আমি বাংলা কবিতার ওয়েবসাইট এ আছি আজ বেশি দিন নয়, আর আমার লেখা লেখির অভিজ্ঞতাও খুব স্বল্প দিনের, অনধিক এক বছর। তবুও আজ একটি দুঃসাহসিক কাজে হাত দিলাম। ভুল হলে মার্জনা করবেন, এবং পারলে উৎসাহিত করবেন।।


প্রিয় কবি শ্রাবণী সিংহের "উইজাবোর্ড এবং প্রজাপতি " কবিতাটি আলোচনার প্রয়াস করছি। বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ ভাবে আমার উপলব্ধি কবিতা পাঠের পর।। ভিন্ন পাঠক বিশেষে বিশ্লেষণ ভিন্ন হতে পারে।।


প্রিয় কবি শ্রাবণী সিংহর "উইজাবোর্ড এবং প্রজাপতি" কবিতায় আধুনিক জীবন সমস্যা ও জটিলতা চমৎকার ফুটে উঠেছে।।
আপাত দৃষ্টিতে ১) উইজাবোর্ড ও ২) এবং প্রজাপতি দুটি আলাদা কবিতা মনে হলেও আসলে কবিতা দুটি একই পথের যাত্রী,, তাই দুটি কবিতার পরিবর্তে একটিই কবিতা বলছি ( ব্যাক্তিগত মত)।


"উইজাবোর্ড"একটি ইনস্ট্রুমেন্ট যাতে কিছু সংখ্যা(1-9 পর্যন্ত), ইংলিশ অ্যালফাবেট (A-Z পর্যন্ত) ও আরও কিছু চিহ্ন থাকে। এর সাহায্যে মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে এমন অনেকের বিশ্বাস।


" উইজাবোর্ড" (কবিতার প্রথম অংশ) -এ দেখছি -----
আধুনিক জীবন যাপনে মানুষ কেবল তার পরিবার বন্ধু বান্ধবদের থেকেই বিচ্ছিন্ন হয় না, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন নিজের স্বাভাবিক সত্তা থেকেও। যত্র তত্র ছুটে চলার ব্যাস্ততায়
মন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জীবন থেকে। তাই জীবন তার আত্মা হারায়। শরীর আর শরীর থাকে না, হয়ে যায় অশরীরী। নিছক বেঁচে থাকা; বিষণ্ণতা গ্রাস করে জীবনকে।


" ঘুরে বেড়াই যত্র তত্র
নিজের ভেতর একা হওয়াটাই বিছিন্নপথ"


একা বৈঠা যেমন জল কেটে কেটে ধারালো হয়, মানব মনও একাকিত্বের যন্ত্রণায় ধারালো অস্ত্রের থেকেও ভয়ানক হয়ে যায়।


" একা জল কেটে কেটে আর ধারালো হয় যেমন
জল বৈঠা
অস্ত্র নয়
নিজেকেই ভয় "


নিরর্থক অশরীরী জীবনকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মন, যার উত্তর অজানা,,
তাই মন উইজাবোর্ড হাত পেতে দেয় যন্ত্রণার কারণ গুলি জেনেনেওয়ার জন্য।


"কিছু অশরীরী প্রশ্নের উত্তরে
উইজাবোর্ড হাত রাখি।"


হয়ত এর উত্তর পাওয়া যায় ! উত্তর খুঁজে পাই প্রেমে, প্রজাপতি ছোঁয়ায়। প্রজাপতি পরশ পেতে মন ব্যাকুল হয়,, নানা বাহানা খোঁজে । তাই "ছাতিম গন্ধী"( দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার একটি সাদা ফুল বিশিষ্ট গাছ) অভিমানে নতুন প্রেম বৃষ্টি ঝড়ে,, মন হালকা হয় ক্ষণিকের জন্য।


"একে দুইয়ে বৃষ্টি নামে, কোন ছাতিম গন্ধি অভিমানে!"


আসলে এসবই আধুনিক জীবন সমস্যা। কেননা প্রেম কি সত্যি ধরা দিয়েছে? মনে হয় না। আসলে ভারাক্রান্ত মন দুই দণ্ডের  শান্তি চায়,
কিন্তু কোথায় পাবে সে শান্তি? তাই বিবেক জলাঞ্জলী দিয়ে মন শুধু প্রেম খুঁজে ফিরে।


"ঘাসের আশ্রয়ে যে শিশিরদানা, পড়ো পড়ো
এই আমাদের বিবেক"


তাই মন সামান্য আত্মক্ষরণ কে ভালোবাসা বলে ভ্রম করে। হাতের মুঠো কিছুটা শিথিল হলেই প্রেম ধরা দেয় , কেননা ভালবাসাই তো বেচেঁ থাকার অবলম্বন।।


কবিতায় আধুনিক জীবন সমস্যার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে। উপস্থাপনা দারুন। যদি বহিরঙ্গ নয়,অন্তরঙ্গের না বলা কথা কবিতা হয়,, যদি কবিতা বলার থেকে অনেক বেশি না বলা হয় তবে বাংলা কবিতা ডটকমের  পাতায় কবি শ্রাবণী সিংহ অন্যতম একজন শিল্পী নিঃসন্দেহে।


বি দ্রঃ  কবিতা পাঠ মাত্রই পাঠকের হয়ে যায়। তাই কবিতা আমায় যে ভাবে ধরা দিয়েছে আমি সে ভাবেই বিশ্লেষণ করেছি। এই বিশ্লেষণের সাথে আলোচিত কবিতার কবিও দ্বিমত রাখতে পারেন।।


দীর্ঘ লেখায় বানান ভুল হতে পারে, দৃষ্টি গোচর হলে ধরিয়ে দেবেন।।