ঘরের কোণে বসে
তোমার সবকটা চিঠি আমি পুড়িয়েছিলাম,
তোমার সমস্ত স্মৃতি এক নিমেষে
ছাই হয়ে গেছিলো, ছাই।
বিস্মৃত সে সব কথার ডালি
আজ এই ঘর, এই বাসা
ছেড়ে যাওয়ার আগে
ভেসে উঠছে অমূল্য।


অমূল্য তোমার বোধহয় মনে নেই
একবার পুজোর সময়
তুমি আমায় একটা চকোলেট দিয়েছিলে,
আমি তার ব়্যাপারটা
রেখে দিয়েছিলাম
আমার জীবন্ত ডায়েরির ভাজে।
আজ আস্তাকুড়ে সেটা ফেলে দিলাম
আর তোমার দেওয়া লাল শাড়িটা
উড়িয়ে দিলাম আকাশের গাঙচিলের কাছে।
ইচ্ছামতীর ধারে একদিন
কবিতা লিখতে লিখতে
তুমি সে সব খুঁজে পাবে।
রমণের ঘুমে তুমি কখনও
আমার অস্তিত্ব অনুভব করোনি বলেই
এতো কাল চুপ করে থেকেছো,
ভুলে গ্যাছো,
সোশ্যাল মিডিয়াতে হাজার পোস্ট দেখেও
এড়িয়ে গ্যাছো স্বইচ্ছায়।
এটুকুই তো কাম্য ছিলো ভালোবাসার।
ভালোবাসা সার্থক হলে তো
তুমি আমার ঠোঁট কার্নিশে
অপেক্ষা করতে মুদি দোকানের ফর্দের জন্য।
হয়নি অনেককিছুই। হবেও না।
আসলে তুমি আমাকে নয়
আমার শরীরকে ভালোবেসেছো
আমায় কখনও তোমার বন্ধু মনে করোনি।
ভালোবাসায় যে বন্ধুত্ব লুকিয়ে থাকে
তা অনুভব করতে পারলে
তোমার সমস্ত চিঠি, উপহার
আমি এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগেও
আগলে নিয়ে যেতাম।


আমি আর পারছি না
আমি আর পারব না অমূল্য।
একটা ভুল প্রাণীকে ভালোবেসেছিলাম
একটা ভুল সময়কে বন্ধু ভেবেছিলাম।
বিশ্বাস করো
আমি চাপা কান্না রাখতে না পেরে
আজ চেঁচিয়ে কেঁদেছি
তোমার জন্য নয়, তোমার বোকামোর জন্য
আমার বোকামির জন্য।


এতো কিছুর পরও আমি কাঁদি।
মেয়েরা কাঁদতে জানে হাউহাউ করে,
তারা যে মনের মানুষ
প্রাণের টান
স্মৃতির কলকাতার রাস্তা
নদী ঘাট,
নৌকো উচ্ছ্বল আনন্দ
কিচ্ছুটি ভুলতে পারে না।


অমূল্য তোমার হাত ধরেই আমি প্রথম
রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে শিখেছিলাম।
আমি গেয়ে উঠেছিলাম বৃষ্টি দেখে--
এমনও দিনে তারে...
বিশ্বাস করো আমি এখনও বৃষ্টিতে
এই গানটা গাইলে
আমার মা পাশে এসে দাঁড়ায়
আমাকে বলে,
ওসব কথা ভুলে যেতে,
আমি কিন্তু ভুলতে পারি না।


কেন ভুলবো তোমাকে
সেটা বলতে পারো
তুমি আমাকে বন্ধু না করো
তোমার দেখানো রবীন্দ্রনাথ
আমার বন্ধু হয়ে গেছে।
প্রতি রাতে একলা ঘরে
ফসিলস নয়
আমার সামনে রবীন্দ্রনাথ এসে দাঁড়ায়
আমায় একাকীত্বের বিষণ্ণতায়
সে শুনিয়ে যায় অসংখ্য স্বপ্নকথা।
এই যে আমি এই বাসা ছেড়ে যাওয়ার আগে
হাউ হাউ করে কাঁদলাম
তারপরে গাড়িতে উঠতেই
এফএম-এ বেজে উঠলো
যদি তোর ডাক শুনে...
ঠিকই তো তুমি আমার ডাক
আমার কান্না
আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব
শুনতে না পেলেও
রবীন্দ্রনাথ সব শোনেন
সব জানেন।


এতকিছুর পর জিজ্ঞাসা করো না
আমি কোথায় যাচ্ছি,
শুধু জেনো রবীন্দ্রনাথ সব জানেন,
সে তোমায় কোনদিন
কখনও
বলবেন না আমি কোথায় যাচ্ছি
নির্জনে। কুয়াশা। নিভৃতে
কোন পাহাড়ের কোলে
সবুজ শ্যাওলা পাথরের রাস্তায়
এক কাঠের কটেজে--
শুধু তাকে স্পর্শ করব বলে
যাকে আমি মন থেকে
মানুষ ভাবি।
মানুষ।
হ্যাঁ পুরুষ মানুষ।