সেদিনও বাদল ধারা এমনি করেই ঝড়ছিল,
তবে সেদিন তুমি ছিলে সাথে।
সেদিনও মাটির গন্ধ এমনি ভেসে আসছিল,
আল বাঁধা ঐ গ্রামের পথে পথে।
ধানের ক্ষেতে  গাছের ছায়ায়,
খোলা মাথের রৌদ্র তাপেই-
রাখাল-গোরুর আসা যাওয়ায়,
সেদিনও ঠিক এমনি ভাবেই
শুকনো পাতায় শব্দ খেলা করত।
এমনি ধারায় ঝড়লে শ্রাবণ ধারা,
মজা দীঘি নতূন জলে আবার ভরে উঠত।
বাঁশের সাঁকোয় জাগতো প্রাণের সাড়া।
ভাসিয়ে জলে কলা গাছের ভেলা,
ছেলে-বুড়ো শাপলা তুলে,
জলের খেলায় মত্ত হয়ে, কাটিয়ে দিত বেলা।
সারা দিনের নাওয়া-খাওয়া ভুলে-
সাঁঝের বেলা আকাশ তলে এক আঙিনায় জুটত।
সদ্য তোলা গোলার ধানের মাতাল করা ঘ্রাণে,
সেদিনও ঠিক এমনি ভাবেই
উঠত সাড়া গ্রামের প্রাণে প্রাণে।


তখন আমি সবে ষোলোর পথে,
সাঁতার শিখে দীঘির জলে সবে স্নানের পালা।
সবে তখন একলা আমি বেরোই বাড়ি হতে,
প্রথম ভুলি অঙ্ক প্রশ্নমালা।
জল আনবার ছলে
কলসি কাঁখে যেতাম ছুটে-
দেখতে তোমায়, হিজল ছায়ার তলে।
শ্রাবণ দিনে মজা দীঘির ভরা জলের ঘাটে,
আজও ঠিক তেমনি ভাবেই শাপলা ফুটে ওঠে।
ছেলে-বুড়োর দল-
শাপলা নিতে আজও ঠিক তেমনি করেই জোটে।
মনে পড়ে; প্রবল বরিষণে-
টিফিন বেলা স্কুল পালিয়ে,
বকুল বনে ফুল কুড়িয়ে,
চেনা গ্রামের পথ ছাড়িয়ে।
হারিয়ে যেতাম দূরের থেকে দূরে।
হারিয়ে যেতাম পায়ে না চলা,
শ্যাওলা জমা পিছ্ল পথে পথে।
খোঁপায় আমার থাকত বকুল মালা,
আর থাকতে তুমি আমার সাথে।


এখনও বর্ষা শেষে, কাশের বনে
শিউলী তলার ঘাষ গালিচায়
আগের মতোই শিশির জমে; গ্রামের কোণে-
চন্ডি তলার সেই আঙিনায়,
খড়ি মাটির আলপনাতে ছোপ লাগিয়ে,
কাশের ফুলে ঢাক সাজিয়ে,
কাঁসর পিটে - ঢাক বাজিয়ে-
ঠাকুর এলে; ছেলে-বুড়ো ভিড় জমিয়ে-
আগের মতোই মাতে উৎসবেতে।
বিসর্জনের বাজনা বাজে,
আগের মতোই দূর্গা-দশমীতে।
সাঁঝের বেলা গ্রামের বধূর শঙ্খ আজও বাজে,
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলে।
ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে-
সারা দিনের ক্লান্তি ভোলে।
আজও দূরের থেকে আরও বহূ দূরে-
রৌদ্র তাপ আর ঝড়-বাদলেই
নাম না জানা, পায়ে না চলা, শ্যাওলা জমা পথে,
হারিয়ে যেতাম আগের মতোই-
থাকতে যদি তুমি আমার সাথে।