সে বছর বৃষ্টিতে
আমি তোমায় যে ডায়েরিটা দিয়েছিলাম
সে সব পাতাগুলো নিশ্চয়ই নৌকো করেছো!
সে সব ভালোবাসাদের হয়তো ন্যাকামো ভেবেছো...
ঠিকই তো আমার মতো নারীর কান্নাকে
তুমি বৃষ্টি ভাবতে ভালোবাসো
আর নিজে মেঘ হতে চাও।
ইলশেগুড়ি এই সব ভালোবাসারা আমার শরীর জুড়ে...
তুমি আমার কবিতাদের সস্তা দরে বিক্রি করেছো বিক্রিওয়ালাকে
আমার কান্নার বাষ্পেরা আমায় বলেছে
তুমি সুখেই আছো।
বউ বাচ্চা, কত্ত কি!
সেই যে সেবার শিরা কেটে আমায় লিখলে
আমার জন্য তুমি প্রাণও দিতে পারো
আজ ভাবলে অবাক লাগে
আমি তোমাকে সেদিন চেঁচিয়ে বলতে চেয়েছিলাম
ভালোবা....না আর বলা হয়নি। খারাপবাসাই আমার প্রাপ্য।
বুঝেছিলাম অনেক কবিতাই বাষ্পীভূত মেঘ।
সব মেঘে তো বৃষ্টি নামে না উপত্যকায়...
তুমি চলে যাওয়ার পরে আরও অনেক প্রেম
এসেছে, গেছে, আবার এসেছে।
আসলে প্রেম তো আসবেই, আসতেই হবে
না হলে আমার সৌন্দর্য,
আমার কণ্ঠস্বর
আমার সাজ
আমার চুলকে স্পর্শ করবে কে!
নারীকে তোমরা বহুকালই পণ্য করেছো,
কেবল পণ আর পণ্য,
সুন্দরীর মোড়কে প্যাকেজ করে স্ট্যাটাস বাড়িয়ে
এড়িয়ে গ্যাছো নারী মন।
নারী কী এতটাই ফেলনা সন্তানবাক্স!


হ্যাঁ, আমি মিসেস গান্ধী অথবা কল্পনা চাওলা হতে পারিনি,
আগুন হয়তো ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি আমায় দুর্গা হয়ে উঠতে দেয়নি।
তা বলে ভেবো না যে আমি শক্তিহীন।
আমি লুকিয়ে রেখেছি আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা
আমি লুকিয়ে রাখি জীবনের স্বপ্নগুলোকে
কেন জানো!
আমিও মা হতে চাই
আমিও চাই আমার সন্তানের মধ্যে দিয়ে
আমার সবটুকু পূরণ করব
কিন্তু আমি বৃদ্ধাশ্রম গানের পোষা বুড়ো ময়না হতে চাই না,
যুগ যুগ ধরে নারীরা কী কেবল
গল্প উপন্যাসেই রেবেল করবে!
সেখানেই সে স্বয়ংসিদ্ধা!
বিশ্বাস করো তুমি, তুমি, তোমরা—
আমরাও মানুষ। নারীও একজন মানুষ
পুরুষ একবার মানুষের চোখে
অরণ্যের সবুজকে দেখো
সেই অরণ্যের পাশে বয়ে চলা নদী
নদী থেকে সমুদ্র,
একবার দেখো, তাকিয়ে।
অবাক তোমাকে করবেই নাড়িটান
একবার তুমিও কাঁদতে চাইবে।
সে সব ঝরা পাতার দিনে বৃষ্টি না এলেও
কালবৈশাখী উঠবেই।
আঁচল ঘেরা এক পৃথিবী তোমায় স্নিগ্ধ করবে বারিধারায়
অণুরণনের প্রিয় নারী কন্ঠরা তোমাকে—
সিক্ত করবে অনুসূচনায়।
নতুন এক ধর্মের জন্ম নেবে সেদিন
সে ধর্মের নাম হলো নারী।
© সোমাদ্রি সাহা 2019