গাছের ছায়ায় আবার দেখা হয়ে গেলো।
এবার দেখছি সাদা চুল!
কালো ঘোড়াটাকে কোথায় রেখে এলে!
ভেবেছিলাম সারাজীবন
কালো যৌবনের আঁচলে
সোনালী রোদ মাখবে আর...


আর বলে থেমে গেলে কেন
যত বাজে শুধু আমার জন্যই তুলে রেখেছ।
আমি রোদ মেখে তোমায় বৃষ্টি বন্যা দেব!
এই মতলবে আজীবন তুমি
নদী হয়ে থেকে গেলে
আমার কলমের অলিতে গলিতে।
কাল রাতেও যে উপন্যাস শুরু করেছি
বিশ্বাস না করলেও সেই নায়িকার চোখে
তোমার ইহজন্মকেই দেখতে পাচ্ছি।
এতোগুলো উপন্যাস লিখে ফেলার পরেও
তোমাকে ভুলতে পারিনি, নীরাকে যেমন সুনীল ভোলেনি।
আচ্ছা তোমাকে ভুলতে যাবো কেন!
আমাকে তুমি খারাপ বলতেই পারো,
মারা গেছি ভেবে নিলে আপত্তি নেই,
তবে দেখা হলে
দুদন্ড শান্তি তো দিতে পারতে
এই ঘাটের বটের নিচে।


সেই কাশ বন আর করোলার বাঁধাই দেখে
মনে তোমার পুলক জাগতেই পারে
আসলে তুমি তো সারাজীবন
আনন্দগান নিয়েই বাঁচলে।
কপালের আনন্দে ভালো চাকরি
সুন্দরী বড়লোক বউ
আর আমাকে এই মফস্বলে দিদিমণি হয়ে।
জানোই তো বর অনেকদিন আগেই সংসার বুঝিয়ে
ছবি সেজে বসে আছে ঠাই।


সংসার কষ্ট তো সবারই আছে,
টাকার গন্ধে সুখ নেই মম।
সম্পত্তি আর স্ত্রীতেও শান্তি নেই।
এ তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না।
সেই বোকা বোকা তিস্তার পারে
তোমার স্পর্শ
যে আন্দোলিত অনুকম্পা
শিহরিত সমীরণে
আমাকে জাগিয়ে তুলত
তা আর কোনকালে
পাইনি মম।
মম পারলে অবুঝের মতো এড়িয়ে না গিয়ে
ফোননম্বরটা দাও।


এ বয়সে এসেও দেখছি
চরিত্রের দোষটা যায়নি।
এখনও সেই একইরকম ফ্ল্যার্ট করতে পারো।
ভালো।
আসি। একটা জরুরি কাজ আছে।
আজ সকালে আমার একমাত্র ছেলে
মারা গেছে মোটর দুর্ঘটনায়।
তোমার আশীর্বাদে
মানে সেই যে বলেছিলে
দেখে নেবো তোমায়,
কে তোমায় আমার থেকে ভালো রাখে...
ঐ কথা ভুলিনি।
আজ সব শেষ হয়ে গেল।
পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট নিতেই যাচ্ছি।


এ কী বলছ।
তোমার ছেলে আর নেই।
আমিও যাবো।


থাক।
আর নয়। আর ভালো মানুষী দেখাতে হবে না।


মম
শুনে যাও,
আমি অতোটা খারাপ নই।
আমি তোমাকে মন থেকে কী বলেছি
মুখ থেকে কী বলেছি
তা যদি তুমি বুঝতে পারতে
তাহলে আমাকে
এসব বলে একা চলে যেতে না।
ঠিকই তো
আমিও বড্ড একা।
এত কিছু থাকার পরেও একা।
আর তুমি সংসারে আজ একা হলে...
মম, আমি অপেক্ষা করব
শ্মশানের চিতাভস্মের কাজ শেষ হলে
দেখবে কান্নার ওপারে
আমি দাঁড়িয়ে আছি।
সেখানে কোন অভিশাপ নেই,
প্রেম বক্তব্যের নির্লজ্জতা নেই,
রয়েছে বন্ধুত্বতা।
বিশ্বাস তুমি নাই বা করলে মম
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম
দাঁড়িয়ে থাকব।
সময় খেলা করে,
সময় খেলা করবেই,
তা বলে নিজেকে
আমার চেয়ারে বসিয়ে দেখো।
কোনও ভুল আমি করিনি,
কেন বললাম
তা বুঝতে গেলে
আবার যে দেখা করতেই হবে
মুখোমুখি-
জীবিত বা মৃত।