অনীশ (সিজেন ২) লিখতে গিয়ে বুঝেছে পাঠক দুঃখ ও ভালবাসার গল্প খোঁজে। আর কিছুতে তেমন তাদের মন নেই। দেশ নিপাত যাক। তার মাস মাইনে জুটলেই হল। জঙ্গী-হানা মৃত্যু তো তার হয়নি। মানবিক হতে মানুষ ভুলেছে। সে নিজের বিনোদন চায়। তাই বন্ধুরা মিলে মজা হয়, আনন্দ হয়...
অনীশের মনের মধ্যে কবিতারা খেলা করে। কারণ কবিতার মধ্যে সেই প্রেমটুকু আছে যা সকলে বুঝতে চায় না। কবিতার অনন্ত গভীরে নিস্তরঙ্গ এক ভাষা আছে, যে ভাষা সমুদ্র থেকে পাহাড়, পাহাড় থেকে মহাবিশ্ব, মহাবিশ্ব থেকে মহাকাশে কবিতার মায়াপথকে ছায়াপথে স্থাপন করে। অনীশ জানে সে ব্যর্থ। অনীশ বোঝে তার নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই। তবু অনীশ কবিতার জন্য এগিয়ে চলে এই সমস্ত পথ ধরেই। বেঁচে থাকে কবিতার আদলে কতগুলো চোখ। গভীর রাত। ভূত ভাবছে ভয় দ্যাখাবে, কবি ভাবছে লিখবে, প্রেমিক যুগল চ্যাটে চুমু খাচ্ছে। তিনটি প্রান্তিক চিন্তা কিন্তু আসলে ছন্দ খুঁজে চলেছে। আর সেই চিন্তা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন কবিতার। কোনও ভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত জেনে যাচ্ছে সেই সব কবিতা। আবার সেই প্রান্তের কবিতারা মুক্তি পাচ্ছে আমার ভাষায়। আমি যে ভাষার পাঁচিলে বাংলাকে বলি শ্রেষ্ঠ, সেই ভাষার জোড়ে বাংলাদেশ পর্যটক খুঁজছে, আবার সেই ভাষাকেই ঘেন্না করে সন্ত্রাসবাদীরা বোমার রসায়ন বানাচ্ছে। আসলে সবটাই একটা-একটা, আস্ত-আস্ত কবিতা। মুগ্ধ হয়ে অনীশ এসব ভেবে চলে। হঠাৎ দ্যাখে স্বপ্নের ভিতরে লুকিয়ে আছে কবিতার মহাবাস। কবিতা সেখানে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কবিতাকে নিয়ে ভাবার মানুষের আজ প্রাচীন ইতিহাস। এখন কবিতাদের মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো পাঠক নেই, নেই নতুন ভালবাসার পর্দা।
সব পর্দারা মুখোশ হয়েছে, এগিয়ে চলেছে কবিতা তাই একা। এই কবিতারা কোনও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে না। এই কবিতা কোনও পুরস্কার পায় না, এই কবিতা কোনও শান্তির বাণী শোনায় না, কালজয়ী হয় না। এই কবিতারা এগিয়ে চলে। এগিয়ে চলে কারণ কবিতা তো মরতে জানে। মৃত্যু হলেই জন্মাবে হাজার কবিতা।
অনীশ জিলিপি খাচ্ছে। ঠোঙাতে তার লেখা কবিতাটি ছাপা। তবু অনীশ সেই কবিতার ঠোঙাটি ফেলে দিল, রসটা চেটে। অনীশ বুঝল, কবিতার ফর্মাগুলো ঠোঙা হল বলেই আজ সে রসটা আস্বাদন করল। না হলে নেজেও তো কবিতাকে কখন চেটে পরিস্কার করেনি। কবিতার প্রতি শব্দে যে মুগ্ধতা রয়েছে তা সে আস্বাদন করেনি। আক্ষেপ হয় অনীশের। যেমন অনীশ ভালইবাসতে পারেনি তার ভালবাসাকে মুগ্ধ হয়ে। অনীশ নিজেকে তাই প্রশ্ন করে ভালবাসা কোথায় যে থাকে, সেটা জানতে হবে। মুগ্ধতা চাই। শুধুই...মুগ্ধতা। এমন সময় বৃষ্টি আসে। মা ঘরে আসে। জানালা বন্ধ করতে যায়। মায়ের আঁচল, মায়ের গায়ের গন্ধ তাকে মুগ্ধ করে। অনীশ বুঝতে পারে, যেখানে স্বার্থ নেই, শুধুই ত্যাগ আছে, যেখানে ভালবাসারা নাড়ির টান অনুভব করে, সেখানেই শুধুই মুগ্ধতা বাস করে। সেখানেই প্রাণদেবতা কবিতার সু-বাস খুঁজে পায়। অনীশও এই কবিতার উপত্যকার কথা প্রচার করবে সর্বত্র। কেউ শুনবে সেই সব কবিতার কথা!! নাকি না বুঝেই বলবে, শুধুই মুগ্ধতা...