
এ তো মা মহামায়া, কী অপূর্ব শোভা!
কালো বেশেও রূপবতী, কন্ঠে রক্তজবা।
কখনও তিনি শ্যামারূপে, কখনও দুর্গা রূপে
নারী কেমনে রূপ বদলায়, দেখছি চুপে চুপে।
মাঝে মাঝে ডেকে উঠছি মা মা বলে বলে
হঠাৎ সবই শান্ত-স্নিগ্ধ, মা যাচ্ছে চলে।
এলো এক দুই হাত দেবী, মুখটি খুবই চেনা
স্নেহ মাখা চোখ দুটি তার, এ তো আমারই মা।
মায়ের চোখে জল ঝরছে, কেন কাঁদো মা তুমি?


রূপ বদলে মা এক নারী, মা বদলে ভূমি।
বিশ্ববাসী জানে না, মা এই পৃথিবীও বটে।
মা বলে যেই ডাক দিচ্ছি, কী জানি, কী ঘটে!
বদলে যাচ্ছে মায়ের ছায়া, বদলে যাচ্ছে কায়া!
রূপ বদলে ছোট্ট শিশু, মেয়ে রূপী এক কায়া।
রাস্তা ঘাটে একলা বেশে, দেখছি তাকে আমি।
কয়েক জন্তু ছিঁড়তে চাইছে, যাচ্ছে জলে নামি।
বিসর্জিত হয়ো না মা, বিসর্জিত হয়ো না
হাতে তুলে নাও অস্ত্র মা, চুপ করে আর থেকো না।


সবকিছু শান্ত হলো, মা এলো নারীবেশে।
বললো, "বাছা, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তোমরা মানুষ বেশে।
জানো কী তোমরা, বাঘ কখনো বাঘকে খায় না?
স্বজাতকে কখনো খায় না, হিংস্র হায়েনা!
তোমরা তো মানব, মানব রূপে শ্রেষ্ঠ এক জীব!
নারীজাতি তো কালীর রূপ, নারীই আবার শিব।
যেই গর্ভে ছিলে তোমরা, যত্ন করতে শেখো।
মা আছেন নারী রূপে, মাকেও তোমরা দেখো।
মা আছেন মেয়ে রূপে, তোমার মেয়েই আমি।
সব কিছুতেই আমি মিশে, আমিই মা, নারীই আমি। "


রচনা : ১ মে ২০১৮, শ্রীরামপুর হুগলি