সকাল থেকে একটা কাক
দুটো ব্যাঙ
আর তিনটে মানুষ বসেই আছে।
মানুষ তিনজন অবশ্য ছিপ ফেলেছে।
ফ্যাতনাটা দেখছে তো দেখছেই।
ব্যাঙ দুটিতে পরবর্তী ব্যাঙাচির কথা ভাবছে
আর কাকটা ভাবছে কী করে
মাছগুলো নেবো,
ব্যাঙ দুটোকে মারব।
কাকটা তখন থেকে বসেই আছে,
আছে তো আছেই।
সুযোগ পাচ্ছে না।
কীভাবে ভেদ করবে স্টপার ব্যাক।
কারণ আজ মেঘ আকাশ
নিম্নচাপ। বৃষ্টি মাঝে মধ্যেই হচ্ছে।
চিলটা উপরে উড়তে পারেনি।
সেও বসে আছে।
চিলটার ঐ ব্যাঙে লোভ নেই,
বড় মাছ হলে চলতে পারে,
আর তিনজন লোক
তক্কে তক্কে আছে
যদি চিল আসে
ঠিক তার আগেই ছিপটা।
বালতিগুলো চাপা দিয়ে রেখেছে,
টুক করে একটু একটু করে
চাটের সাথে খেতে থাকছে মাল।


এইবার চিলটা পাখা মেলে দিলো
কাক নড়ে চড়ে কা কা শুরু করল,
কাঠবেড়ালির দল লুকোতে ব্যস্ত
আর তিনজন মানুষ বালতি আর ফাতনা
ফাতনা আর বালতি।
চিলটা একটা মরা ইঁদুরকে গিয়ে ধরল।
কাক ভাবল বাঁচলাম
আমারও অল্প কিছু জুটবে।
তিনটে লোক ভাবলো
আমাদের মাছ আর খেতে আসবে না
আর ব্যাঙ জানে ব্যাঙাচি এই জলেই
মুখ দেখবে নতুন
কারণ এখানকার মাছগুলো সব তুলে নেবে
তিনজনে।


রাত নামল।
চিল বাসায়, কাক গাছে
তিনজন মাতাল হয়ে ফিরে গ্যাছে।


ঠিক তখনই একটা আলো
উঠে এলো মাটির উপর।
জলের ভিতর বিশাল কিছু একটা
নড়ছে।
কাক তো বুঝতে পারলো না,
আরও কাকের সাথে চেঁচাচ্ছে।
একটা বিশাল ইঁদুর উঠে আসছে
এতো বড়ো ইঁদুর হয়
তিন তলা তাল গাছের সমান,
সব ফালতু কথা নাকি।
কাকেরা উড়তে লাগল।
ব্যাঙ তো লুকিয়ে ঝোপে।
চিল তো কাছাকাছি কোথাও নেই
এবার কী করা যায়
এই ইঁদুর তো মানুষকেও খাবে
সব ভেঙে দেবে।
কী করতে চাইছে,
ইঁদুরটা কিছু করল না
সামনের একটা মন্দিরে
চলে গেলো।
গণেশের মন্দির। মনে হয় লাড্ডু আছে।


ঐ একটা কাক অন্য কাককে জিজ্ঞাসা করল
এটা কী ছিল!
বলল কুদেব।
তোমরা যে খাবার খাও
তার আত্মারা মিলে এই দেবতা তৈরি করেছে
না তাই কুদেবের ভূত।
কাকটা ভাবতে লাগল,
আগে তো এসব দেখেনি।
অন্য কাকরা বলল আগে তো
এই অতিমারীও দেখনি,
অতিমারীর যেমন দেবতা আছে
কুদেবেরও আছে।
কুদেব তোমাকেও ধরতে পারে।
কেন, কেন, আমাকে ধরবে কেন!
কারণ কাক প্রচন্ড জঞ্জাল খায়
জঞ্জালের মরা পচা খায়।
একা কাক অন্যদেরও বলল
তাহলে তো তোমাদেরও ধরবে।
না গো, আমরা তো মরা পচা খাই না,
আমরা কেবল কোভিড রোগী খাই।
কত লাশ। এত লাশ তো পড়ানো হয় না
ভাসানো হয়, পচানো হয়।
পোড়ার আগেও এদিকে ওদিকে রাখা হয়।
করোনার দেবতা আলাদা।
কুদেব তাই ওদের খায় না, আমাদেরও।
একটা কাক বলল
করোনার দেবতা তাহলে কোথায় থাকে
অন্য কাকরা কা কা করে বলে
মানুষের মনে। মানুষের মনে এক দেবতা আছে
সে তো ভূত নয়, সে জ্যান্ত আত্মা।


কাকটা এসব ভাবতে ভাবতে সকাল হয়
অন্য কাকটা মর্গের দিকে
নদীর দিকে চলে যায়
একটা কাক, বসে থাকে।
তবে আজ চিলটা এই কাকটাকেই খাবে
কাকটাও ভূত হবে
সে পুজো করবে কুদেবকে।


কাকটা এসব জানে না,
আমি তো সেই মরা ইঁদুর
আমার আত্মা এসব দেখছিলো এতদিন,
আজ সব লিখে দিলাম বলে আমার মুক্তি।
আজ রাতে আমি মুক্তো হবো
ঐ বিশাল ইঁদুরের মতো ভূতদেবতার হাত থেকে
তার জন্য আমায় অপেক্ষা করতে হবে
এক
দুই
তিন
চার


কয়েকশো সেকেন্ড...