মা, আমরা এক গরীব দেশের নাগরিক
এখানে সরকারের কথা সম্রাটের মতোই সত্য।
ক্ষমতার অলিন্দে হেঁটে চলা চোখগুলো
উঠতে, বসতে বলে দ্যায় তোমরা গিনিপিগ
তোমরা খরগোশ, তোমরা ইঁদুর।
শুধু সময় মতো ভোটটা দিও,
বাকি চাল চুরি থেকে টিকা চুরি
আমরা বুঝে নেব।
দরকারে ফাইলের নিচে সব চেপে দেব।
প্রমাণ না থাকলে তৃতীয় বিশ্বে
শাস্তি হয় না, মানব ইতিহাসে।
সুযোগ পেলেই তাই ভয় গ্রাস করে।
ঐ যে তুমি যে টিকা নিলে
সেটা কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা
কতটা সময়পযোগী ও কার্যকরী
এই সব ভেবে একদম কষ্ট পাবে না।
সারা জীবনের রোজগার গ্রাস করতে
ঐ বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতাল
ভূতের লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে
অপেক্ষা করছে।


অপেক্ষা তো এত মাস করলে
তারপর এই ভারতের তৈরি
টিকা নিতেই দেখতে পেলে
জাল কারবারী ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আর তা দেখে সন্দেহ হওয়া
চিন্তায় প্যানিক করা একদম সঠিক।
জানি জানি, তুমি আমাকে
সাহিত্য করতে,
কাব্য করতে বারণ করছ,
একটুও হাসি আসছে না
ভয় পাচ্ছো।
মা, ভয় পেতে নেই এ দেশে
এ দেশ তো কেবল
শোষণ আর শাসন জানে,
ভুয়ো রেশনের গণনা মানে।
মানুক, ভোট থেকে সব কার্যকরী স্থানে
ভুয়ো সুবিধা জনসাধারণের
তা জন্মের পরেই হাসপাতালের
অব্যবস্থা দেখে বুঝেছিলাম।
দালাল চক্র হেঁটে বেড়াচ্ছে মুখোশ এঁটে।


চারিদিকে জাল ওষুধ, জাল খাদ্যসামগ্রি
জাল বিদ্যা, জাল চিকিৎসাব্যবস্থা।
এমন কী এখন টিকার লাইন
তাও ভোর রাত থেকে দাঁড়িয়ে
তবে পাবে সাধারণ মানুষ।
আর কেন্দ্র বলে দিচ্ছে
আর বড়লোকেরা নাকি ষাট কোটি
যারা প্রাইভেটে টিকা নেবে।
অবাক লাগে,
তাহলে এ দেশে রেশনে অব্যবস্থা
প্রতিটি প্রকল্পে অব্যবস্থার কেন!
এর শিকার তো গরীবেরাই।


ঠিক বলেছ, মধ্যবিত্তরাও এক প্রকার গরীব।
ক্ষমতার অলিন্দ কেবল ব্যবহার করে,
বলে দেয় মঞ্চে উঠে সাথে আছি,
আমার তো খরচ নেই, এমনি চলে,
আমি তো টাকা নিই না।
এসব কথায় মধ্যবিত্তরা ভুলে যায় সব কিছু।
হুইলচেয়ারের মতো একটা রাজত্ব
বাড়ছে সাপের মতো নাগ সভ্যতায়।
চুটকিতেই সব হয়ে যাচ্ছে।
গরীবের কথা তাই ভাবার, বোঝার
কেউ নেই। কেউ কোনও দিন ছিলো না।


তবু গরীব স্বপ্ন দ্যাখে সংসারের
সংসার করার প্রারম্ভের বৈবাহিক বন্ধন।
মা সে বন্ধন সামাজিকতা বটে
হাজার হাজার মানুষের সামনে
হাত জোর করে সেজে গুজে ছবি তোলা।
এ তো টিকা নেওয়ার মতোই।
সরকার যেন দয়া দাক্ষিণ্য করছে।
সরকারের মহানুভবতা।
অথচ আমাদের করের টাকায়
রোজ রোজ তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়ে
মাতিয়ে তোলে জীবনকে।
কী খাবে গরীব মধ্যবিত্ত
কোন দিকে যাবে।
উড়ে উড়ে চাকরি করবে
না সাইকেল চালাবে হাইওয়ে থেকে রাজপথে।
ম্যাজিকের মতো মনে হয় জল খিচুড়ির জীবন।
এখানে ব্যাঙ্কোয়েট স্বপ্নমাত্র
এখানে বিরিয়ানির গন্ধ
ইলিশ তেল, ডাব চিংড়ি বিলাসিতা
আমার ভারত আজও শিক্ষা পায় না
খাদ্য পায় না
বাসস্থান নেই
চাকরি নেই।


পড়াশুনো জেনেও পরিযায়ী হতে হয়
বাধ্য হয়ে এই বাঙালিদেরই।


একটাই শান্তি বাংলা ভাষায় মা বলে ডাকি
বাংলা লিখতে পড়তে পারি।
ঐ টুকু বুকে আগলেই চিতাভস্ম হয়ে যাবো
সাধারণ দিনে।
আসলে নেতাজিও বড্ড সাধারণ ছিলো
তাই দেশের প্রধান মন্ত্রী না হয়ে
নিরুদ্দেশে গিয়েছিল।


সাধারণের টিকা নেওয়া প্রাণ
ভাইরাসের থেকেও ক্ষুদ্র
আর তার স্বপ্ন, কেবলই বিলাসিতা
কেবলই ভ্রূণ জন্মের মৃতদেহ।


মা, ভয় কিসের! আমি আছি, আমি থাকব
আমি তোর গর্ভেই ছিলাম, অনন্তকাল।