রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম একটি অংশ "ফেসবুক" ব‌্যবহারের নামে নিজের দেশ ও বিবেককে কলঙ্কিত করছেন আমি ঘোরতর বিরোধিতা করি তাদের। ঘৃণা করি এসব অশিক্ষিত-মূর্খ (কেউ কেউ শিক্ষিত হলেও তাদের কার্যকলাপগুলো অশিক্ষিত- মূর্খ'র পরিচয়ই বহন করে) মানুষদের। প্রতিটি মানুষের আলাদা রুচিবোধ, চিন্তা-চেতনা, জীবন দর্শণ থাকাটাই সাভাবিক। কিন্তু তাই বলে কোনো একটি দলকে সাপোর্ট করবেন বলে অন্য একটি দলকে ও দলীয় নেতাকে বাজেভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টাকে কোনো সুস্থ মানসিকতার মধ্যে পরেনা। অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সচল মাধ্যম ফেসবুক। আর এই ফেসবুকে প্রায়ই দেখি নামে- বেনামে বেশ কিছু আইডি আছে যেগুলো হয় বিএনপি, নাহয় আওয়ামী লীগ অথবা জাতীয় পার্টির সাপোর্টারদের দ্বারা পরিচালিত। যাদের বয়স খুব একটা বেশি নয়। তরুন সমাজের প্রতিনিধিত্বকারি এসব আইডির পরিচালকরা নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের রুচিশীল ও সুন্দর ছবিতে নোংরা ও অরুচিকর, অশ্লীল একের পর এক ছবি তৈরি করে এবং তাতে অত্যন্ত মানহানীকর ক্যাপশন জুড়ে দিয়ে তা প্রকাশ করছে। শুধু তা ই নয়, নিজেদের অনেক ফেসবুক বন্ধুদেরকে দেখা যায় সেই সব আইডি দ্বারা প্রকাশিত ওইসব ছবি ও ছবির ক্যাপশনে যেয়ে নিজেরাও তাল মিলিয়ে মন্তব্য জুড়ে দেন এবং নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি থেকে তা শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এদের মধ্যে অনেক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত ও কিছু কিছু জাতির বিবেককেও দেখা যায়।


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- এই ধরনের অসুস্থ্য মানসিকতার শিকার হতে দেখা যায় খোদ দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধীকারি প্রধানমন্ত্রীকেও।


আমি নিজেও কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করি। কিন্তু তাই বলে সেই পছন্দ বা সাপোর্ট অসুস্থ্য মানসিকতার পরিচয় বহন করেনা। একটি দলকে পছন্দ করি বলে অন্য একটি দলের দলীয় নেতাকে কখনোই আমি ছোট করে দেখিনা কিংবা তাদের নিয়ে কোথাও কোনো ধরনের বাজে ও অরুচিকর মন্তব্য পর্যন্ত করিনা। এমনকি, আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবেনা- আমি দেশের কোন রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করি। কারণ, সাংবাদিকতার মত মহান পেশায় আত্মনিয়োগের মাধ্যমে আমি দেশ ও দশের সেবায় নিয়োজিত হয়েছি। পেশাগত কারণে কোনো একটি দলের সাথে আমার সখ্যতা নেই, সখ্যতা রয়েছে প্রতিটি দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর সাথে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়ার প্রস্তাব পেয়েও তা হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করে বলেছি- আমি সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক রাখতে চাই, তাই নির্দিস্ট করে কোনো একটি দলের সদস্য হওয়া আমার সম্ভব না। কারণ, আমি সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যদিও আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ আজ চরমে। কিন্তু সুস্থ্যধারার সাংবাদিকতায় কখনো কোনো দল থাকতে পারেনা। সাংবাদিকরা হচ্ছে জাতীর বিবেক, রাজনৈতিক দলের নয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে তারা। যদিও অনেক কাছের সহকর্মীদের রাজনীতির মাঠে দেখি নিজেদের আলাদা পরিচিতি পাওয়ার জন্য তারা কোনো একটি দলের তকমা লাগিয়ে ফেলেছেন নিজ নামের পাশে। অথচ, আমি নিজে (ভেতরের আমি) যে কোনো একটি দল বা দলের প্রধানকে পছন্দ করলেও আমার এলাকায় ভোট দেবার সময় সেই দলকে নয়, ভোট দেই একজন সত ও যোগ্য প্রার্থীকে। সে হোকনা অন্য যে কোনো দলের প্রতিনিধি।


যাই হোক, আমার লেখার বিষয়টা আজ তা নয়। আমার কথা হচ্ছে- এ কেমন মানসিকতার অধিকারী এ দেশের তরুন সমাজ? ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভুল করলে অভিভাবকরা তাদের শাসন করে, যেনো বড় হয়ে তারা আর এই ভুল না করে। তাহলে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে এই ধরনের অপরাধ করে চলেছে যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পরে, এমন মানুষদেরকে খুঁজে বের করে কেনো শাস্তির ব্যবস্থা করেনা এ দেশের রাষ্ট্র? এই ধরনের অসংখ্য ফেসবুক আইডির মধ্যে একটি এ দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খোলা (বাংলার নাস্তিক হাসিনা/ আইডির লিংক https://www.facebook.com/bdamir.hussain.1/info)।


আইডিটির প্রোফাইল ও কভার ফটো দেখে স্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে এটি একজন বিএনপির অন্ধ ভক্তের আইডি। কিন্তু তাই বলে এ দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশ্লীল ও অরুচিকর ছবি এবং মন্তব্য পোস্ট করবে? এটাকি কোনো সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষের কাজ? তার উপর আরো বেশি আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম- ওই আইডিটাতে আমার কিছু ফেসবুক বন্ধু ওই আইডির ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন।


উল্লেখ্য, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জায়গায় যদি বেগম খালেদা জিয়া কিংবা অন্য যে কেউ প্রধানমন্ত্রীত্বে থাকতেন তাহলেও আমার লেখার একটাই উদ্দেশ্য হতো। কারণ, আমি দল- মত নির্বিশেষে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আমার ভাল লাগা আর মন্দ লাগার বিষয়টি তুলে ধরেছি মাত্র।